180434

এভারেস্টের পথেও জ্যাম!

অনির্বাণ বড়ুয়া: কল্পনা করুন, বরফে ঢাকা হিমালয়ে লেগে গেছে রাজধানীর মতো মানুষের ভিড়। মানবজ্যামে পর্বতারোহীদের পথ এগুচ্ছে কচ্ছপের গতিতে। এতে পর্বতারোহীদের অক্সিজেন খরচ হচ্ছে বেশি। শরীর হয় পড়ছে দুর্বল। ইতিমধ্যে এই ধীরগতির জন্য চলতি বছরে একজন সুইস পর্বতারোহীর মৃত্যুও ঘটেছে।

নেপাল সরকার ২০১৭ সালে রেকর্ডসংখ্যক ৩৭১ জনকে পর্বতারোহনের অনুমোদন দিলে সমস্যার শুরু হয়। এই ৩৭১ জনের সঙ্গে শেরপা মিলিয়ে প্রায় ৮০০ জন পর্বতারোহীর এক মিছিল এখন হিমালয়ের গা বেয়ে উঠছে। যার ফলে সৃষ্টি হয়েছে বিশাল এক লাইন। আর এটি চলছে খুবই ধীরে। বিষয়টি দুশ্চিন্তার কারণ হয় একজন জার্মান পর্বতারোহীর ছবি থেকে। জার্মান এক পর্বতারোহী কিছুদিন আগে হিউম্যান স্নেক বা মানব সাপ নামে একটি ছবি পোস্ট করে। সেটিতে দেখা যায় বিশাল লম্বা মানুষের সারি দড়ি ধরে ধরে ধীরে ধীরে এগুচ্ছে।

হীমালয়ে অনেকে উঠলে সমস্যা কী?
মিংমা তানজি শেরপা গত বছরের বর্ণনা দেন। তিনি বলেন গত বছর আমাদের উঠতে সময় চার ঘণ্টা বেশি লেগেছিলো। হিলারি স্টেপে তাদের অপেক্ষা করতে হয়েছে এক ঘণ্টার মতো। (হিলারি স্টেপ হচ্ছে পর্বতের সর্বোচ্চ চুঁড়ায় ওঠার আগের বিপদজনক খাড়া একটি বরপখণ্ড।)

পর্বতারোহী বেশি হলে একে অপরের আগে যাওয়ারও একটি প্রবণতা থাকে আর এতে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। ২০১৭ সালে ইতিমধ্যেই উলে স্টেস্ক নামে একজন সুইজ পর্বতারোহী পড়ে গিয়ে মারা গেছেন।

ভারতীয় পর্বতারোহী কুনাল জয়শের বলেন, “আপনি যখন এমন পরিবেশে থেমে থেমে অনেক আস্তে চলবেন তখন আপনার শরীর হীম বাতাশে স্ট্যামিনা হারাতে শুরু করতে পারে। আর এতে আপনার মূল্যবান অক্সিজেনেরও অপচয় হয়।”

বিশ্বের সর্বোচ্চ চূড়ার এই সংকট নিয়ে চিন্তায় আছে স্থানীয় থেকে শুরু করে নেপাল সরকারও। নেপাল মাউন্টেনিং অ্যাসোসিয়েশানের সভাপতি অং তেশেরিং শেরপা বলেন, গড়ে প্রতি বছর নিরাপদে হিমালয়ে ওঠার জন্য খুব কম দিনই পাওয়া যায়। আর ৮০০ পর্বতারোহী একসঙ্গে উঠলে বিষয়টি বেশ সমস্যার জন্ম দিতে পারে।

হিমালয়ে মানুষের ভিড় কমাতে নেপাল সরকার নিয়মনীতিও বেশ কড়া করে দিচ্ছে। হীমালয়ে ওঠার জন্য আবেদন করতে হলে আগে ২১ হাজার ফুট উঁচু অন্য পর্বতে ওঠার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। সেই সঙ্গে বয়স ১৮ বছরের নিচে ও ৭৫ বছরের ওপর হলে আবেদন করা যাবে না। যদিও আইনটি এখনও পাস হয়নি।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.