178603

ক্যারিয়ার-এর মানসিক চ্যালেঞ্জ সামাল দেবেন যেভাবে

আফরা নাওমি: ছোট থেকেই আমরা অসংখ্যবার একটি প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। “বড় হয়ে কী হতে চাও?” কাউকে অনুকরণ করে কিংবা পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে আমরা অনেকেই বলি “’বড় হয়ে ইঞ্জিনিয়ার হবো।’ আবার অনেকে বলে “ডাক্তার হতে চাই’’ ছোটবেলার যত সহজে সে কথা বলে ফেলা যায়, বড় হয়ে কিন্তু সেই কথাটাকে বাস্তবায়ন করা ঠিক ততটাই কঠিন।
বর্তমানে সবাই ক্যারিয়ার ওরিয়েন্টেড হয়ে উঠছেন। ডাক্তার ইঞ্জনিয়ার হিসেবে ক্যেরিয়ার গড়তে চায় অনেকে। এ ছাড়া, পছন্দের তালিকায় রয়েছে, ব্যবসা, শিক্ষকতা, সাংবাদিকতা, গ্ল্যামার, আইন। কিন্তু ক্যারিয়ার গড়ে তোলা ঠিক ততটা সুবিধের নয় যতটা আমরা মনে করে থাকি। ক্যারিয়ারে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখী হতে হয়।

মানসিক চাপ ক্যারিয়ার ও জীবনের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। যেমনঃ বসের চোখ রাঙানই,কাজের চাপ,পারিবারিক চাপ,অর্থসংকট ইত্যাদি। কারণে অকারণে বসের চোখের বিষ হয়ে উঠতে পারেন। আধুনিক সময় প্রতিযোগিতামূলক। আপনার প্রিয় সহকর্মীও আপনার প্রতিযোগী। এভাবেই কাজের চাপটা বাড়তে থাকে উন্নতির পথে চলার জন্য। আপনি যদি বিবাহিত হয়ে থাকেন, পারিবারিক-সাংসারিক চাপগুলো স্বভাবতই পিছু ছাড়তে চায় না। মানুষ সামাজিক জীব। পারিপার্শিক বিভিন্ন অবস্থা, প্রিয় মানুষের অকালে চলে যাওয়া, বিচ্ছেদ ইত্যাদি আমাদের কাজে চাপ সৃষ্টি করে। এ ছাড়া, যত দিন যায় ঝামেলা বাড়তেই থাকে, চাপ বেড়েই চলে।

যেমন আমরা দেখি একজন শিক্ষক, একজন ডাক্তার, একজন ইঞ্জিনিয়ার কেমন মানসিক চাপের মধ্য দিয়ে দিন যাপন করেন। একজন শিক্ষক মানুষ গড়ার কারিগর। তাকে সবসময় ব্যস্ত থাকতে হয় তার আচার-আচরণ, ব্যবহার ইত্যাদি নিয়ে কারণ তাকেই অনুসরণ করে চলে অসংখ্য শিক্ষার্থী। একজন ডাক্তার সবচেয়ে ব্যস্ত সময় কাটান। তাদের হাতে মানুষের জীবন অনেকটা নির্ভরশীল। এটাই তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। এটাই তাদের নিত্যদিনের চ্যালেঞ্জ। দিন থেকে রাত পর্যন্ত রোগী দেখতে দেখতেই পার হয়ে যায়। ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে প্রতিযোগিতামূলক দিন পার করেন। তাদের ক্যারিয়ারটা খুব কঠিনভাবে তৈরি হয়। কারণ প্রতিনিয়তই তাদের লাভ-লোকসান নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়। আবার ব্যবসা করা অনেক টাকার ব্যপারও বটে।তাদের চাপটা অন্য ধরনের, তাদের চ্যালেঞ্জ ভিন্ন।

অর্থাৎ আমরা দেখতে পাই সবরকমের চাকরীতেই অথবা যে কোন রকমের ক্যারিয়ার গড়তে আমাদের সবসময়ই মানসিক চ্যেলেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়।

কী কারণে মানসিক চ্যালেঞ্জ :
স্বপ্নের ক্যারিয়ার গড়তেও প্রতিনিয়তই আমাদের লড়তে হয় এবং বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। যেমনঃ হতাশা, প্রতিবন্ধকতা, কোনো প্রকার দ্বন্দ্ব ,পারিবারিক অশান্তি, চাকরিতে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থা, অর্থ সংকট, সামাজিক বাধা, স্বাস্থ্য এর অবনতি, ঘনিষ্ঠ কারো মৃত্যু বিবাহ-বিচ্ছে্‌ কর্মভার, উচ্চাশা প্রভৃতি কারণে আমরা মানসিক চাপের মধ্যে পড়ি। এই মানসিক চাপ আমাদের চাকরীতে অনেক প্রভাব ফেলে থাকে। কিন্তু জীবনের স্বাভাবিক নিয়মেই আমরা এই বিষয় গুলো এড়িয় যেতে পারিনা। আমরা যা করতে পারি তা হল কিছু সময়ের জন্যে হলেও তা ভুলে থাকতে পারি অথবা সোজা-সাপ্টা পথ বেছে নিতে পারি কিছুটা স্বস্তি পাওয়ার জন্য।

মর্গান এবং অন্যান্য বলেন। “ Stress is an internal state which can be caused by physical demand of the body ( disease conditions, exercise, extreme temperature and the like) or by environmental and social situations which are evaluated as potentially harmful , uncontrollable, or exceeding our resources for coping.”

সাইকোলজিস্টদের এর মতে, মানসিক চাপ বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ঝুঁকির কারণ হতে পারে। তাই নিজেকে ভালো রাখতে চাপ কমানো জরুরি। এছাড়া বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত গবেষণা করে দেখা গেছে মানসিক চাপের ফলে যে সমস্যাগুলো সৃষ্ট হয় তা পরবর্তীতে ভয়াবহ রূপ নেয়।

একদিকে যেমন রয়েছে মানসিক চাপ, অন্যদিকে রয়েছে এই চাপের প্রতিক্রিয়া। আমাদের নিত্যদিনের রুটিনে কিছু পরিবর্তন আনলেও আমরা এই চাপ অনেকটা কমাতে সক্ষম। যেমন ধরে নেই-

* প্রয়োজনমত ঘুমান
* নিয়মিত ব্যায়াম করুন অথবা ৩০ মিনিটের জন্য হলেও সকালে হাঁটুন
*সকালে হাল্কা নাস্তা করুন
*সময়ানুবর্তিতা মেনে চলুন
* নিজের কাজগুলো গুছিয়ে নিন যাতে কাজগুলো চাপ সৃষ্টি করতে না পারে
*দুপুরে ঠিক সময়ে খাবার খান।
* অফিসে বা কর্মস্থলে সহকর্মীদের সাথে মত-বিনিময় করুন
* অফিসের কাজগুলো ঠাণ্ডা মাথায় বুঝে নিন
* অফিস শেষে কাজ থেকে দূরে থাকুন
*বন্ধু ও আপনজনদের সাথে নিয়মিত সময় ব্যয় করুন
*নিজের জন্যে কিছু সময় আলাদা করে রাখুন
*রাতের আহার শেষে একটু হাটুন এবং ঘুমোনের আগে বই পড়ার অভ্যাস করুন

করণীয়ঃ
১।ঘুম শরীরকে সতেজ করে।নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করে। ঘুমাতে যাওয়া এবং ঘুম থেকে উঠার একটি নির্দিষ্ট রুটিন তৈরি করুন। নিয়মিত সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুমানো মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করবে।

২।মানসিক চাপে থাকলে দেখা যায় খাওয়া দাওয়ার উপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব পরে। অনেকেই খাওয়া দাওয়া বন্ধই করে দেয় প্রাই। তবে এটা ঠিক নয়।এ সময় পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করুন। ভিটামিন এ এবং ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খান। পাশাপাশি গ্রিন টি এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার খান।

৩। ব্যায়াম মানসিক চাপ তৈরি কারী হরমোনের নিঃসরণ কমায়। সুখি হরমোন হিসেবে পরিচিত এনডোরফিনের মাত্রা বাড়ায়। তাই যত ব্যস্তই থাকুন না কেন একটু সময় বের করে ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন।

৪। কাজে বিরতি নিন। একটানা কাজ আপনার কাজের পরিবেশকে বিরক্তিকর করার পাশাপাশি মানসিক চাপও বাড়াবে। যতই কাজের চাপ থাকুক না কেন, কাজ থেকে কিছুটা বিরতি নিন।

৫। চাকরির আনন্দের বিষয়টি খুঁজে বের করুন। বেশিরভাগ মানুষ চাকরির নেতিবাচক দিকটির কথা চিন্তা করে মানসিক চাপে থাকে।ইতিবাচক দিকটি খুজে বের করে মন দিয়ে কাজ করুন।

৬। আপনার অফিসে কর্মরত ব্যাক্তিদের আপনার বন্ধু ভাবুন , আপনার প্রতিযোগী নয়।তাদের সাথে কিছু সময় কাটান। আপনার সমস্যাগুলো তাদের কাছে তুলে ধরুন।

৭। প্রতিদিনের কাজ থেকে একটু বিরতি নিয়ে দূরে কোথাও ঘুরে আসুন।জীবনে পরিবর্তন আসবে এবং সস্তিবোধ করবেন।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.