174706

বিনা দোষে এক যুগ কারাগারে

নূসরাত জাহান: মোহামেদ রফিক শাহ, বয়স ৩৯ বছর। রফিক শাহকে নিয়ে তার বাড়িতে এক আনন্দের বন্যা বইছে। মা মেহমুদা ছেলেকে যেন কাছ ছাড়া করতেই চাইছেন না। কারণ এক যুগ পর পর ছেলেক ফিরে পেয়েছেন। বিনা অপরাধে ভারতের কুখ্যাত তিহার জেরে বন্দি ছিলেন রফিক শাহ। ভারতীয় পুলিশের ভুলের খেসারত দিতে হয়েছে তাকে।
কাশ্মীরের বাসিন্দা রফিক শাহকে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি নির্দোষ বলে আদালত মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দেন। বিনা অপরাধে তিনি গত এক যুগ কারাগারের অন্ধকারে কাটিয়েছেন। তার সঙ্গে আরেক কাশ্মীরি বাসিন্দা মোহাম্মাদ হুসাইন ফাজিলকেও মুক্তি দেন আদালত। ২০০৫ সালে দিল্লিতে সিরিজ বোমা হামলার মামলায় তাদের আটকে রাখা হয়েছিল। ওই হামলায় ৬৭ জন প্রাণ হারায়।

প্যানেল কোডের বিভিন্ন ধারা অনুযায়ী হত্যা, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনে রফিক শাহের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। কিন্তু কোনো অভিযোগই প্রমাণ করতে পারেনি পুলিশ। কাজেই আদালত তাকে বেকসুর খালাস দেয়। মুক্তি একদিন পর দক্ষিণ দিল্লি একটি হোটেলে রফিক শাহের সঙ্গে কথা বলেন আল-জাজিরার। এ সময় তিনি ১২ বছরের কারা জীবন ও নির্যাতনের বর্ণনা দেন।


রফিক শাহের চোখ লাল বর্ণ, কারণ সারারাত ঘুম হয়নি তার। বিছানা দেখিয়ে বলেন, ‘আমি সারা রাত ঘুমাতে পারিনি। কারণ বিছানা খুব বেশি নরম। যে মানুষ গত এক যুগ ধরে কংক্রিটের ওপর ঘুমিয়েছে, সে কিভাবে এতো নরম বিছানা ওপর ঘুমাবে?’
তিনি বলেন, ২০০৫ সালের ২১ নভেম্বর তাকে আটক করা হয়। সেই সময় তার বয়স ছিল ২৭ বছর। এখনও সেই দিনের কথা ভোলেননি রফিক। বলেন, ‘হঠাৎ করেই মধ্যরাতে আমার বাড়ির দরজায় জোরে জোরে কেউ ধাক্কা দিচ্ছিল। তাদের চিৎকারে বাড়ির সব লোক ঘুম থেকে ওঠে যায়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই দরজা খুলে দেওয়া হয়। অস্ত্র হাতে নিয়ে কয়েকজন বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে। তারা আমার চুল ধরে টেনে হিঁচড়ে বাড়ির বাইরে নিয়ে যায়। আমাকে মারতে থাকে। বাবা-মা তাদের থামাতে গেলে তাদেরও মারধর করা হয়। এরপর আমার চোখে কালো কাপড় বেঁধে গাড়িতে কেরে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে নিজেকে বিশেষ টাস্ক ফোসের ক্যাম্পে আবিষ্কার করলাম।’
তিনি আরো বলেন, পরবর্তী কয়েকদিন আমাকে দিল্লি হামলা নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এসময় ব্যাপক নির্যাতনও করা হয়। এভাবে ২০ দিন অকথ্য নির্যাতনের পর আমাকে তিহার জেলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখানেই প্রতিনিয়িত নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের লড়াই করতে হয়েছে আমাকে। এভাবে কেটে যায় এক যুগ। তাদের ভুলের খেসারত দিতে গিয়ে আমার জীবন থেকে হারিয়ে গেছে অনেকটা সময়। তবে দেরিতে হলেও বিচার পাওয়ায় সন্তুষ্ট রফিক শাহ।

সূত্র: আল-জাজিরা।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.