185821

খিলাফতের পতন আইএস-এর পতন নয়

নূসরাত জাহান: বছর তিনের আগে মুসলের আল নূরি মসজিদের দাড়িয়ে ইসলামিক স্টেট (আইএস) নেতা আবু বকর আল বাগদাদি খিলাফত প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। মাত্র তিন বছরের ব্যবধানে যৌথ বাহিনীর প্রতিরোধের মুখে মুসলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে সুন্নি এ জঙ্গি দলটি। যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত ইরাকি বাহিনী আইএসকে হটিয়ে মুসলের দখল নেয়। আর এর মধ্য দিয়ে পতন ঘটে খিলাফতের। শুধু ইরাক নয়, সিরিয়ায়ও সুবিধাজনক অবস্থানে নেই আইএস। জানুয়ারির পর থেকে এখন পর্যন্ত তারা সিরিয়ায় ৪৭ শতাংশ জায়গার নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা কনফ্লিক্ট মনিটর একথা জানিয়েছে। ফলে অনেকেই ভাবছেন, খিলাফতের পতন মানে আইএসয়ের পতন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটা ভেবে খুশি হওয়ার কোনো কারণ নেই যে খিলাফতের পতন হয়েছে আইএসয়েরও পতন হয়েছে। অনেক জায়গার নিয়ন্ত্রণ হারালেও গত কয়েক বছরে তারা মানুষের মাঝে তাদের যে মতাদর্শ, চিন্তা-ভাবনার বিস্তার ঘটিয়েছে তার তো আর পতন হয়নি।

বৈরুতের আমেরিকান ইউনিভারসিটির অধ্যাপক রামি খৌরি বলেন, ‘আইএসয়ের অবকাঠামো বা সাম্রাজ্যের ধ্বংস হয়েছে, কিন্তু তাদের বাহিনী রয়ে গেছে। তাার এখন আত্মগোপনে চলে যাবে। তারা আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে। আইএসয়ের উত্থানই একটি বড় সমস্যা।’

একের পর পর এক দখলকৃত জায়গার নিয়ন্ত্রণ চলে যাওয়া এবং সর্বশেষ খিলাফতের পতন আইএয়ের জন্য নিঃসন্দেহে বড় ধরনের ধাক্কা। তারা আবার ঘুরে দাড়াতে পারবে কিনা তাও স্পষ্ট নয়। কারো কারো মতে, অর্থনৈতিক নাজুক অবস্থা ও সংহিস পরিস্থিতি এ ধরনের জঙ্গি গোষ্ঠীর উত্থানে সহায়ক। এখন তারা এমন পরিস্থিতিতে পুঁজি করে ফের মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে কিনা সেটা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। তাই বলে এটা ধরে নেওয়ার কারণ নেই যে তাদের পতন হয়েছে।

খৌরি বলেন, বেকারত্ব, মানবাধিকার লঙ্ঘন, রাজনৈতিক অস্থিরতার মতো আঞ্চলিক ইস্যুগুলোর সুরাহ না করা পর্যন্ত এ ধরনের জঙ্গি দলগুলো তাদের প্রতি লোকজনকে আকৃষ্ট করাতে পারবে। তাদের মতাদর্শ মানুষের মাঝে অনায়াসে ছড়িয়ে দিতে পারবে।

ইরাকে আইএস খিলাফত ঘোষণার অনেক আগেই আল-কায়েদা খিলাফত ঘোষণা করেছিল। অনেকের ধারণা, আল-কায়েদাই ২০০৬ সালে নতুন নাম আইএস হিসেবে ফিরে এসেছে। মূলত তারা আল-কায়েদার শাখা। কারণ নৃশংস এ দলটির নেতৃত্বে আল-কায়েদার অনেক নেতাই রয়েছে। যারা এক সময় ইরাকে সাম্প্রদায়িকতা সংঘাত ছড়িয়েছে। ২০০৩ সালে ইরাকে মার্কিন আগ্রসনের পরে সেখানের আর্থ-সামাজিত অবস্থা একেবারে ভেঙে যায়। দেশ জুড়ে অস্থিরতা তৈরি হয়। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়েই জঙ্গিবাদের উত্থান হয়। এরই ধারাবাহিকতায় আইএসয়ের উত্থান। এক সময় তারা ইরাকের বড় নগরী মসুল দখলে নেয়। পাশাপাশি সিরিয়ায় তাদের আধিপত্য বিস্তার করে চলে। তবে প্রতিরোধের মুখে আইএস এখণ কোণঠাসা। তাই বলে তাদের পতন বা বিনাশ হয়নি। কাজেই এখন আরো বেশি সাবধান হতে হবে বিশ্ব সম্প্রদায়কে। সূত্র: আল-জাজিরা।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.