179622

বিরল অস্ত্রোপচারে সুস্থ তিন পা নিয়ে জন্মানো শিশু চৈতি

আরও একটা ভাই বা বোনকে সঙ্গে নিয়ে পৃথিবীর আলো দেখার কথা ছিল মেয়েটার। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ সহোদর বা সহোদরার বদলে তার শরীরের একটা মাত্র অংশ নিয়ে জন্ম নিল চৈতি। প্রকৃতির আজব খেয়ালে জন্মের সময় মায়ের গর্ভেই তার শরীরের সঙ্গে জুড়ে গিয়েছিল অতিরিক্ত একটা পা। চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, যমজ সন্তান হওয়ার জন্য শুরু হয়েছিল কোষ বিভাজন। কিন্তু সেই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ না হওয়াতেই এমন বিরল বৈশিষ্ট্য নিয়ে জন্ম হয়েছিল চৈতির।
বাংলাদেশের বাসিন্দা চৈতি খাতুনের বয়স তিন বছর। তিনটি পা নিয়ে জন্ম হয়েছিল তার। ফলে ছোট থেকেই স্বাভাবিক ভাবে হাঁটাচলা করতে সমস্যা হত চৈতির। জন্মের পর বাংলাদেশেই অস্ত্রোপচার করে তার পায়ের কিছুটা অংশ বাদ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাতেও পুরোপুরি সুস্থ হয়নি চৈতি।
সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ান চ্যারিটি চিল্ড্রেন ফার্স্ট ফাউন্ডেশনের তরফে অস্ট্রেলিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল চৈতিকে। মেলবোর্নের মোনাশ চিল্ড্রেন’স হসপিটালের পেড্রিয়াটিক সার্জেন ক্রিস কিম্বার বলেন, ‘‘এই ঘটনা খুবই বিরল। কোষ বিভাজন ঠিকমতো না হওয়ায় যমজের শরীরের একটা অংশ চৈতির সঙ্গে জুড়ে ছিল। পাশাপাশি চৈতি খুব দুর্বলও ছিল। ফলে ঠিকমতো হাঁটতেও পারত না। তবে অস্ত্রোপচারের পর চৈতি এখন অনেকটাই সুস্থ।’’
চৈতির ‘কেস’ হাতে পাওয়ার পরেই ইউরোপ, আমেরিকার তাবড় তাবড় চিকিৎসকদের সঙ্গে পরামর্শ শুরু করেন মোনাশ চিল্ড্রেন’স হসপিটালের চিকিৎসকরা। দেখা যায়, যমজের একটি পা চৈতির পেরিনিয়াম অংশে (অ্যানাস ও ভালভার মাঝের অংশ) যুক্ত হয়ে রয়েছে। শুধু তাই নয়, চৈতির শরীরে রেকটাম, অ্যানাস, ইউটেরাস এবং ভ্যাজাইনা-ও ছিল দু’টি করে।
শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হয় অস্ত্রোপচার করা হবে চৈতির। গত বছরের নভেম্বরে জেনিটাল এবং পেলভিক রিকনস্ট্রাকশনের আট জন বিশেষজ্ঞ আট ঘণ্টার চেষ্টায় শেষ পর্যন্ত এই বিরল অস্ত্রোপচারে সফল হন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন এখন সুস্থ চৈতি। দীর্ঘদিন চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে থাকার পর সম্প্রতি ঢাকায় নিজেদের বাড়িতে ফিরে এসেছে চৈতি। ‘‘চৈতি এখন হাঁটতে পারছে। ওর সমবয়সীদের সঙ্গে এখন খেলাও করে ও’’, জানালেন চৈতির মা সালমা খাতুন।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.