173213

ইতিহাসের পাতায় একুশে ফেব্রুয়ারি

শ্রেয়সী ঘোষ: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধত্তোর কালে ভারতীয় উপমহাদেশে উপজাতীয়তাবাদী তৎপরতা প্রবল হয়ে ওঠার ফল স্বরূপ দ্বিজাতি তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা হয়। মুসলিম দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তান রাষ্ট্রের আত্মপ্রকাশ ঘটলেও পূর্ব পাকিস্তানের বাংলা ভাষাভাষি মুসলিম সমাজের চেতনা ও ঐতিহ্য পশ্চিম পাকিস্তানের অবাংলা ভাষাভাষি মুসলিম সমাজের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না।

১৯৪৮ সালে পাকিস্তান সরকার ঘোষণা করে যে উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রাভাষা। এই ঘোষণার প্রেক্ষাপটে পূর্ব পাকিস্তানে অবস্থানকারী বাংলাভাষি সাধারণ জনগনের মধ্যে গভীর ক্ষোভের জন্ম হয় ও বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। কার্যত পূর্ব পাকিস্তান অংশের বাংলাভাষি মানুষ আকস্মিক ও অন্যায্য এই সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে পারেনি। তাই বাংলা ভাষার মর্যাদার দায়িত্বে বাঙালি মুসলিম সম্প্রদায় ব্যাপক আন্দোলনে অবতীর্ণ হন।

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান সরকারের জারি করা ১৪৪ ধারা অমান্য করে ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের বহু সংখ্যক ছাত্র ও রাজনৈতিক প্রগতিশীল কর্মী মিলে মিছিল শুরু করে।মিছিলটি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের কাছাকাছি এলে পুলিস ১৪৪ ধারা অবমাননার অজুহাতে আন্দোলনকারীদের উপর গুলি বর্ষণ করে। শোকাবহ এই ঘটনার অভিঘাতে সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনার ফল স্বরূপ ক্রমবর্ধমান গণ আন্দোলনের মুখে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয়। এবং ১৯৫৬ সালের সংবিধান পরিবর্তনের মাধ্যমে বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি প্রদান করে।

১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো বাংলা ভাষা আন্দোলন, মানুষের ভাষা এবং কৃষ্টির অধিকারের প্রতি সম্মান জানিয়ে শহিদদের রক্তে রাঙা ২১ শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে ঘোষণা করে। যা বৈশ্বিক পর্যায়ে সাংবার্ষিক ভাবে গভীর শ্রদ্ধা ও যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে উদযাপিত হয়ে আসছে। এই ২১ শের অনুষ্ঠান কেবল আনুষ্ঠিকতা নয় এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে জাতীয় চেতনা-বাঙালি জাতিয়তাবাদের চেতনা। যখন কোনো ভাবাদর্শ বা চেতনা গোটা জাতীর অস্থিমজ্জার সঙ্গে মিশে যায় তখন তার প্রকাশ রীতির রূপ ধারন করে। মানুষের অন্তরে ২১শের আবেগ পৌঁছে দিতে ২১শের ঘটনা ও চেতনা সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করতে ২১শের শহিদ স্মরণের তাৎপর্যপূর্ণ ভুমিকা রয়েছে।

য়েছে।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.