181493

কোথা থেকে আসল পবিত্র শব-ই-বরাত? এই রাতের কিছু বিধি-নিষেধ…!

বছরের একটি ফজীলতপূর্ণ রাত হচ্ছে লাইলাতুন মিন নিসাফি শাবান তথা লাইলাতুল বারাত বা শবে বরাত। এ লাইলাতুল বরাতে নিহিত রয়েছে মুমিন-মুসলিমের মুক্তি ও কল্যাণের বিভিন্ন উপকরণ। তাই এ রাতকে বলা হয়েছে মুক্তির রাত। অন্যদিকে পবিত্র মাহে রমজানের পূর্বের মাস হওয়ার কারণে শাবান মাসকে বলা হয়েছে রমজান শরীফের প্রস্তুতির মাস।

 

 

 

লাইলাতুল বরাতের অনেক তাৎপর্য, ফযীলত ও বরকত রয়েছে। মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরশাদ করেন, শাবান মাস হল আমার মাস আর পবিত্র রমজান মাস হল মহান আল্লাহ তাআলার মাস। তিনি আরও বলেন, তোমরা শাবানের চাঁদ সঠিকভাবে হিসাব রাখ। কেননা শাবানের চাঁদের হিসাব ঠিক হলে, রমজানের চাঁদের হিসাব সঠিক হতে সহায়ক হবে। (মিশকাত শরীফ-১১৫পৃষ্ঠা)

 

 

 

শাবান মাসের ১৪তম তারিখের দিবাগত রাত হচ্ছে- লাইলাতুল বরাত। লাইলাতুল বরাত হচ্ছে-গুনাহ থেকে মুক্তি লাভের রাত্রি। অর্থাৎ, এ রাত্রে ইবাদত-বন্দেগী করার মাধ্যমে মুমিন-মুসলামনদের গুনাহ মাফ হয়ে থাকে এবং মর্যাদা বৃদ্ধি হয়ে থেকে।

 

 

 

শাবান এবং শবে বরাতের করণীয় সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরশাদ করেন, শাবান মাসের রোযা আমার নিকট অন্য মাসের তুলনায় অধিক প্রিয়। যখন তোমাদের নিকট শাবানের রাত্রি উপস্থিত হবে, তখন তোমরা সেই রাতটি জাগ্রত থাক (নামাজ পড়ে, কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করে, তাসবীহ পড়ে, যিকির করে, দুআ করে) এবং দিনের বেলা রোযা রাখ। কারণ, এ রাতে মহান আল্লাহ সূর্যাস্তের পর থেকে ফজর পর্যন্ত দুনিয়ার আসমানে তাশরীফ আনেন এবং তিনি ঘোষণা করেন- আছে কি এমন কোন ব্যক্তি যে, তার গুনাহ মাফীর জন্য আমার নিকট প্রার্থনা করবে? আমি তার গুনাহ সমূহ মাফ করে দিব। আছে কি এমন কোন রিযিক প্রার্থনাকারী, যে আমার নিকট রিযিক প্রার্থনা করবে? আমি তার রিযিকের ব্যবস্থা করে দিব। আছে কি এমন কোন বিপদগ্রস্ত, যে আমার নিকট বিপদ থেকে মুক্তি চাইবে? আমি তাকে বিপদ থেকে উদ্ধার করব। এভাবে পূর্ণ রাত মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে ঘোষণা হতে থাকে এবং বান্দাদের উপর রহমত বৃষ্টির ন্যায় নাজিল হতে থাকে।

 

 

 

হযরত আলা ইবনে হারিস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, হযরত আয়িশা (রাঃ) বলেন, একবার রাসূল (সাঃ) নামাযে দাঁড়ান এবং এত দীর্ঘ সিজদা করেন যে, আমার ধারণা হয় তিনি হয়ত মৃত্যুবরণ করেছেন। আমি তখন উঠে তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম। তখন তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়ল। যখন তিনি সিজদা থেকে উঠলেন এবং নামাজ শেষ করলেন, তখন আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আয়েশা বা ও হুমাইরা! তোমার কি এ আশংকা হয়েছে যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তোমার হক নষ্ট করবেন? আমি বললাম, তা নয়, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার দীর্ঘ সিজদা দেখে আমার আশংকা হয়েছিল, আপনি মৃত্যু বরণ করেছেন কিনা।

 

 

 

নবীজী জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি জান এটা কোন রাত? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সাঃ) ভাল জানেন। রাসূল (সাঃ) বললেন, এটা হল অর্ধ শাবানের রাত। আল্লাহ তাআলা অর্ধ শাবানে তাঁর বান্দাদের প্রতি নজর দেন এবং ক্ষমাপ্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করেন, অনুগ্রহপ্রার্থীদের প্রতি অনুগ্রহ করেন। আর বিদ্বেষ পোষণকারীদেরকে ছেড়ে দেন তাদের অবস্থাতেই।

 

 

 

এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হল, এ রাতে দীর্ঘ নফল নামাজ পড়া উত্তম, যাতে সিজদাও দীর্ঘ হবে। এছাড়াও এ রাতে কুরআন তেলাওয়াত, যিকির আযকার ইত্যাদি আমল করা যায়।

 

 

 

এ রাতের কিছু ভিত্তিহীন কাজকর্ম:
ইসলামে এ রাতের নামাজের বিশেষ কোন নিয়মনীতি নির্ধারিত নেই। কিন্তু কেউ কেউ শবে বরাতের জন্য আলাদ পদ্ধতির নামাজ আছে বলে মনে করেন। কিন্তু এ বিশেষ পদ্ধতির নামাজ সম্পর্কে যে রেওয়াতগুলো আছে, তা সবই অমূলক ও মওযু। হাদীস শরীফের কোন কিতাবে এসব রিওয়াতের নাম নিশানা পর্যন্ত নেই।

 

 

 

 
এছাড়া, এ রাতে খিচুড়ি বন্টন, হালুয়া রুটি প্রথা, মসজিদ ইত্যাদি আলোকসজ্জা করা ইত্যাদি বিদআত কাজ। এগুলো শয়তানের ধোঁকা। মানুষকে আসল কাজ থেকে বিরত রাখার জন্য শয়তান এসব অযথা কাজ-কর্মে মানুষকে লাগিয়ে দেয়। এসব থেকে আমাদেরকে দূরে থাকতে হবে। উৎস : বিডি২৪লাইভ

পাঠকের মতামত

Comments are closed.