অসহিষ্ণুতার মাঝে সম্প্রীতির হাওয়া: হিন্দু যুবকের চিকিৎসা হল মহরমের চাঁদায়; নজির গড়ল ভারত
ধর্মীয় হিংসা, রাজনীতি, মৌলবাদ সবের ঊর্ধ্বে গিয়ে এ যেন এক অন্য বাংলাকে চেনাল ভারতের খড়্গপুর। মহরমের জন্য তোলা চাঁদায় চিকিৎসা হল হিন্দু যুবকের।
পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর জেলার খড়্গপুরের এই ঘটনা বাংলা তথা দেশের কাছে এক উদাহরণ হয়ে রইল। বছর পঁয়ত্রিশের আবির ভুঁইয়া গতবছর জানতে পারেন, তিনি ক্যান্সার আক্রান্ত। মোবাইল ও ডিটুএইচ টিভির রিচার্জ করে স্বামী-স্ত্রীর সংসার চলে।
অসুস্থ স্বামীর চিকিৎসা কী ভাবে হবে, তা ভেবেই দিশেহারা হয়ে পড়েন আবিরের সন্তানসম্ভবা স্ত্রী। জমানো অর্থ দিয়ে ঠাকুরপুকুর ক্যান্সার হাসপাতালে চিকিৎসা শুরু হলেও কিছুতেই খরচ কুলিয়ে পারছিল না ভুঁইয়া পরিবার। চিকিৎসকরা সম্প্রতি জানিয়েছিলেন, চিকিৎসার জন্য আবিরকে মুম্বই নিয়ে যেতে হবে। চিকিৎসা বাবদ প্রায় ১২ লক্ষ রুপি প্রয়োজন।
বলা বাহুল্য, অভাবের পরিবারে এই খরচ সামলানো সম্ভব ছিল না। আবিরদের এই সমস্যার কথা পুরো পাড়াই জানত। ভুঁইয়া পরিবার যখন চিকিৎসার অর্থ নিয়ে দিশেহারা, তখনই তাদের পাশে এসে দাঁড়ায় কয়েকটি প্রতিবেশী মুসলিম পরিবার।
জমজমাট মহরমের আয়োজনের জন্য একমাস ধরে চাঁদা তুলেছিলেন তাঁরা। বিন্দুমাত্র না ভেবে সব টাকা দিয়ে দেন আবিরের চিকিৎসার জন্য। মহরম কমিটির সদস্য আমজাদ জানান, “মহরম প্রতি বছরই করার সুযোগ পাব। কিন্তু এই বিপদে ওদের পাশে দাঁড়ানোর সুযোগ সব সময়ে পাব না। তাই আমরা মহরমের জন্য তোলা সমগ্র অর্থ আবিরের চিকিৎসার প্রয়োজনে দিয়ে এলাম।”
৫০,০০০ রুপি হাতে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছেন আবির ও তাঁর স্ত্রী। আবির জানান- “আমি চিকিৎসার পরে কতখানি সুস্থ হব জানি না, কিন্তু আমার মন ও শরীর যেন অনেকটাই ভাল হয়ে গেল এই মুসলিম ভাইদের উদ্যোগ দেখে। বাড়িয়ে দিল বেঁচে থাকার ইচ্ছাটাকেও।”
খড়্গপুর পুরসভার চেয়ারম্যান প্রদীপ সরকার জানান “এই ধরনের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই, আমরাও চেষ্টা করছি সহায়তা করার।”