174311

মাকে হারনোর সেই ঘটনা ভোলেননি গিলান

নূসরাত জাহান: ঘটনা ৩০ বছর আগের। বেলজিয়ামের বন্দর ছাড়ার কয়েক মিনিটের মাথায় যাত্রীবাহী জাহাজ ‘হেরাল্ড অব ফ্রি এন্টারপ্রাইজ’ দুর্ঘটনায় পড়ে। দুর্ঘটনায় পড়ার ৯০ সেকেন্ডের মাথায় জাহাজটি ডুবে যায়। এতে ১৯৩ জন প্রাণ হারায়। অনেকে বেঁচেও যায়। তাদেরই একজন গিলান রাশব্রোক। তিনিই শোনালেন প্রিয় মানুষ হারানোর সেই দিনের কথা।

জাহাজ দুর্ঘটনা পড়া যেসব মানুষ প্রথম টের পেয়ছিলেন তাদের মধ্যে একজন গিলান। ঘটনার সময় তার বয়স ছিল ১৬ বছর। সেদিন গিলান তার মা, সৎ বাবা ও এক চাচাকে হারিয়েছিলেন। দুর্ঘটনা থেকে তিন ভাইসহ তিনি বেঁচে যান।

সেদিন স্মৃতি হাতড়ে গিলান বলেন, ‘জাহাজটি যখন চলতে শুরু করে তখন আমি সেটির ডেকে দাঁড়িয়েছিলাম। পানির দিকে তাকিয়েছিলাম। পানির প্রচণ্ড তোড় দেখে প্রথমে ভেবেছিলাম এটা আমার চিন্তার ভ্রম। কিছু সময়ের মধ্যেই জাহাজ এক পাশে কাত হয়ে যায়। জাহাজ ডুবতে শুরু করলে প্রথমে একটি মই ধরে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করি। কিন্তু পারছিলাম না। এরপর আমি পানিতে ঝাঁপ দেই। তখন জানতাম না পরিবারের সদস্যরা কে কোথায় আছে। আমার পায়ে একটি ভারী বুট ও গায়ে লম্বা কোট থাকায় সাঁতার কাটতে পারছিলাম না। তারপরও চেষ্টা করছিলাম। পানি এত ঠাণ্ডা আর নদীতে এত ঢেউ ছিল যে ঠিক মতো সাঁতরাতে পারছিলাম না ।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার পাশে এক নারী সাঁতার কাটছিলেন। তিনি একটি ছোট মেয়ের হাত ধরে ছিলেন। আমাদের মাথার ওপরই হেলিকপ্টার চক্কর দিচ্ছিল। কিন্তু আমাদের দেখতে পাচ্ছিল না। তাই আমি মাছ ধরার নৌকাগুলোর কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছিলাম। পরে তারাই আমাকে উদ্ধার করে তীরে নিয়ে এসেছিল। কিন্তু আমার পাশে থাকা সেই নারী ও বাচ্চার ভাগ্যে কি ঘটেছিল আমি জানতাম না। হয়তো তারাও মারা গিয়েছিল।’

মায়ের লাশ খুঁজে পাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাকে যখন তীরে আনা হলো তখন আশেপাশে অনেক লাশ পড়ে ছিল। তাদের মধ্যে আমার বাবা লাশও ছিল। আমার ছোট ভাইয়েরা মায়ের লাশ খুঁজে পায়। আমার বিশ্বাস হচ্ছিল না মা মারা গেছে। আমি তাকে খুব ভালোবাসতাম। মা মারা গেলো কিন্তু আমি কিছুই করতে পারলাম না। মা শুধু মা-ই ছিল না তিনি আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু ছিল। সেই রাতে ডেকে যাওয়ার আগে মা আমাকে কিছু টাকা দিয়েছিলেন। এরপর আমি তার দিকে কয়েক মিনিটের জন্য তাকিয়েছিলাম। সেই সময় আর কখনও ফিরবে না জানি।’
গিলান বলেন, ‘সেই দুর্ঘটনার রাতে আমি হঠাৎ করেই বড় হয়ে গিয়েছিলাম। সেদিন থেকেই আমি আমার সব কাজ নিজে করতে শিখে যাই। সেদিন থেকেই মায়ের জন্য আমি প্রার্থনা শুরু করি।’ সূত্র: বিবিসি।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.