177799

শাকিব খান ও অপু বিশ্বাসের বন্ধুত্ব, প্রেম-বিয়ে অতঃপর সন্তান, জানুন শুরু থেকে শেষ…

রুপালি পর্দায় শাকিব অপুর একসঙ্গে পথচলা শুরু ২০০৬ সাল থেকেই। ওই বছর তারা জুটি বেঁধে কাজ করেন এফ আই মানিক পরিচালিত ‘কোটি টাকার কাবিন’ ছবিতে। প্রথম ছবিতেই এই জুটির বাজিমাত। ছবিটির সফলতা তাদের ঢালিউডে সফল জুটির আসন গড়ে দেয়। তারপর একাধারে একসঙ্গে পথচলা। মানে স্থায়ী জুটির তকমা পেয়ে যান তারা। একসঙ্গে জনপ্রিয় জুটিও হয়ে ওঠেন তারা। শাকিব-অপুর ছবি মানেই নির্মাতার ভরসা, দর্শকের গ্রহণযোগ্যতা। এই পর্দা জুটি যখন পর্দার প্রেম নিয়ে এমনই সফলতায় ভাসছিলেন তখন সেই ভালোবাসার রং তাদের মনেও এসে লাগে। যতই রুপালি পর্দায় হাঁটা ততই ভালোবাসার রংধনু দুজনের মনকে আরও রাঙিয়ে তুলতে শুরু করে। কে কাকে আগে ভালোবাসার কথা বলেছিলেন। এমন প্রশ্নে চোখেমুখে লজ্জার আবির মেখে অপু বিশ্বাস বলেন, আমি তাকে ভালোবাসলেও তা বলতে পারছিলাম না। অপেক্ষায় প্রহর গুনতাম কখন সে আমাকে আমার সবচেয়ে ভালোলাগার কথাটি শোনাবে।

যেভাবে ভালোবাসার কথা বলা হলো :

অপু দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বলতে শুরু করেন কীভাবে শাকিব তাকে প্রপোজ করেন। ২০০৮ সালের ১৭ এপ্রিল। আমরা দুজন সারা দিন আশুলিয়ার প্রিয়াঙ্কা শুটিং স্পটে সোহানুর রহমান সোহান ভাইয়ের ‘কথা দাও সাথী হবে’ ছবির কাজ করলাম। কাজ শেষে শাকিব বলল, তোমার সঙ্গে জরুরি কথা আছে, সন্ধ্যায় অবশ্যই দেখা করতে হবে। তার মুখ থেকে যে কথাটি শোনার জন্য এতদিন অধীর হয়ে ছিলাম মনে হলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ বুঝি আজ এসে গেল। শুটিংয়ের সময় মা থাকতেন আমার সঙ্গে। মার কাছ থেকে লুকিয়ে দেখা করতে গেলাম শাকিবের সঙ্গে। তার কালো হ্যারিয়ার গাড়িতে চড়ে আশুলিয়ার পথ ধরে এগিয়ে চলেছি আমরা। আর আমার হৃদকম্পনের মাত্রা বেড়েই চলছে। এ কথা সে কথা বলতে বলতে এক সময় ও বলল আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই এবং তা আগামীকালই। মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি পাওয়ার আনন্দে মনটা আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে নেচে উঠল। নিঃসংকোচে তার হাতে হাত রাখলাম। শাকিব বুকে টেনে নিল আমাকে। আমরা দুজন মুহূর্তেই এক হয়ে গেলাম। মনে হলো এ বাঁধন কখনো যাবে না ছিঁড়ে। এমন সরল প্রাপ্তির আনন্দে প্রথমে কৃতজ্ঞতা জানালাম সৃষ্টিকর্তাকে। তারপর হাজির হলাম মিরপুরের শাহ আলী মাজারে। সেখান থেকে দোয়া নিয়ে নতুন দিনের মহানন্দে চলে গেলাম যার যার বাড়িতে।

যেভাবে বিয়ে হলো :

১৮ এপ্রিল শুক্রবার। সকাল থেকে অন্যরকম উত্তেজনায় কাঁপছি আমি। আনন্দ আর নতুন জীবনে পা রাখার উত্তেজনা এটি। আমার বাসা তখন মিরপুরে। আমার বড় বোন আমার বন্ধুর মতো। সুখ-দুঃখসহ সবকিছুই তার সঙ্গে শেয়ার করা যায় নিঃসংকোচে। বোনকে বললাম পারলারে যাব, আমার সঙ্গে যেতে হবে। মা শুনে বললেন— কখনো পারলারে যেতে কাউকে তোমার প্রয়োজন হয় না। আজ কেন ওকে ডাকছ? কিছু বললাম না। বোন আমার সঙ্গে যেতে রাজি হলো। সঙ্গে জামাইবাবু মানে দুলাভাইও সাথী হলেন। সকাল সাড়ে ১০টায় ঘর থেকে বের হলাম। যেতে যেতে গাড়িতে বোন আর জামাই বাবুকে আসল কথা বললাম। বোন তো রেগেমেগে আগুন। তার কথায় এটা কিছুতেই সম্ভব নয়। সবচেয়ে বড় বাধা হলো ধর্ম। অনেক কেঁদে কেটে বোনকে বোঝালাম। শেষ পর্যন্ত ওর মন গলল। পথে বসুন্ধরা শপিংমলের সামনে থেকে প্রযোজক মামুনুজ্জামান মামুনকে গাড়িতে তুলে নিলাম। তার হাতে দুটি মালা। দিদি ডায়মন্ডের একটি ফিঙ্গার রিং কিনে নিলেন শাকিবের জন্য। শাকিবের গুলশানের বাসায় এসে হাজির হলাম। এখানেই বিয়ে হবে আমাদের।

শার্ট-প্যান্ট পরেই বিয়ে করতে যাই :

বাসা থেকে শার্ট প্যান্ট পরেই বিয়ে করতে রওনা দেই। মামুন মালা ও শাকিবের পক্ষ থেকে আনা একটি ডায়মন্ড ফিঙ্গার রিং শাকিবের হাতে তুলে দেন। শাকিব নিজেই পছন্দ করে নজরকাড়া লেহেঙ্গা কিনে রাখে। সেই লেহেঙ্গা পরেই বিয়ে করলাম আমি। শাকিবের পরনে ছিল সাধারণ পায়জামা পাঞ্জাবি। বিকাল সাড়ে ৩টায় বিয়ে পড়ানো হলো।

কাজী বললেন ধর্ম আর নাম পাল্টাতে হবে :

শাকিবের চাচাতো ভাই মনির শাকিবের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ থেকে কাজী নিয়ে এলেন। বিয়ে পড়াতে গিয়ে কাজী বললেন ধর্ম আর নাম পাল্টাতে হবে। ধর্ম পাল্টালাম। এবার নামের পালা। সবাই কী যেন একটা নাম ঠিক করলেন। আমি বললাম অপু নামটি পাল্টাতে পারব না। কারণ এটি আমার দাদুর দেওয়া আদরের নাম। ঠিক হলো অপু নামটি রেখে এর সঙ্গে ইসলাম আর খান যোগ করা হবে। অপু বিশ্বাস থেকে হয়ে গেলাম অপু ইসলাম খান। বিয়েতে উকিল বাবা হলেন প্রযোজক মামুন। আর মনির সাক্ষী। শুরু হলো আমার গোপন আর নতুন পরিচয় মিসেস শাকিব খান।

মা সন্দেহের চোখে দেখলেন :

বাসায় ফিরে এলে মা হঠাৎ বলে বসলেন ‘কিরে তোকে আজ অন্যরকম লাগছে কেন? মনে হচ্ছে না তুই সেই চেনা অপু’। বুঝলাম মায়ের মন বলে কথা। তাকে ফাঁকি দেওয়া অসম্ভব। তারপরেও সত্যি ঘটনা চেপে গেলাম।

মা-বাবা যখন জানলেন :

বেশ কয়েক মাস পর বোন প্রথমে বাবাকে জানালেন। আমার বাবা খুবই সহজ-সরল চুপচাপ স্বভাবের মানুষ ছিলেন। তিনি বললেন মেয়ের সুখই আমার সুখ। ও যদি মনে করে এই বিয়েতে সে সুখী হবে আমার বলার কিছু নেই। মাকে যখন জানানো হলো মাতো খেপে অগ্নিমূর্তি ধারণ করলেন। আমাকে মারধরও করলেন। বললেন যখন মা হবি বুঝতে পারবি সন্তানের জন্য মায়ের আদর কী জিনিস। এক সময় মা বিয়েটা মেনে নিলেন।

বিয়ের পার্টি

বিয়ের এক বছর পর মিরপুরে আমার বাসায় বিয়ের পার্টির আয়োজন করা হলো। পার্টিতে শাকিবের মা-বাবা, আমার মা, বোন, ভগ্নিপতি আর কাকুসহ কাছের মানুষরা উপস্থিত হলেন। শাকিবের বাবা আমার মায়ের হাতের রান্না খুবই পছন্দ করতেন। তাই পার্টির খাবার রান্না করলেন মা।

আমরা যেভাবে সংসার করতাম

আমি কিছুদিন নিজের বাসা আর কিছুদিন শাকিবের বাসায় থাকতাম। শাকিবের বাসায় ঢুকতে গেলে কেউ যেন দেখে না ফেলে সে জন্য অনেক রাতে যেতাম। অথবা বোরকা পরে তার বাসায় ঢুকতাম আর বের হতাম। এভাবেই চলত আমাদের টোনাটুনির সংসার জীবন।

দুঃখ, হানিমুনে যেতে পারলাম না

বিয়ে তো একবারই হয়। হানিমুনও একবার। কিন্তু ছবির কাজের চাপে হানিমুনের মধুর স্মৃতি থেকে বঞ্চিত হলাম আমরা। এই দুঃখ কোনোদিনই ভুলতে পারব না।

আরও দুঃখ আছে :

আমার দুঃখ এখানেই শেষ নয়। বাচ্চা গর্ভে আসার পর থেকে জন্মদান পর্যন্ত যে আনন্দ থাকে একটি মেয়ের জীবনে তাও উপভোগ করতে পারিনি। একদিকে দর্শকের জন্য আত্মত্যাগ অন্যদিকে শাকিবের সঙ্গে মনোমালিন্যের কারণে একাই হাসপাতালে ভর্তি হওয়া, সিজারিয়ানের সময় হাসপাতালের বন্ডে নিজেই সাইন করা এসব কষ্ট কখনই মন থেকে মুছে ফেলতে পারব না। তারপরেও বলব শাকিব আমার স্বামী, আমাদের সন্তানের বাবা আর চলচ্চিত্রের শীর্ষ নায়ক। সবার সংসারে ভুল বোঝাবুঝি হয়। আমাদেরও হয়েছে। তাই বলে কেউ তাকে ভুল বুঝবেন না। আমরা আবার একসঙ্গে কাজ করব। সবাই আগের মতোই আমাদের ভালোবাসবেন আর দোয়া করবেন।উৎস : বিডি প্রতিদিন।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.