177413

অং সান সু চি: মানবাধিকার রক্ষার নায়ক থেকে বিচ্ছিন্নতার প্রতীক

সুলতানা সাকি: ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় আততায়ীর হাতে নিহত হন জেনারেল অং সান। সেই তখন থেকে শুরু হয়ে প্রায় ছয় দশক মিয়ানমারে চলে একগুয়ে সামরিক শাসন। সেই অং সানের সন্তান অং সান সু চি’র হাত ধরেই ফের গণতন্ত্র ফেরে মিয়ানমারে। প্রায় দুই দশক গৃহবন্দি থাকা সু চি ব্যাপক জনসমর্থনে দেশটির শাসন ক্ষমতার কাছাকাছি চলে আসেন। তবে জান্তা সরকারের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে সারা বিশ্বের কাছে ’গণতন্ত্রের মানসকন্যা’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া সেই সু চিই ক্ষমতায় আসার পর নির্বিকার অবস্থানের জন্য সমালোচিত হচ্ছেন। রোহিঙ্গাদেও ওপর হত্যাযজ্ঞ নিয়ে মুখ চেপে থাকায় তার অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে নানা প্রান্তে।

রাখাইন রাজ্যে ’সাম্প্রদায়িক নির্মূল’ অভযান চলছে কিনা এমন প্রশ্নে জবাবে সুচির উত্তর স্পষ্টতই ‘না’। বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি রাখাইনের পরিস্থিতিকে ’ভিন্নভাবে’ ব্যাখ্যা করতেও পিছ পা হননি। রাখাইনে ‘মুসলিমরাই মুসলিমদের হত্যা করছে’ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। অথচ এই সুচিই নব্বইয়ের দশকে দক্ষিণ আফ্রিকায় কৃষ্ণাঙ্গদের ওপর নিপীড়নের খবর জানতে উদগ্রিব হয়ে থাকতেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে সর্বদা নিঃসংকোচে কথা বলতেন।

মানবাধিকার রক্ষা বিষয়ে আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি ও শান্তিতে নোবেল জয়ের পরও নিজ দেশে ব্যর্থ হয়েছেন কিনা, সেই প্রশ্নের জবাবেও পাশ কাটিয়ে গেছেন সুচি। ‘রাখাইনের অধিবাসিদের মধ্যে নানা বিভেদ রয়েছে এবং তারা এই বিভেদ কমানোর চেষ্টা করছেন’ বলে মন্তব্য করেন সু চি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলার সূত্র ধরেই রাখাইনে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সূত্রপাত বলে মনে করেন তিনি।

রাখাইনে নির্বিচারে হত্যা ও ধর্ষণের মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগেও নিশ্চুপ অবস্থান সু চির। তিনি জবাব দেন, মার্গারেট থ্যাচার বা মাদার তেরেসা নন, তিনি একজন রাজনীতিবিদ। রাজনৈতিক সমাধানেই তাদের আগ্রহ।

তবে নিরব অবস্থানের কারণে সূ চির জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়ার কথাও জানাচ্ছে সংবাদ মাধ্যমগুলো। বার্মিজদের মধ্যে এখনও তার প্রতি সমর্থন থাকলেও সংখ্যালঘুদের মধ্যে তার জনপ্রিয়তা অনেকটাই কমে গেছে বলে বিভিন্ন জরিপে জানা যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক ভাবেও একারণে সু চি কিছুটা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন বলে বিশেষজ্ঞরা অভিমত দিয়েছেন। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সমর্থনে সংবিধান পরিবর্তন করে প্রেসিডেন্ট পদে আসার পথ যদি তিনি সুগম করতে না পারেন তাহলে ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক সমর্থন পেতেও তাকে বেগ পেতে হবে বলে মনে করছেন সমালোচকরা।

সূত্র: বিবিসি।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.