আত্মমুগ্ধতায় ভোগা সেলফি প্রজন্ম : যেভাবে বড় করবেন শিশুকে

কোনো প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েই সান্ত্বনা পুরস্কার মিললো। একে নিয়েই সেলফি তুলে দিয়ে দেওয়া হলো সোশাল মিডিয়ায়। এ অভ্যাস চর্চার মাধ্যমে মিলেনিয়ালরা যেন আত্মবিশ্বাস ফিরে পায়। এভাবে তারা নিজেদের অবস্থানের শক্ত জানান দেয়। কিন্তু বর্তমানে প্রজন্ম সেলফিতে দারুণভাবে আসক্ত হয়ে পড়েছেন। কেবলমাত্র সেলফি চর্চার মাধ্যমে তারা আত্মমুগ্ধতায় বুঁদ হয়ে যাচ্ছেন।

ছোটদের মধ্যে আত্মকেন্দ্রিকতা একেবারে স্বাভাবিক বিষয়। বেড়ে ওঠার প্রক্রিয়া এটি। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাচ্চা বয়সী বা কিশোরদের আত্মকেন্দ্রিকতা বড়দের চেয়ে বেশি থাকে। এটা নতুন কিছু নয়। নিউ ইয়র্কের মনোবিজ্ঞানী এবং ‘পিসফুল প্যারেন্ট, হ্যাপি কিডস: হাউ টু স্টপ ইয়েলিং অ্যান্ড স্টার্ট কানেক্টিং’ বইয়ের লেখক ড. লরা মার্কহাম জানান, আধুনিককালের বাচ্চারা মারাত্মকভাবে আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছে।

সান ডিয়েগো স্টেট ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞানী জিন এম টুইনজি জানান, কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মাঝে আত্মমুগ্ধতার চর্চা অনেক বেশি বাড়ছে।

মার্কহামের মতে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে আত্মমুগ্ধতা পরীক্ষা করতে বিশেষ প্রশ্নের তালিকা ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এটা সঠিক পদ্ধতি নয়। কারণ এর প্রশ্নগুলো আসলে মানুষের আত্মবিশ্বাস সম্পর্কে ধারণা এনে দেয়।

জার্নাল অব এক্সপেরিমেন্টাল সোশাল সাইকোলজিতে বলা হয়, মাত্র ৫ বছর বয়সেই শিশুদের আত্মবিশ্বাস বড়দের মতোই থাকে। এটি সব সময় ভালো বিষয় হলেও শিশুরা যে পরিবেশে মানুষ হচ্ছে, সেখানে তারা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়ছে।

আরেক বিশেষজ্ঞ ড. ব্রাড রিডি বলেন, শিশুরা ক্রমেই আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছে। এর কারণ হলো বাবা-মায়েরা সন্তানদের জীবনে সীমাবদ্ধতা এনে দিতে পারছে না। লেখাপড়া থেকে শুরু করে শিশুদের বিভিন্ন কাজে অংশ নেওয়াতে আগ্রহী অভিভাবকরা। কারণ, বাবা-মায়েরা সত্যিকার বাবা-মা হতে চান। এক ভুল ধারণা থেকে তারা শিশুদের আত্মকেন্দ্রিকতার দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। ফলে শিশুদের আর অন্য কোনো মানুষকে চেনার প্রয়োজন পড়ছে না। তারা নিজের জগত নিয়েই ব্যস্ত।

অভিভাবকদের করণীয় : সন্তানকে লালন করা সহজ কথা নয়। তাদের এমনভাবে মানুষ করতে হবে যেন শিশুটি বড় হয়ে আত্মমুগ্ধ বা আত্মকেন্দ্রিক মানুষের পরিণত না হয়। এর জন্যে না করতে হবে-

১. সীমাবদ্ধতা ঠিক করে দিন : শিশুর বয়স অনুযায়ী তার কাজে সীমাবদ্ধতা আনুন। সমব্যথী থাকুন, কিন্তু সবকিছু করতে দেওয়া যাবে না। সব সময় যদি শিশুর চাহিদাকে সবার আগে গুরুত্ব দেন, তবে তাদের আচরণ বদলাতে থাকবে। তাই তাদের বুঝিয়ে দিন, সব কাজ করা যাবে না।

২. কর্ম আদর্শ তৈরি করুন : শিক্ষা অর্জন ও খেলাধুলার ওপর জোর দিলেও তার মাঝে কর্ম আদর্শ সৃষ্টির চেষ্টা করুন। এ বিষয়ে শিশুকে শিক্ষা দিন।

৩. তৃপ্ত হওয়ার শিক্ষা দিন : সুযোগ পেলেই যেকোনো বিষয়ে শিশুকে তুষ্ট হওয়ার শিক্ষা দিন। অল্পতেই খুশি থাকার শিক্ষা দেবেন। তারা যেন গরিব শিশুকে কিছু দেওয়া বা প্রিয় মানুষকে নিজের কিছু দেওয়ার চর্চা করে।

৪. অসুখী হওয়ার অনুভূতি পেতে দিন : সব সময় সুখ মেলে না। অসুখী জীবন সম্পর্কেও তাদের ধারণা থাকা প্রয়োজন। এতে করে কষ্ট সহ্যের ক্ষমতা সৃষ্টি হবে তাদের। এভাবেই শিশুরা সব বিষয়ে প্রাণবন্ত থাকতে শেখে।

৫. তাদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করুন : যে বাবা-মায়ের শিশুর প্রতি খুব বেশি ভালোবাসা প্রকাশ করেন, তারা ক্রমেই অন্যদেরকে ভিন্ন কিছু মনে করে। তারা নিজেদের অন্যদের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলেই ধারণা পায়। এতে করে ক্রমেই তারা আত্মমুগ্ধতায় ভোগা শিখতে থাকে।

৬. নিজের কাজ করতে শেখান : শিশুদের ছোটখাটো কাজ নিজেকেই করতে শেখাতে হবে। এতে করে তারা আত্মসচেতন হয়ে উঠবে। দায়িত্বশীলতা সম্পর্কে ধারণা পাবে।

৭. তারা হতে পারে অনন্য : আবার শিশুকে নানাভাবে কটাক্ষ না করে তাদের বৈশিষ্ট্যকে অনন্য বলে ধরে নিন। তাদের যে স্বভাবই ধারণ করুক না কেন, অভিভাবকের সচেতন পদক্ষেপ তাকে ধীরে ধীরে আদর্শ মানুষে পরিণত করতে পারে।
সূত্র : ফক্স নিউজ

পাঠকের মতামত

Comments are closed.