174362

বাচ্চার জন্ডিস হলে

গাজী খায়রুল আলম:
বড়দের মতো, নানা কারণে বাচ্চারাও আক্রান্ত হয় জন্ডিসে, আক্রান্ত হয় এমনকী নবজাতকরাও। জন্ডিস কোনও রোগ নয়, রোগের উপসর্গমাত্রা।
এ থেকে বাঁচার রাস্তাটাও অতটা কঠিন নয়। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে জন্ডিসের নাড়ি নক্ষত্র।

কোনও কারণে রক্তে এই রঞ্জককণার পরিমাণ বেড়ে গেলে চোখের সাদা অংশ, হাত ও শরীরের নানা অংশ হলুদ হতে থাকে। মানুষের রক্তে বিলিরুবিনের স্বাভাবিক মাত্রা ০.১ থেকে ১ মিগ্রা.(প্রতি ১০০ মিলিলিটারে)। বিলিরুবিন এই মাত্রা ছাড়ালে তাকে জন্ডিস বলা যায়, তবে রক্তে বিরিরুবিনের মাত্রা ২ বা তার বেশি না হলে জন্ডিসের উপসর্গ শরীরে ধরা পড়ে না। বিলিরুবিনের মাত্রা যত বাড়বে, তত বেশি প্রকট হবে কামলা বা জন্ডিসের উপসর্গ।

রক্তের লোহিত কণিকা (R.B.C) বৃদ্ধ হয়ে পড়লে তা আমাদের লিভার, প্লীহা আর অস্থিমজ্জার মধ্যে ভাঙতে থাকে। এই ভাঙন প্রক্রিয়ায় তৈরি হওয়া বিলিরুবিন মিশে যায় রক্তে। লোহিত কণিকার ভাঙনের হার হঠাৎ করে বেড়ে গেলে রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা হঠাৎ করে বেড়ে যেতে পারে। যে কোনো নবজাতকের শরীরে প্রথম এক-দেড় মাস সময়কাল জুড়ে এরকম ঘটনা ঘটতে পারে। নবজাতকের এরকম জন্ডিস স্বাভাবিক বা শরীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় ফলাফল। নবজাতকের এরকম জন্ডিস সেরে যায় আপনা থেকেই, এর জন্য তেমন কোনও চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে না।

লিভার বা পিত্তথলির নানা সমস্যায় একজন মানুষ আক্রান্ত হতে পারেন জন্ডিসের উপসর্গে। বৃদ্ধ, বাতিল লোহিতকণিকা ভেঙে তৈরি হওয়া বিলিরুবিন লিভারে বিশেষ এক  উৎসেচকের সাহায্যে বদলে যায় এরকম ‘পরিবর্তিত’ বা ‘সংযুক্ত’ বিলিরুবিন পিত্তথলিতে Bile Canaliculi-র মাধ্যমে লিভার হয়ে পিত্তথলিতে ও সেখান থেকে অন্ত্রে চলে যায়। আরও খানিকটা বদলে গিয়ে অন্ত্র থেকে ওই বিলিরুবিন প্রধানত মলের সঙ্গে শরীরের বাইরে বেরিয়ে যায়, সামান্য অংশ বেরিয়ে যায় পেচ্ছাবের সঙ্গে।

সাধারণভাবে বড়দের মতো এদেশের বাচ্চারাও যে কারণে জন্ডিসের উপসর্গে বেশি আক্রান্ত হয় তা হল হেপাটাইটিস নামের ভাইরাসের সংক্রমণ। হেপাটাইটিস ভাইরাস হতে পারে নানা ধরনের(A,B,C,D,E ইত্যাদি)। হেপাটাইটিস‘বি’ ভাইরাস সাধারণভাবে শরীরে ঢোকে দূষিত রক্ত, যন্ত্রপাতি, সূঁচ( ইরঞ্জকশান, রক্ত বা ভ্যাকসিন নেবার ফলে অথবা কাটা জায়গায় দূষিত রক্তের সংসর্গে)-এর মাধ্যমে বেশির ভাগ সময় এরকম হলেও এর ব্যতিক্রম ঘটতে পারে, যেমন ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রে ‘এ’ ভাইরাস শরীরে ঢুকতে পারে রক্তের মাধ্যমে।

হেপাটাইটিসে আক্রান্ত সব মানুষই, বাচ্চারাও, খুব কাহিল হয়ে পড়ে ভাইরাসের দাপঠে। দুর্বল বাচ্চাকে বিশ্রামে রাখাটাই যুক্তিসঙ্গত। জন্ডিসের রোগির খাবারদাবার নির্বাচনে শ্বেতসার বা শর্করাজাতীয় খাবারের ওপর এখনও কিছুটা গুরত্ব দেওয়া হয়। শর্করা শরীরের দ্রুত পুষ্টির জন্য অপরিহারয। তাই বাচ্চা জন্ডিসে আক্রান্ত হলেও শর্করাজাতীয় খাবারের ওপর গুরত্ব দেওয়া দরকার।

১। একবারে ছোট বাচ্চা জন্ডিসে আক্রান্ত হলে অল্প অল্প করে বার বার শর্করাসমৃদ্ধ তরর খাওয়ানো যায়।

২। পরিস্রুত পানীয় জলে গ্লুকোজ মিশিয়ে খাওয়ানো যায়, খাওয়ানো যায় চিনি, মিছরি বা গুড় মিশিয়েও, শুধু দেখতে হবে মিষ্টিতে যেন কোনও অশুদ্ধি না থাকে।

৩। শর্করাজাতীয় খাবার বলতে শুধু গ্লুকোজ বা চিনি নয়, ভাত ডালসহ যে সব শর্করাজাতিয় খাবার আমরা নিত্য দিন খাই, তা থেকেও শরীরে গ্লুকোজ যায় অনেকটা।

৪। একবারে ছোট বাচ্চাকে দুধ বা জলের সঙ্গে বার বার চিনি বা গ্লুকোজ খাওয়াতে হলেও জন্ডিসে আক্রান্ত একটু বড় বাচ্চা শুধু চিনি গ্লুকোজের সরবত নয়, এ সবের পাশাপাশি ভাত, ডার, খিচুড়ি, শাকসবজি সবই খাবাতে হবে।

৫। খাওয়াতে হবে টাটকা ফল বা ফলের রসও। কারণ যে কোনও ফলেই থাকে নানা মাত্রার শর্করা, থাকে নানা ধরনের ভিটামিন ও খনিজ লবণ।

৬। আখ বা পাকা আমে বেশি শর্করা থাকে। তাই আখের রস ও পাকা আম খাওতে পারেন।

এছাড়া রোগ হলে তার চিকিৎসার চাইতে রোগ হবার আগেই রোগটাকে আটকে দেওয়া অনেক সহজ।এই রোগ প্রতিরোধে তাই নতুন ‘হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিন’ দিয়ে দিন।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.