173398

শক্ত করে শাড়ি পরা হতে পারে মৃত্যুর কারণ!

শায়েখ হাসান: শাড়ি পড়া বাঙ্গালী রমনীর একটি চিরাচরিত অভ্যাস এবং ঐতিহ্য। শাড়ির পরার ক্ষেত্রে একটি অপরিহার্য উপকরণ পেটিকোট পড়া। কিন্তু দিনের পর দিন বেশি শক্ত করে পেটিকোট পরার কারণে একজন মহিলার মৃত্যুও হতে পারে। লন্ডনভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম দ্যা টেলিগ্রাফ এক প্রতিবেদনে এই উদ্বেগজনক তথ্যটি জানিয়েছে।
 
সংবাদ মাধ্যমটি ২০১২ সালের জানুয়ারিতে প্রথম বিষয়টি প্রকাশ করে। সম্প্র্রতি এ বিষয়ে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তারা।
 
এতে বলা হয়েছে, দীর্ঘ দিন ধরে আঁটোসাঁটো করে সায়া পরার অভ্যাস থাকলে সাবধান। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, বহু বছর ধরে খুব শক্ত করে সায়ার দড়ি বাঁধলে হতে পারে প্রাণঘাতী ক্যানসার। যার পরিণতি হতে পারে মৃত্যু।
 
প্রতিবেদনে একটি সমীক্ষার বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, ভারতের প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকার মহিলাদের মধ্যে তলপেট ও পেটের উপরিভাগে ত্বকের ক্যানসারের প্রবণতা বাড়ছে। চিকিৎসকদের মতে, দীর্ঘ দিন ধরে পেটিকোট (কিছু স্থানে এটি ‘সায়া’ হিসেবেও পরিচিত) দড়ি অত্যন্ত শক্ত করে বাঁধার ফলে ত্বকে চুলকানি ও ক্ষত তৈরি হয়। বহু দিন ধরে তা উপেক্ষা করার ফলে শেষ পর্যন্ত মারাত্মক ত্বকের ক্যানসার দেখা দেয়। উপসর্গটিকে ‘শাড়ি ক্যানসার’ নামে চিহ্নিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
 
প্রসঙ্গত, শাড়ি ক্যানসার হচ্ছে এমন একটি রোগ, যা মহিলার ত্বকে হয়। এর ফলে তলপেটের ত্বকে নানান ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে আলসার হয়। একে ক্যানসার হিসেবে কেউ ভাবেনই না। যার কারণে রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে এটি অবহেলায় আরো খারাপ পর্যায় ধারণ করে। এক পর্যায়ে এটি মৃত্যুও ডেকে আনতে পারে।
 
উইকিপিডিয়াতেও এই শাড়ি ক্যানসারের উল্লেখ রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ভারতে এই রোগের সন্ধান পাওয়া গেছে। বিশেষ করে গরমে বেশিক্ষণ শক্ত করে শাড়ি তথা পেটিকোট পরে থাকলে তা ত্বকে চাপ পড়ে। এর থেকে তা শাড়ি ক্যানসারের দিকে মোড় নেয়।
 
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সমীক্ষায় এমন কিছু দৃষ্টান্তও পাওয়া গেছে। ক্যানসার বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ভারতের অধিকাংশ গ্রামে এই রোগের শিকার হচ্ছেন অসংখ্য নারী। মুম্বাইয়ের গ্র্যান্ট মেডিক্যাল কলেজের সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডক্টর জি ডি মতে, ‘শাড়ির নীচে পরা পেটিকোটের দড়ি দীর্ঘ দিন ধরে শরীরের একই জায়গায় পরার ফলে দড়ির ঘষা লেগে ত্বকে চুলকানি তৈরি হয়। শরীরের এই অস্বস্তি উপেক্ষা করলে এর পর ওই জায়গায় ত্বকের চরিত্রে পরিবর্তন ঘটে। খসখসে হয়ে শুকনো চামড়া উঠতে শুরু করে এবং ত্বকের রংও পাল্টে যায়। মহিলাদের কোমরের আশেপাশে ত্বকে এমন প্রদাহ সৃষ্টি হলে অনেক সময় তা মারাত্মক ক্যানসারে পরিবর্তিত হয়।’
 
তিনি আরো বলেন, ‘বেশির ভাগ ভারতীয় মহিলাদের কোমরের উপর শাড়ির দড়ি থেকে কালচে দাগ ও ত্বক ফেটে যাওয়ার মতো উপসর্গ দেখা যায়। বিষয়টি স্বাভাবিক বলে অনেকেই ধরে নেন। যার কারণে সময় মতো চিকিৎসা সেবা হয় না। ফলে প্রতিকারও পাওয়া যায় না।’
 
একই বিষয়ে ডক্টর বকশি বলেন, ‘সময় মতো গুরুত্ব না দেওয়ার ফলেই ক্রমে ক্যানসারের শিকার হন মহিলারা। এ জন্য সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই।’
 
কী ভাবে এই বিপদ এড়ানো যায়? তারও সমাধান বলেছেন ডক্টর বকশি। তিনি বলেন, ‘নিয়মিত পেটিকোটের দড়ি পাল্টে এবং তাকে চওড়া করে পরলে সমস্যা এড়ানো সম্ভব। এ ছাড়া দড়ি বাঁধলে তা একটু ঢিলেঢালা রাখা উচিত।’
 
তবে তাঁর মতে, ‘রাতারাতি এমন বিপদ ঘটে না। সমীক্ষায় আমরা দেখেছি, যে সমস্ত মহিলা এক নাগাড়ে ৩০ বছরের উপর পেটিকোট পরছেন, এবং গত ৫ বছর ধরে ত্বকের ওই অংশে চুলকানি অনুভব করছেন, তাঁদের সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। তাদের অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।’
 

সূত্র: দ্যা টেলিগ্রাফ

পাঠকের মতামত

Comments are closed.