181857

অদম্য ইরানি নারী ফাতেমাহ দানেশভার

মোহতামীম নাঈম : একাধারে তিনি ব্যবসায়ী, সিটি কাউন্সিলর এবং সমাজকর্মী। ইরানের মতো একটি কট্টরপন্থী দেশে একজন নারী হিসেবে নিজের অবস্থান তৈরি করে নিতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে ফাতেমাহ দানেশভারকে।

৪৩ বছর বয়সী ফাতেমাহর ৭টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এমনকি তিনি খনি ব্যবসার সাথেও জড়িত, যেখানে পুরুষের উপস্থিতিই বেশি চোখে পড়ে। একইসাথে তেহরানের সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর ও ইরানের ব্যবসায়ীদের সংগঠন চেম্বার অব কমার্সের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন ফাতেমাহ। ইরানের সামাজিক সমস্যা নিয়ে অসংখ্য রিপোর্টও লিখেছেন তিনি। তার আয়ের এক চতুর্থাংশ তিনি নিজের প্রতিষ্ঠিত সংগঠন মেহরাফারিন এ দান করেন, যা ব্যয় হয় পিতৃ পরিত্যক্ত নারী ও শিশুদের কল্যাণে।

চার সন্তানের জননীর এই সাফল্যের পথ মসৃণ ছিল না। তাকে অনেক বাঁধা অতিক্রম করতে হয়েছে। বিশেষ করে ইরানী সনাতন ভাবধারার ব্যবসায়ীরা একজন নারীর এরকম ব্যবসায় জড়ানোকে ইতিবাচক হিসেবে দেখেননি। কিন্তু ফাতেমাহ ছিলেন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং তিনি চেয়েছিলেন তাকে দেখে সমাজের অন্য নারীরাও অনুপ্রাণিত হোক।

ব্যবসায় প্রশাসনে মাস্টার্স করে ফাতেমাহ সিদ্ধান্ত নেন তিনি নিজেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দাঁড় করাবেন। নারী হিসেবে ব্যবসা খাতে তিনি ছিলেন একা। ওই সময়ে ইরানের সংস্কৃতিতে একজন নারী ব্যবসায় বিশেষ করে খনি ও আমদানি-রপ্তানির মতো ব্যবসায় জড়াবে এটি কল্পনাতীত ছিলো। ফাতেমাহ বলেন, “আমি খনিজ পদার্থ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করতে শুরু করি। এই ব্যবসায় আমি দ্রুত সাফল্য পাই। আমি অনুধাবন করতে পারি এই শিল্পে একমাত্র নারী হিসেবে আমার ঝুঁকি গ্রহণের ক্ষমতা, আত্মবিশ্বাস ও সাহসই অভাবনীয় সাফল্য এনে দিয়েছে। জীবনের প্রথম ব্যবসায়িক চুক্তি করেছিলাম ২ মিলিয়ন ডলারের, অথচ তখন আমার হাতে ছিল মাত্র ২০০ ডলার। মানুষ আমার কাছে জানতে চায়, কীভাবে আমি এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছিলাম। আমি বলি এটি সম্ভব হয়েছিল কেবল দক্ষ আলাপ আলোচনার মাধ্যমে”।

ফাতেমাহ’র মতে, ইসলামী অনুশাসনের দেশগুলোতে নারীর জীবন নিয়ে পশ্চিমাদের মধ্যে ভুল দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। কাজের জন্য বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করেন তিনি। তুলনা করে দেখেছেন, ইরানি নারীরা অনেক উচ্চশিক্ষিত ও অন্যান্য দেশ থেকে অপেক্ষাকৃত বেশি স্বাধীনতা ভোগ করে থাকে। তবে তিনি ইরানের মতো একটি দেশে মহিলাদের মধ্যে নারীসুলভ আচরণ বিদ্যমান আছে বলেও মনে করেন। অনেক নারীই নিজেদেরকে শক্তিশালী করার জন্য স্বামীকে দূর্বল করে দিতে চান না।

পরিবার নিয়ে সুখে আছেন ফাতেমাহ। বলেন, “আমার স্বামী বন্ধুর মতো, দুজনে মিলে সন্তান লালন পালন করেছি। আমাকে যখন ব্যবসার কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়েছে তখন সে সন্তানদের দেখাশুনা করেছে। সে একজন মহান পিতা। স্বামীর সমর্থনই আমার ব্যবসায় উন্নতির অন্যতম চাবিকাঠি”।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.