174434

ভারতীয় আধ্যাত্মিক গুরু এখন ইংরেজি বর্ণমালা!

নূসরাত জাহান: গত কয়েক বছর ধরে ভারতে নতুন ধরনের একটি প্রবণতা জন্ম নিচ্ছে। আধুনিক ধর্মনিরপেক্ষ মধ্যবিত্ত সমাজে ধর্মীয় রীতি-নীতি ধীরে ধীরে শিথিল হয়ে পড়ছে। অতীতে ভারতীয়রা জীবন নিয়ে ব্যক্তিগত উপদেশ বা পরামর্শের জন্য গুরু বা জ্যোতির্বিদের শরণাপন্ন হত আর এখন তারা ইংরেজি বর্ণমালার দ্বারস্থ হচ্ছে।
ভারতে সরকারিভাবে তালিকাভূক্ত গুরুত্বপূর্ণ ২০টিরও বেশি ভাষা রয়েছে। তবে এর মধ্যে ইংরেজিকেই সবচেয়ে গুরুত্ব ও সম্মান দেওয়া হয়। এমনকি ইংরেজি ভাষার ২৬টি বর্ণমালাকে জীবনের পথনির্দেশক হিসেবেও মনে করা হয়।
ধরুণ, আপনি কোনও ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন রেস্তোরাঁর মালিকের সঙ্গে কথা বলছেন তাকে বলতে শুনবেন, কয়েক বছর আগে আমি যখন ব্যবসা শুরু করি তখন আমি শিখেছিলাম তিনটা অ্যা এর কথা: স্বীকার করো (Acknowledge), ক্ষমা চাও (Apologise) ও কাজ করো (Act)।
ইংরেজি বর্ণমালার প্রতি ভারতীয়দের এ প্রীতি একেবারে সবস্তরে। রাস্তা থেকে শুরু করে একেবারে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, বলিউড থেকে রাজনীতির অঙ্গণ সব ক্ষেত্রেই এ প্রীতি চোখে পড়বে। ইংরেজি বর্ণমালার প্রতিটি বর্ণের এক বা একাধিক শব্দকে বেদবাক্যের মতো বানিয়ে নেওয়া হয়। অবশ্য কতটি শব্দ বানানো হবে তার কোনও নির্দিষ্ট গণ্ডি নেই। যে যার প্রয়োজনমতো শব্দ বানাচ্ছে। তবে সাধারণত তিনটি শব্দ ব্যবহার করতে দেখা যায়। আর মনে করা হয়, এতে জীবন-যাপন সহজ হয়ে যাবে।
যেমন এক জিমনেসিয়ামের মালিক তার জীবনের সাফল্যের মূলমন্ত্র করেছেন, তিনটি এফকে। আর তা হচ্ছে, ফুড, ফ্যাশন ও ফিটনেস। প্রত্যেক ধারাভাষ্যকার ও জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব তাদের বক্তব্যে বিশেষ বিশেষ ইংরেজি বর্ণমালার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।
এক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছেন খোদ ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দুই বছর আগে ভারতের জাতীয় সাফল্যের মূলমন্ত্রকে তিনটি ‘ডি’ অক্ষর দিয়ে বর্ণনা করেছেন তিনি। আর তা হচ্ছে, ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড (ভৌগলিক অখণ্ডতা), ডেমোক্র্যাসি (গণতন্ত্র) এবং ডিমান্ড ফর গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস (পণ্য ও সেবার চাহিদা)।
এরপর ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জিও তিনটি ‘ডি’ ও পাঁচটি ‘টি’-এর ওপর গুরুত্বারোপ করেন দেশটির দুই সংসদের ভাষণে। তিন ডি-র মধ্যে রয়েছে ডেমোক্র্যাসি, ডেমোগ্রাফিক ও ডিমান্ড। আর পাঁচটি টি-দিয়ে বুঝানো হচ্ছে, ট্র্যাডিশন, ট্যালেন্ট, ট্যুরিজম, ট্রেড ও টেকনোলোজি।
বলিউড তারকা দীপিকা পাড়ুকোনও তার সাফল্যের মূলমন্ত্রও করেছেন তিনটি ডি-কে। ডিসিপ্লিন, ডেডিকেশন ও ডিটারমিনেশন।
জনপ্রিয় লেখক চেতন ভগত সামনে এনেছেন তিনটি আই। সম্প্রতি ভারতে নোট নিষিদ্ধ করা নিয়ে একটি কলামে ভারতীয় রাজনীতির ক্ষেত্রে এই তিনটি আই-এর অবস্থান ব্যাখ্যা করেন। আর এই তিনটি আই হচ্ছে ইনটেনশন, ইনিশিয়েটিভ ও আইডিয়াস।
এমনকি আধ্যাত্বিক গুরুরাও ইংরেজি বর্ণমালার আশ্রয় নিচ্ছেন, তারাও পিছিয়ে থাকতে চান না। শ্রী শ্রী রবি শংকর তার ভক্তদের তিনটি পি অনুসরণ করতে বলেছেন। পারসেভারেন্স, প্যাশেন্স ও পসিবিলিটি। আর এক সাবেক গভর্নর তো ১৪টা সি-কে সামনে নিয়ে এসেছেন।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.