181707

টিটেনাস কি? এই রোগে আমাদের ক্ষতি কি? এই রোগ প্রতিরোধের উপায় কি?

প্রশান্ত মান্না:
প্রথমেই জানা দরকার টিটেনাস কি?

চিকিৎসকদের মতে টিটেনাস হল একটি মারাত্মক ব্যকটেরিয়া জনিত সংক্রমন। এই রোগ শরীরের স্নায়ুতন্ত্র আক্রন্ত করে শরীরে পেশি গুলিকে শক্ত করে দেয়। টিটেনাসের ফলে আমাদের পেশিতে টান ধরে। বাংলাতে এই রোগকে বলে ধনুষ্টংকার। এই রোগে আক্রান্ত বেশীরভাগ রোগীর চেহারাই শক্ত হয়ে ধনুকের মত বেঁকে যায়। টিটেনাসের প্রাতমিক লক্ষণ ঘাড় এবং চোয়ালের পেশি শক্ত হয়ে যাওয়া।

আমরা সকলেই ভেবে থাকি কাঁচে বা লোহা কিংবা পেরেকের আঘাতে কেটে গেলে আমাদের শরীরে টিটেনাস ভাইরাস প্রবেশ করে। এই ভাবনাটি ভুল। জেনে রাখা দরকার যে কোনো শুধু লোহা বা কাঁচ নয়, যে কোনো কাঠা ছেঁড়াতেই এই জীবানু আমাদের শরীরে প্রবেশ করতে পারে। কোনো ধরনের সার্জারি, প্রাণীর কামড়, ইঞ্জেকশন, ট্যাটু করার মাধ্যমেও এই ভাইরাস আমাদের শরীরে প্রবেশ করতে পারে।

তবে টিটেনাস কিন্তু একেবারেই ছোঁয়াচে রোগ নয়। তাই রোগীরে থেকে নিজেকে দূরে রাখার কোনো প্রশ্নই আসে না।

টিটেনাসের লক্ষণ গুলি জেনে রাখা দরকার–
শরীরে টিটেনাস জীবাণু ঢোকার পর দুই থেকে তিন সপ্তাহ পরে এই রোগের লক্ষণ গুলি দেখা যেতে থাকে। এই রোগের লক্ষণ গুলি হল-
শরীরের বিভিন্ন অংশের মাংসপেশী শক্ত হয়ে যায়, পেশীতে টান ধরে। বিশেষ করে ঘাড়, পিঠ, বুক, ইত্যাদি অংশের পেশীগুলি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এমনকি হৃদপিণ্ডের গতিও অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে যায়, জ্বর আসে, অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে যায় ঘাম হওয়ার পরিমান। অতিরিক্ত মাত্রায় রক্তচাপ বেড়ে যায় ফলে মৃত্যুও ঘটতে পারে।

রোগ প্রতিরোধের উপায়-

এই রোগ প্রতিরোধের একমাত্র উপায় টিকাকরন বা ভ্যাকসিনেশন। এখন শিশুর জন্মের পরেই ডিপিটি টিকা দেওয়া হয়। ডিপিটি হল ডিপথেরিয়া, পরটুসিস এবং টিটেনাস। তবে আমাদের মত তৃতীয় বিশ্বের দেশ গুলিতে টিকা করণ নিয়ে কিছু কুসংস্কার এখনও রয়েই গেছে। এছাড়াও আছে অবিভাবকদের গাফিলতি। সময় মত অনেকেই নিজেদের শিশুদের টিকাকরণ করাতে নিয়ে যান না। সময় মত এই টিকাকরণ গুলি করিয়ে এলে এই রোগের সমস্যা থেকে অনেকটাই মুক্তি পাওয়া সম্ভব হবে। যদি এই টিকা গুলির নিয়ম মেনে চলতেই হয় তাহলে জেনে রাখা দরকার, ১২ বছর বয়স পর্যন্ত এই টিকা নেওয়া যেতে পারে। আর এই ভ্যাকসিন গুলির প্রভাব থাকে ৫ বছর। অর্থাৎ কেউ যদি ১২ বছর বয়েসে এই টিকা নিয়ে থাকেন তাহলে তাঁর এই টিকার মেয়াদ থাকবে ১৭ বছর বয়স পর্যন্ত। ১৭ বছর বয়সের পর যদি কোনো ভাবে কেটে যায় তাহলে অবশ্যই টিটেটাস ইঞ্জেকশন নিতে। সেক্ষেত্রে কাটা, ক্ষত, পোড়া ইত্যাদি ঘটলে তবেই এই ইঞ্জেকশন নেওয়া বাধ্যতামুলক।

এই ইঞ্জেকশন নেওয়ার কিছু পদ্ধতি আছে-

আমাদের মধ্যে এই ভ্যাকশিন নিয়ে কিছু ভুল ধারনা আছে। যেমন, অনেকই মনে করেন কেটে যাওয়ার পরেই এই ইঞ্জেকশন নিলে তার অ্যাকশন কিছু মাস বা কিছু বছর থেকে যায়। এক্ষেত্রে ভ্যাকসিনটি নেওয়ার ঠিক ৬ মাস পরে আবার একটি ভ্যাকশন নেওয়া বাঞ্ছনিয়। যদি এই ভ্যাকসিন ঠিক ভাবে নেওয়া হয় তাহলে চিকিৎসকদের মতে ৫ বছর জন্য এর সুফল ভোগ করা সম্ভব হবে।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.