182728

অন্ধদের জন্য টেনিস

মোহাম্মদ সায়েম: তিনি ছিলেন অন্ধ। তবে টেনিসের প্রতি ছোটবেলা থেকেই ভালোবাসা ছিল প্রবল। চেয়েছিলেন আর সবার মতো টেনিস খেলতে। সে জন্য আবিষ্কার করেছিলেন বিশেষ ধরনের বল। অন্ধদের টেনিসকে মিয়োশি তাকেই ছড়িয়ে দিয়েছেন বিভিন্ন দেশে। বাতাস কেটে শাঁ করে ছুটে আসছে সবুজ বলটি। সেদিকে লক্ষ রেখে হাতের র‌্যাকেটটা ঠিকঠাক চালাতে গিয়ে পাকা খেলোয়াড়েরও হরহামেশা গড়বড় হয়ে যায়। সেখানে অন্ধ হয়ে টেনিস খেলার কথা মুখে আনা তো রীতি মতো ধৃষ্টতা। তবে কেবল শ্রবণশক্তির ওপর ভরসা রেখেই টেনিস খেলতে চেয়ে ছিল এই ছেলেটি। মনের কোণে লুকানো ইচ্ছেটা খুলে বলেছিলে স্কুলের শিক্ষকের কাছে। অন্ধ ছাত্রটিকে বেশ পছন্দ করতেন শিক্ষক। সময়ও দিতেন আলাদাভাবে। মিয়োশি তাকেইকে শিক্ষক নিয়ে গিয়েছিলেন টেনিস কোর্টে। জালের একপাশে ছাত্রকে দাঁড় করিয়ে দিয়ে অন্যপাশে চলে যেতেন তিনি। হাত দিয়ে বল ছুড়ে দিতেন। তাকেইয়ের কাজ ছিল বলের শব্দ শুনে যথাসম্ভব জোরে আঘাত করা। কিন্তু এভাবে আর কত মন ভরে? জালের ওপাশে একজন প্রতিদ্বন্দ্বী থাকলে কতই না ভালো হতো, মনে মনে এসব ভেবে দুঃখ করত ছোট্ট তাকই।
মিয়োশি তাকইয়ের বসবাস জাপানে। ছেলেবেলা থেকে টেনিসেই তাঁর ধ্যানজ্ঞান। হঠাৎ একটা বুদ্ধি খেলে গেল তাঁর মাথায়। বলটা যদি আরও নরম হয়, তাহলে খেলোয়াড়ের তো আঘাত পাওয়ার কোনো ভয়ই থাকবে না। সে খেলতেও পারবে সাবলীলভাবে। আর বলটা যদি শব্দ করে তাহলে কোথায় পড়েছে তা বের করা যাবে সহজেই। এরপর কাজে নেমে গেলেন তিনি। তৈরি করে ফেললেনহালকা আর নরম এক ধরনের বল। হলুদ রঙের বলটি মাটিতে পড়ে যেতে যেতে শব্দ করে। ফলে সেটি খুঁজে নিতে কোনো সমস্যা হয় না। আস্তে আস্তে ছড়িয়ে গেল বিশেষ ধরনের বল দিয়ে টেনিস খেলা। প্রথম আয়োজনটি হয়েছিল তাকেইয়ের উদ্যোগেই ১৯৯০ সালে। জাপানে আয়োজিত হলো অন্ধদের প্রথম টেনিস চ্যাম্পিয়নশিপ। কোর্টের সীমানা নির্দেশ করতে মেঝেতে দেওয়া হলো দড়ির বেষ্টনী। সেখানে পা স্পর্শ করে খেলোয়াড়রা বুঝে নিতেন তাঁদের অবস্থান কোথায়। সাধারণ টেনিস থেকে অনেক সহজ করা হলো।

প্রতিযোগিতাটির নিয়মকানুন। বল মেঝেতে তিনবার বাউন্স করার পরও র‌্যাকেটে লাগাতে পারলে সেটি বৈধ। মিয়োশি তাকেই সেখানেই গেছেন, ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন খেলাটি। তাঁর একক চেষ্টায় ইংল্যান্ড, কোরিয়া, তাইওয়ান, চীন, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ায় অন্ধরা মজার এই খেলায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। তবে যে অন্ধত্ব তাঁকে নতুন একটি থেলার আবিষ্কারক হওয়ার গৌরব এন দিয়েছে, সেটিই একদিন কাল হলো। ২০১১ সালের ১৬ জানুয়ারির কথা। সেদিন বিকেলে স্ত্রীর সঙ্গে হেঁটে হেঁটে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। তাঁর স্ত্রীও অন্ধ। রেলক্রসিংয়ে আটকে পড়েছিলেন তাঁরা। অন্য দিক থেকে ধেয়ে আসছিল ট্রেন। কিন্তু টের পাননি স্বামী-স্ত্রী কেউই। ফলে মাত্র ৪২ বছর বয়সে পরলোকে চলে যেতে হয় তাকেইকে। এখন তাকেইয়ের স্বপ্ন পুরনের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন ঘনিষ্ঠ বন্ধু আয়োকো মাতসুই।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.