183291

রিহ্যাব সেন্টারে কেমন আছেন জিহাদিরা

নূসরাত জাহান: একটি তাঁবুর মধ্যে ৯ জনকে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে রাখা হয়েছে। কারোই ছবি তোলার অনুমতি নেই। তাদের পায়ে ইলেকট্রনিক ট্যাগ লাগানো। কেউ হাত খুলে কেউবা ভাজ করে দাড়িয়ে রয়েছে। তাদের চোখেমুখে ভীতি স্পষ্ট। তাদের পেছনেই দাঁড়িয়ে রয়েছে সৌদি নিরাপত্তা বাহিনী। সামনেই পশ্চিমা একাডেমিক, সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন। স্বাভাবিকভাবে এটা খুবই অস্বস্তিকর বিষয়। এই ৯ জন হলেন আল-কায়েদার ইয়েমেনি সদস্য। ১৫ বছর কিউবার গুয়ানতানামো বে মার্কিন বন্দি শিবিরে কাটিয়ে এপ্রিলে সৌদি আরবের পুনর্বাসন কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়েছে।

২০০১ থেকে ২০০৭ সালের সময়ে আফগানিস্তান থেকে ওই ৯ ইয়েমেনি যোদ্ধাকে আটক করা হয়। এরপর তাদের নিয়ে যাওয়া হয় গুয়ানতানামো বে বন্দিশিবিরে। ১৫ বছর সেখানেই আটকা ছিল। সম্প্রতি সৌদি আরবের জিম্মায় তাদের মুক্তি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে পুরোপুরি মুক্তি এখনো পায়নি তারা। তখনই এই ৯ জন মুক্তি পাবে যখন এটা নিশ্চিত হওয়া যাবে যে তারা আর এমন কোনো সহিংস কাজে নিজেদের জড়াবে না।

সম্প্রতি সৌদি সফরের সময় ইসলাম ধর্ম নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেওয়া ভাষণ তারা টিভিতে শুনেছে কিনা-এ প্রশ্ন করার পর মৃদু হাসলো। এরপর নিজের বুক ছুঁয়ে এক বন্দি বলেন, ‘আমি জানি না তিনি সচেতনভাবে এসব কথা বলেছিন কিনা। আমি তার বুকে হাত দিয়ে দেখতে চাই তিনি আসলে সত্য কথা বলেছেন কিনা। ’

বন্দিদের মধ্যে সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি বলেন, ‘তিনি (ট্রাম্প) অনেক কথা বলেছেন। তবে তার কাজের ওপর ভিত্তি করেই আমরা তার সম্পর্কে বিচার করবো।’ আরেকজন বলেন, তাদের যখন গুয়ানতানামো বে-তে পাঠানো হয়েছিল তখন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় ছিল বুশ প্রশাসন। এখন ক্ষমতার পালা বদল হয়েছে।

নিরাপত্তা রক্ষী থাকায় প্রতিটি শব্দই তারা খুব সচেতনভাবে বলছিলেন। যাতে তারা এমন কিছু না বলে যা দিয়ে তাদের সহিংস মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ হয়ে যায়। কারণ এ বিষয়টির ওপরই তাদের মুক্তি নির্ভর করছে।

জঙ্গিদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে সৌদি কর্তৃপক্ষ জিহাদিদের জন্য পুনর্বাসন কেন্দ্র চালু করেছে। ২০০৪ সালে এটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। সৌদিতে আল-কায়েদার বেশ কয়েকটি হামলার পর এ কেন্দ্রটি গড়ে তোলা হয়। এখানে জঙ্গিদের কাউন্সিলিং ও অন্যান্য সেবা দেওয়া হয়। এ কেন্দ্রের বেশির ভাগই সৌদি নাগরিক। জঙ্গি তৎপরতা চালানোর দায়ে যারা বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত।

৯ ইয়েমেনি বন্দির একজন বলেন, ‘আগের থেকে অনেক পরিবর্তন এসেছে আমাদের। এখনকার আমাদের সঙ্গে আগের আমাদের কোনো মিল নেই। নতুন আমাকে চেনানোর জন্য এ কেন্দ্রকে ধন্যবাদ জানাই।’

সূত্র: বিবিসি।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.