183722

ইউটিউব দেখে আস্ত একটি বিমান বানালেন লং

নূসরাত জাহান: গাড়ির মেকানিক পেন লং গত তিন বছর রাতে ইউটিউবে ভিডিও দেখে কত সময় পার করেছেন তার কোনো হিসাব নেই। ভাইরাল ক্লিপস বা পপ গান দেখতেন না তিনি। বিমান নিয়ে তার বিশেষ আগ্রহ ছিল। বিমান বানানোর ভিডিও দেখতেন তিনি। এসব ভিডিও দেখতে দেখতে এক সময় নিজেই আস্ত একটি বিমান বানিয়ে ফেললেন।

লং বলেন, ‘প্রথম প্রথম আমি শুধু জেট লিখে সার্চ করতাম। এক সময় বিমানের উড্ডয়ন ও অবতরণ দেখতাম। ফ্লাইটের মডেল, বিমান নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানে কিভাবে সেগুলো বানায় তা দেখতাম।’

খেমার রুজদের ধ্বংসযজ্ঞ থেকে কম্বোডিয়া যখন একটু একটু করে উঠে দাড়ানো চেষ্টা করছে ঠিক সেই সময় লংও বড় হচ্ছে। ধনী কৃষক বাবার সন্তান তিনি। ছয় বছর বয়সে প্রথম হেলিপ্টার দেখেন। এরপর থেকেই তার ইচ্ছা হয় যানটি কেমন তা দেখার।

লং বলেন, ‘এরপর কয়েক দশক আমি স্বপ্নে শুধু বিমান দেখতাম। আমি সব সময় চাইতাম আমার নিজের একটি বিমান থাকুক। বেশি দূর লেখাপড়া করিনি। এক সময় স্কুল বাদ দিয়ে মেকানিকের প্রশিক্ষণ নেই।’ গাড়ি মেকানিকের বিদ্যা আর ইউটিউব দেখে ৩০ বছর বয়সী লং তার স্বপ্ন পূরণ করলেন। বানিয়ে ফেললেন আস্ত একটি বিমান।

লং বলেন, ‘শৈশবের স্বপ্ন পূরণের জন্য একটু একটু করে টাকা জমাই। এরপর পার্শ্ববর্তী প্রে ভেং প্রদেশে একটি গ্যারেজ ভাড়া করেন। খুব গোপনে সেখানে বিমান বানানোর কাজ শুরু করলাম। লোকজন আমাকে নিয়ে ঠাট্টা করবে এই ভয়ে আমি গোপনে কাজ করতাম। কখনও কখনও আমি রাতেও সেখানে কাজ করতাম।’

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের ব্যবহৃত এক আসন বিশিষ্ট একটি বিমানের নকশা দেখে তিনি বিমান বানাতে শুরু করলেন। তার বিমানে ব্যবহৃত বেশিরভাগ সরঞ্জামই রিসাইকেলড। চালকের আসনে রয়েছে একটি প্লাস্টিকের চেয়ার। আর কন্ট্রোল প্যানেলে বসানো হয়েছে গাড়ির ড্যাশবোর্ড। বিমানে বডি বানিয়েছেন গ্যাসের পুরনো কনটেইনার দিয়ে। বিমানটি বানাতে তার ১০ হাজার ডলরা খরচ হয়েছে। তবে বিমানের থেকে হেলিকপ্টার বানানো জটিল বলে মন্তব্য করেন লং।

৮ মার্চ লং তার স্বপ্ন পূরণ করেন। তার তৈরি বিমনাটি আকাশে উড়ান। তার গ্রামের ২০০-৩০০ মানুষ এ দৃশ্য দেখেন। বিমান নিয়ে তিনি মাটি থেকে ৫০ মিটার উচ্চতায় উড়তে সক্ষম হন।

লংয়ের স্ত্রী হিং মউহেং বলেন, ‘কিভাবে বিমান চালায় বা বানায় তা আমার জানা নেই। বিমানটি বানাতে আমার স্বামীকে কোনো বিশেষজ্ঞ সাহায্যও করেনি। পুরো কাজটি সে করেছে ভিডিও দেখে। অনেক সময় তাকে বলতাম তুমি কাজটি বাদ দাও। বিমানটি যখন আকাশে উড়ছিল তখন আমি চিন্তায় ছিলাম তাকে নিয়ে। সে যেন নিরাপদে নেমে আসতে পারেন এটাই প্রার্থনা করছিলাম।’ সূত্র: বিবিসি।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.