173968

শিশুর অ্যানিমিয়া হলে

গাজী খায়রুল আলম: অ্যানিমিয়া নিয়ে বিভ্রান্তির শেষ নেই শিক্ষিত মানুষের মধ্যেও। বাংলা প্রতিশব্দ ‘রক্তস্বল্পতা’, যেন অ্যানিমিয়াতে কমে যায় শরীরের রক্তের পরিমাণ। বাস্তবে কোনও অ্যানিমিয়াতেই রক্ত কমে না, কমে রক্তের লোহিত কণিকা।(R.B.C)-র মধ্যে থাকা গুরত্বপূর্ণ উপাদান হিমোগ্লোবিন। আয়রন বা লোহা থাকে হিমোগ্লোবিনে, নিঃশ্বাসের সঙ্গে ঢোকে অক্সিজেনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে এই হিমোগ্লোবিন বদলে যায় অক্সি-হিমোগ্লোবিনে, রং যার লাল টকটকে। হিমোগ্লোবিন কমে গেলে রক্ত আর ততটা লাল থাকে না, কিছুটা ফ্যাকাসে হয়ে যায়। অ্যানিমিয়াকে ‘রক্তস্বল্পতা’ না বলে ‘ফ্যাকাসে রক্ত’ বলাটাই তাই বেশি যুক্তিসঙ্গত। এদেশের অনেক ছোট শিশুই অ্যানিমিয়ার শিকার হয়। ১৫ থেকে ৪৪ বছর বয়সের প্রজননশীল নারী আর পাঁচ বছর পর্যন্ত বয়সের শতকরা ৪০ থেকে ৫৫ শতাংশ অ্যানিমিয়ায় ভুগছে যে কোনও সময়।
এত বেশি শিশু অ্যানিমিয়ার শিকার, তবু বাচ্চাদের অ্যানিমিয়া নিয়ে সে ভাবে মাথা ঘামান না কেউই। দেশের দরিদ্র মানুষের অপুষ্টিতাড়িত বাচ্চারা অ্যানিমিয়ায় ভোগে বেশি। দুর্বলতা, ক্লান্তিবোধ, শরীরে সামান্য ফোলাভাব, মাথাঘোরা, চোখে কম দেখতে পাওয়া, অল্প পরিশ্রমেই শ্বাসকষ্ট-নিজের মতো নিজের বাচ্চাদের এরকম  উপসর্গকে গুরুত্ব দিন। বর্ষার কাদায় খালি পায়ে হাঁটতে হাঁটতে শিশুর পা দিয়ে হুকওয়ার্মের ডিম ঢুকে পড়ে শরীরে। সেটা বাসা বাঁধে অন্ত্রে। আকারে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র হলেও অন্ত্র থেকে রক্তশোষণে আর রক্ত টানতে টানতে অন্ত্রে ছোট ছোট ঘা তৈরি করে, সেগুলো থেকে রক্তক্ষরণে হুকওয়ার্মের ক্ষমতা অসীম। অপুষ্টি ও পেটের গোলমাল আর হুকওয়ার্ম-এর এক বা একাদিক কারণে আয়রনের অভাবে লোহার অভাবজনিত অ্যানিমিয়া-তে ভোগে এদেশের বেশির ভাগ শিশু।
শিশুর অ্যামিনিয়ায় করণীয়।

১। সুষম খাবারের পাশাপাশি নিয়মিত লোহ বা আয়রন খাওয়াতে হয় অ্যানিমিয়ার শিশুকে।
২। বাদাম, খেজুর, অঙ্কুরিত ডাল, মাছ, মাংস, ডিম-এসব রোজ খানিকটা খাওয়াতে পারলে বাচ্চার শরীরে লোহার অভাব সচারচর ঘটে না। যদি না বাচ্চার পেটের কোনও সমস্যায় একটানা ভোগে বা হুকওয়ার্ম বাসা বাঁধে তার অন্ত্রে।
৩। পেটে সমস্যা থাকলে সারাতে হবে আগে। নির্মূল করতে হবে হুকওয়ার্ম। নিয়মিত রক্তক্ষরণ হতে থাকলে সারাতে হবে তার কারণটাকে।
৪। ‘আয়রোফল’ বা ‘ফলিফার’ বড়ির মতো ফেরাস সালফেটের সঙ্গে ফলিক অ্যাসিড মেশানো ‘আয়রোফল চিলড্রেন’ অথবা ‘চিলড্রেন ফলিফার’ খাওয়ান।
৫। চকোলেটের মতো খেতে ভালো এমন আয়রন বড়িগুলো বাজারে এসেছে। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া তা খাওয়ানো যাবে না।
এর পাশাপাশি যে কোনো ঔষধ খাওয়ানোর আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.