185441

লেক চাদে নীরব জরুরি অবস্থা

নূসরাত জাহান: বোকো হারাম জঙ্গি ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে লেক চাদকে ঘিরে থাকা দেশগুলোর নাগরিকদের অবস্থা বেসামাল। ক্যামেরন, চাদ, নাইজার ও নাইজেরিয়ার এক কোটি ৭০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। সহিংসতার কারণে লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত। আশ্রয় নিয়েছে শরাণার্থী শিবিরে। যেখানে খাদ্য, বিষুদ্ধ পানি, ওষুধ, চিকিৎসাসহ প্রয়োজনীয় জিনেসের ব্যাপক অভাব রয়েছে। এ পরিমাণ মানুষ সমস্যায় থাকলেও বিশ্ব সম্প্রদায় সেভাবে এ সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসেনি। একপ্রকার নীরব জরুরি অবস্থা জারি। ফলে সংকট দিনকে দিন আরো প্রকট হচ্ছে। বিবিসির ফটো সাংবাদিক ক্রিস ডি বোডের ক্যামেরায় উঠে এসেঝে এসব মানুষের দুর্দশার চিত্র।

মেডিসিনস সানস ফ্রন্টিয়ারসের (এমএসএফ) ক্যামেরন শাখা প্রধান আলবার্তো বোদরা বলেন, দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে অনেক মানুষ শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে। বোকো হারাম ও অন্যান্য সশস্ত্র বাহিনীর সহিংসতার কারণে এসব মানুষ তাদের ঘর-বাড়ি ছেড়ে এখানে এসে আশ্রয় নিয়েছে। সহিংতার কারণে ওইসব এলাকায় ত্রাণ দেওয়া সম্ভব হয় না। এছাড়া ত্রাণও আসতে পারছে না।

চলতি বছরের শুরুতে জাতিসংঘের সঙ্গে এক বৈঠকে এ এলাকার লোকজনকে সাহায্য করার জন্য দেড়শ কোটি ডলারের ত্রাণ সহায়তা প্রয়োজন বলে জানানো হয়। তবে বিশ্ব জুড়ে চলা অন্যান্য সমস্যার কারণে জাতিসংঘ এ নিয়ে তেমন মাথা ঘামায়নি। এখন পর্যন্ত জাতিসংঘ তেমন কোনো সাহায্যই পাঠায়নি।

অন্যান্য সমস্যা থেকে এ সমস্যার গুরুত্বটা কমের কারণ সম্পর্কে রেড ক্রসের আলেক্স ক্লেয়ার বলেছেন, ‘এটা মানুষের খাদ্য ও নিরাপত্তার বিষয়। লোকজন ক্ষুধার্থ অবস্থায় রয়েছে। এটা শুধু একটি জঙ্গি গোষ্ঠী বা সশস্ত্র গ্রুপের জন্য নয়। এটা ব্যাখ্যা করে বোঝানো সম্ভব নয়।’

তিনি আরো বলেন, ‘এ সমস্যা একদিনের সমস্যা নয়। এখানকার লোকজন প্রতিদিন এ সমস্যার ভোগ করে। ভূমিকম্প হলে দ্রুতই সাড়া পাওয়া যায়। বিশ্বের বিভিন্ন জাযগা থেকে ত্রাণ আসতে থাকে। তবে আফ্রিকায় যা চলছে তা ভিন্ন। ২০০৯ সাল থেকে এ সমস্যার শুরু হয়েছে। ২০১৪ সালে এটা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।’

বোদে বলেন, আফ্রিকার এসব লোকজন যেখানে থাকতো এবং বর্তমানে যেখানে আছে দুটোই বিপজ্জনক। পরিবারগুলো শিশুদের জন্য খাবার রেখে দেয়। কিন্তু একটু বড় শিশুদের খাওয়ার কিছুই নেই। তাদের বাজারে পাঠিয়ে দেয় ভিক্ষা করতে। কারণ শরণার্থী শিবিরগুলোয় দিনে মাত্র একবার খাবার দেওয়া হয়।’

এতো দুর্দশার মধ্যেও শরণার্থী শিবিরে মা-ছেলের ভালোবাসা দেখেছেন এই সাংবাদিক। তিনি বলেন, ‘এমন পরিস্থিতির মধ্যে কিছু কিছু ঘটনা থাকে মন ভারো করার মতো। শরণার্থী শিবিরের একটি তাঁবুতে আমি মা-ছেলের ভালোবাসা দেখেছি। কঠিন বাস্তবতার মধ্যে আমি মানবতা দেখেছি। আমি জানি এর জোরেই তারা জীবন এগিয়ে নেবে।’
সূত্র: বিবিসি।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.