পবিত্র কাবা ঘরের ইতিহাস
কাবা ঘর অথবা বায়তুল্লাহ বিশ্বের প্রথম ঘর। বিশ্ব মুসলিমের নিকটে সবচেয়ে পবিত্র জায়গা এই কাবা। অনেকগুলো নামে নামকরণ করা হয় এই পবিত্র কাবা ঘরকে। কাবাঘর পুনর্নির্মাণ কারী নবী ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম, ইট-পাথরের জড়বস্তু কে ত্যাগ করে সত্তিকারের স্রষ্টার ইবাদতের যে মিসন আরম্ভ করেছিলেন, আল্লাহ রাব্বুল আল-আমিনের মহিমায় হাজার হাজার বছর পরে মক্কা বিজয় মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বদলে তা পূর্ণতা পায়।
ইসলামের ইতিহাস ও ঐতিহ্যে আজ জানবো পবিত্র কাবা ঘরের ইতিহাস
কাবা বায়তুল্লাহ বিশ্বের প্রথম ঘর। বিশ্ব মুসলমানের নিকটে পবিত্র জায়গা হলো এই কাবা ঘর। আল বায়েত,আল বায়তুল আতিক,আল বায়তুল হারাম, আল কিবলা অনেকগুলো নামে নামকরণ করা হয় পবিত্র কাবা ঘরকে। পৃথিবীর ভিন্ন ভিন্ন জাতী গত্রের পার্থক্য ভেঙে এবং রহমানের বান্দারা রবের অধিক অনুভব পেতে ছুটে আসেন এই পবিত্রতম ঘরের দিকে। এই জায়গায় এসে সবাই এক কাতারে শামিল হয়ে যায়। বিশ্বভ্রাতৃত্বের এক অনন্য নজির স্থাপিত হয় কাবা ঘর কে কেন্দ্র করে। পবিত্র কোরআনের ৫ টি সূরায় ৭বার কাবার বচন নান্দনিক নানা শব্দের বর্ণিত হয়েছে। হেরাররশ্মি চেতনায় উদ্বুদ্ধ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মার নিকটে কাবা অতএব পবিত্র স্থান। এই ঘরের দিকে মুখ করে দিনের ৫ প্রহরে বিশ্ব মুসলিম আপন সকল সুপে দেন দয়াময় আল্লাহর সামনে। বিশ্বাসী বান্দা মনের সবটুকু আবেগ, চোখের জল আর আকাশের দিকে হাত তোলে আল্লাহর নিকটে আকুতি জানান এই ঘরের দিকে ফিরেই। একদিকে ইবাদতের পবিত্রতম জায়গা অপরদিকে বিশ্ব সভ্যতার অন্যতম মুকুট কালো কাপড়ের সুসজ্জিত কাবা।
সামর্থ্যবান,সক্ষম সকল মুসলিমদের জন্য জীবনে একবার হলেও, এই ঘরের নিকটে এসে নিজেকে পুতপবিত্র করতে আসা ফরজ। কাবাকে ঘিরে সাতবার তাওয়াফ করা ও আল্লাহর আদেশ এর অন্তর্ভুক্ত। কাবা ঘরের পূর্ব কোণে থাকা হাজরে আসওয়াদ তথা কালো পাথরে চুমু খেয়ে গুনাহ মোচন করেন সারা বিশ্ব থেকে আসা আল্লাহর প্রিয় বান্দারা। কাবার অদূরে আছে আম্মা হাজেরা আর ছেলে ইসমাইলের ত্যাগ আর ভালোবাসার সাক্ষী জমজম কূপ। জমজম কূপের জলের আছে বিশেষত্ব। জমজমের জলের বিস্ময়কর স্বাস্থ্যগুণ প্রচুর প্রমাণ পেয়েছেন হাল জামানার আধুনিক গবেষকগণ।
আম্মাজান আয়েশা (রাঃ) বলেছেন, রাসূল (সাঃ) আপন সাথে পাত্র আর মশকে করে জমজমের জল বহন করতেন তা অসুস্থদের উপর ছিটিয়ে দিতেন তাদের পান করাতেন। [সুনানে তিরমিজি]
এতো এতো রহস্য অবাক এবং ধর্মীয় গুরুত্বসম্পন্ন কাবা কবে জন্ম হল?
কাবা ঘর প্রথম নির্মাণ
আদম ও হাওয়া আলাইহিস সালাম জান্নাতে শয়তানের ধোঁকায় পড়ে নেমে আসেন ধুলো মাটির পৃথিবীতে। বিশ্বের পরিবেশে এসে আল্লাহর নৈকট্য ঘাটতি অত্যন্ত করে অনুভব করেন আদম আলাইহিস সালাম। উনি বলেন, আল্লাহর কাছে- যেন সপ্তম আকাশেফেরেশতাদের ইবাদতের জায়গা বাইতুল মামুর এর অনুরূপ একটি ঘর পৃথিবীতে তৈরি করে দেন। অতঃপর ফেরেশতাদের সাহায্যে আদম আলাইহিস সালাম প্রথম কাবা ঘরের ভিত্তিস্থাপন করেন। আদম আলাইহিস সাল্লাম দ্বারা কাবা ঘর নির্মাণের দিন-তারিখ অথবা সাল সম্পর্কে নিশ্চিত ভাবে কিছুই জানা যায়নি।
কাবা ঘরের উৎপুত্তি বা সৃষ্টি
আধুনিক বিজ্ঞানের দরকারি খবর এর মতে, বিশ্বের সৃষ্টির গোড়াপত্তনের হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের কম্বাইন্ড জলের মলিকিউল জন্ম হয় আর একপর্যায়ে এই মলিকিউল সংখ্যায় বৃদ্ধি পেয়ে সমগ্র পৃথিবীটাই সমুদ্রের রূপ লাভ করে। সেসময় পর্যন্ত পৃথিবীতে কোন স্থল ভাগের জন্ম হয়নি। সর্বত্র কেবল-ই জল এবং পানি। ইসলামী ভূগোলবিদদের মতে, সেই অথৈই জলের মধ্যে বুদবুদ জন্ম হয়ে তা একটি জায়গায় ফুলে উঠছে আর এই প্রক্রিয়ায় ওখানে প্রথম স্থলভাগের জন্ম হয়। এই অংশটুকুর অবস্থান বিশ্বের একদম কেন্দ্রে। এবং এই জায়গাটি হল কাবার জমিন। পরবর্তীতে এই জমিকে কেন্দ্র করে স্থল ভাগ বিস্তীর্ণ লাভ করে আর সমগ্র জন্ম মহিমান্বিত কাবাকে কেন্দ্র করেই গড়ে ওঠে।
কাবা ঘরের আকৃতি
আধুনিক বিজ্ঞানের ভোগৌলিক গবেষণায় উঠে আসছে যে, কাবার অবস্থান বিশ্বের একদম কেন্দ্রে। উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ড.খালিদ বাবতিনের গবেষণায় দেখা গেছে, সৌদি আরবে অবস্থিত পবিত্র কাবা ই বিশ্বের কেন্দ্রবিন্দু। কাবাঘরের বর্তমান কাঠামো কিউবিকাল অথবা বর্গাকার। স্বাবাবিকের চেয়ে উঁচু হওয়ায় এই ধরনের কাঠামোকে আরবি ভাষায় বলা হয় কাবা। অতীতে কাবার অবকাঠামো ছিল ধনুক অথবা ডী আকৃতির। ইবরাহীম আলাইহিস সালামের পুনর্নির্মাণ কাবাঘর ধনুক অথবা ডী আকৃতি ছিল। পরবর্তীতে মক্কার কুরাইশ কুল কাবা সংস্কারের সময় ধনুক অথবা ডী অংশটি বাদ দিয়ে সেটিকে চতুর কোন আকৃতির করে ফেলেন। তবে ডী অংশটিকে কাবাঘরের ভাগ হিসেবেই ধরা হয়। যা হাতিমে কাবা নামে পরিচিত।
কাবা ঘরের সংস্কার
মূলত কুরাইশরা একপর্যায়ে কাবা ঘর ভেঙে পুনরায় পরিবর্তন করতে আরম্ভ করেছিল। সংস্কারের জন্য চাঁদা তোলা হয়, এই শর্তে যেন সবাই বৈধ উপার্জন থেকে চাঁদা দেয়। ডী অংশসহ পুনর্নির্মাণ করার মতোই টাকাপয়সা সেসময় তারা সংগ্রহ করতে পারেনি বলে ডী ব্যতীতই কাবা ঘর সংস্করণ পরিপূর্ণ হয়। বাবা আদম আলাইহিস সালাম এর ভিত্তি নির্মাণের পর দীর্ঘকাল কাবা ইবাদত হয়েছে। তারপর নূহ আলাইহিস সালামের মহাপ্লাবনে কাবার স্থাপনাকে আসমানে তুলে নেওয়া হয়। একপর্যায়ে পলিমাটি জমে কাবার ভিত্তির অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যায়। মহাপ্লাবনের ২৬০০ বছর পর মুসলিম জাতির বাবা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম আল্লাহর আদেশে ছেলে ইসমাইলকে নিয়ে এই ঘরের পরিবর্তন আরম্ভ করেন।
সুরা বাকারার ১২৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, এবং স্মরণ কর যখন ইব্রাহিম আর ইসমাইল কাবাঘরের ভিত্তি তুলেছিল, সেসময় প্রার্থনা করলো, হে মোদের প্রতিপালক! মোদের পক্ষ থেকে কবুল করো, অবশ্য তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞাতা। [সুরা বাকারার আয়াত ১২৭]
ইবরাহীম আলাইহিস সালাম কাবা ঘর নির্মাণ করতে জগত ঘুরে বিশ্বের ঐতিহাসিক পাঁচটি পর্বত থেকে মাটি সংগ্রহ করেন। হেরা,জুদি,তূরে জেতা,লুবনান পর্বতসমূহ। অতঃপর উনি ফেরেশতা জিব্রাইল আলাই সালাম এর নকশায় কাবা পুনর্নির্মাণ করেন। কাবার উচ্ছে নির্মাণ কার্য করার জন্য প্রভু তাআলার বেহেশত থেকে একটি স্বয়ংক্রিয় পাথর প্রেরণ করেন ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এর কাছে। এই পাথরে আরোহন করে উনি কাবার উপরের অংশের কার্য পরিপূর্ণ করেছেন। তার ইচ্ছামত পাথরটি ওঠানামা করত। জান্নাতি পাথরে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এর পায়ের ছাপ বসে যায় এখনও এই পাথরটি মাকামে ইব্রাহিম নামে কাবা চত্বরে সংরক্ষিত আছে।
কাবা নির্মাণের পর প্রভুর আদেশে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম আবি কুবাইস পাহাড়ে আরোহণ করে পৃথিবীবাসীর নিকটে কাবা প্রাঙ্গণে হজের ডাক করেন। নবী ইব্রাহিম আলাইহিস সালামের পর কুরাইশ কুল কাবা ঘর পরিবর্তন করেন। একইভাবে মোট ১২ বার কাবা ঘরের পরিবর্তন হয়েছে। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পর ৬৪ হিজরীতে আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়ের আর ৭৪ হিজরীতে হাজ্জাজ ইবনে ইউসূফ কাবাঘরের সংস্কারের সময় কাবার দরজা পুনর্নির্মাণ করেন। ১০৪০ হিজরীতে উসমানীয় খলিফা চতুর্থ মোরাকাবার পুনর্নির্মাণ করেন। ১৪১৬ হিজরীতে কাবার বাইরের দেয়াল আর সাদ,খুঁটি পরিবর্তন করা হয়। যতবারই কাবাঘরের অস্তিত্ব বিলীন হয়েছে তার ভিত্তি কখনোই ধ্বংস হয়নি। সর্বশেষ ১৯৯৬ সালে কাবার পুনর্নির্মাণ করা হয়।
কাবা ঘরের আয়তন কত
সৌদি গেজেটের তথ্যমতে কাবা ঘরের উচ্চতা পূর্বদিকে ১৪ মিটার, পশ্চিম দিকে ১২.১১ মিটার, জবাব দিকে ১১.২৮ মিটার আর দক্ষিণ দিকে ১২.১১ মিটার। কাবা ঘরের ২টি দরজা ছিল। একটি দিয়ে প্রবেশের জন্য এবং অন্যটি দিয়ে বের হওয়ার জন্য। এবং ছিল একটি জানালা। বর্তমানে একটি দরজায় রাখা হয়েছে ভূমি থেকে আড়াই মিটার উচ্চতায় আছে কাবার দরজা। এটির দৈর্ঘ্য ৩.০৬ আর প্রস্থ ১.৬৮ মিটার। দরজাটি বাদশা খালিদ ২৮০ কেজি স্বর্ণ দিয়া তৈরি করে উপহার দেন।
কাবা ঘরে মূর্তি পূজা
প্রাক ইসলামী যুগে কাবা ঘরে মূর্তি পূজা হয়েছে ব্যাপকভাবে। জাহিলী যুগে পবিত্র কাবায় উজ্জা,লাথ,মানাথ সহ মোট ৩৬০ জন ব্যক্তির ভাস্কর্য অথবা মূর্তি দেখে সেগুলোর পূজা করা হতো। রোজ একটি করে গুরুত্বপূর্ণ গুরুত্বপূর্ণ মূর্তির পূজা করা হতো। এভাবেই তাদের মাঝে রোজ মাস আর বছরের ক্ষণগণনার চালু ছিল। ৩৬০ টি মূর্তি পূজা পরিপূর্ণ করার বদলে তারা একটি বছর পুরা করতে। আরবি সাহিত্যের উন্নতি আর সমৃদ্ধিতে ও কাবার ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। কাবাকে কেন্দ্র করে কবিদের ওকাজ মেলাও ইতিহাসে প্রশিদ্ধ। সেই জাহেলী সভ্যতা রাইটার শাদ্দাদ, ইমরুল কায়েস,কোচ ইবনে আইডার মতোই কবির খ্যাতি পাওয়া যায়। নারীর দৈহিক আকৃতি, যুদ্ধ, মদ এসব ছিল তাদের সাহিত্যের উপজীব্য। সেরা কবিদের কবিতা কাবার গায়ে টানিয়ে দেয়া হতো। যে কারণে সারা বিশ্বের মানুষের নিকটে সেসময় ছিল মহিমান্বিত, অতএব সারা পৃথিবীতে থেকে মানব আসতো। এবং একইভাবে কাবায় দেয়ালিকায় প্রকাশিত কবিতা গুলো ছড়িয়ে পড়তো বিশ্বের নানা প্রান্তে। সহজ করে বলতে গেলে, কাবার দেয়াল ছিল এখনকার বৈশ্বিক মিডিয়ার মতো অনেকটা।
কাবা ঘরের রহস্য
ইতিহাসে ঐতিহ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ রহস্যাবৃত কাবাকে ঘিরে কৌতূহলের যেন কমতি নেই বিশ্ববাসীর। ইসলামী সংস্কৃতির কেন্দ্রবিন্দু এই কাবার অলৌকিকতা আর রহস্যের ইতি নেই। মাকামে ইব্রাহিম, হাজরে আসওয়াদ, জমজম কূপ এসবই কাবা ঘরের অন্যতম রহস্য। কাবা ঘরকে ধ্বংস করতে এসে বিপন্ন হয়েছে অনেকেই পুনরায় সমূলে ধ্বংস হয়েছে বলেও ইতিহাসে অসংখ্য প্রমাণ বিদ্যমান।
কাবা ঘর ধ্বংসের চেষ্টা
মুসলিমদের আগেও একেশ্বরবাদী কিছু মানব কাবার দিকে ফিরে ইবাদত করত তবে দ্বিতীয় হিজরীতে তার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মাধ্যমেই মুসলিমদের কেবলা হিসেবে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আগমনের ৬০০ বছর পূর্বে ইয়েমেনে এক শাসক ছিল যার নাম তুব্বা হিমিয়ারি। তুব্বা হিমিয়ারির ছিল বিভিন্ন দেশ জয়ের নেশা। সে মদিনা জয় করে নজর দেয় মক্কার দিকে।
যেহেতু গোটা বিশ্বের সবাই মক্কায় আগমণ করো সেহেতু মক্কা দখলে নিয়ে কাবা ঘর ভেঙ্গে দিয়ে গোটা পৃথিবীকে তার শক্তিমত্তার জানান দেয়া সহজ হবে। অতএব কাবায় আক্রমণের মনোবাসনা নিয়ে হিমিয়ারির বাহিনী মক্কায় আসার ৪২৬ কিলোমিটার পথের মাঝামাঝি পৌছলে প্রচন্ডরকম ঝড়ের কবলে পড়ে। এমনকি তারা কোনক্রমেই মক্কার দিকে অগ্রসর হতে পারছিল না। পরবর্তীতে তারা নিজেদের ভ্রান্তি বুঝতে পেরে প্রভুর নিকটে ক্ষমা চায় আর মক্কায় পৌঁছে সেখানকার অধিবাসীদের কে তিনদিন মেহমানদারী করার নিয়ত করে। পরবর্তীতে তারা নিজেদের ভ্রান্তি বুঝতে পেরে আল্লাহর নিকটে ক্ষমা চায় আর মক্কায় পৌঁছে সেখানকার অধিবাসীদের কে তিনদিন মেহমানদারী করার নিয়ত করে। একই পাশে হিমিয়ারী পবিত্র কাবাকে গিলাফ দিয়ে ঢেকে সুসজ্জিত করার ইচ্ছাও পোষণ করে।
ইয়েমেনেরই আরেকজন বাদশা ছিল আব্রাহা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্মের ৪০বছর পূর্বে হস্তী বাহিনী দিয়ে কাবা ভেঙে ফেলতে মক্কা এসেছিল। অতঃপর প্রভু তায়ালা গুরুত্বপূর্ণ পাখি পাঠিয়ে এই পবিত্রতম ঘরকে রক্ষা করেন। আব্রাহার বাহিনীর করুণ পরিণতির কথা সুরা ফিলে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে।
কাবা ঘরে প্রাকৃতিক বিপর্যয়
প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে ও কাবাঘর পড়েছে অনেক কয়েকবার। নূহ আলাইহিস সালামের মহাপ্লাবনে পলিমাটিতে ঢাকা পড়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সময়েও একবার বন্যার শিকার হয়েছিল কাবা। এমনকি ১৯৪১ সালে বন্যার ফলে কাবাঘরের নিচের ভাগ পানিতে তলিয়ে যায়। সে সময় মানুষের সাঁতার দিয়ে তাওয়াফ করার সিনারি দেখা যায়। মোরা এই মুহূর্তে কাবার দিকে তাকালেই কালো কাপড়ে সজ্জিত যে কাবাকে দেখতে পাই তা কিন্তু সবসময়ই কালো কাপড়ে মোড়ানো ছিল এমনটি নয়। বরং কোন কোন সময় কাবাকে সোনালী, রূপালী, সবুজে সাদা এইরকম রংয়ের গিলাফেও সাজানো হয়েছে। কাবার গিলাফ এ গুরুত্বপূর্ণ গুরুত্বপূর্ণ আয়াত দিয়ে ডিজাইন করা ক্যালিগ্রাফি মহিমান্বিত কাবাকে আরো প্রচুর দৃষ্টিনন্দন করেছে।
কাবা ঘরের গিলাফ ও দরজা পরিবর্তন
বাংলাদেশের মুক্তার আলম সিকদার নামের একজন ক্যালিগ্রাফার এর ক্যালিগ্রাফি ও জায়গা পেয়েছে কাবার গিলাফ। বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ও কাবার একখণ্ড গিলাফ উপহার হিসেবে পেয়ে টাঙানো হয়েছে। ইয়েমেনের শাসক তুব্বাই প্রথম কাঠের দরজা নির্মাণ করেন। ১৩৬৩ হিজরীতে কিং আব্দুল আজিজ বিন আব্দুল মেটালের দরজা তৈরি করেন এবং ১৩৯৮ হিজরীতে স্বর্ণের দরজা নির্মাণের উদ্যোগ নেন কিং খালিদ বিন আব্দুল আজিজ। শিল্পি মুনির আলজুন্দিন নকশায় শিল্পী আহমেদ বিন ইব্রাহিম বদর ২৮০ কেজি স্বর্ণ দিয়ে অনেক এক বছরে দরজাটি নির্মাণ করেন।
কাবা ঘরের ভেতরের অংশ
কাবা ঘরের ভেতরেও রহস্যের যেন ইতি নেই। তিনটা পিলারের ওপর একটি ছাদ রয়েছে। ভেতরে থাকা একটি সাদা বক্সের উপর সর্বদা রাখা হয় অথর অথবা সুগন্ধি। এছাড়া ভেতরে কিছু ধাতব পাত্র ঝুলানো হয়েছে। এর প্রত্যেকটিতে রাখা থাকেন বিশ্বের শক্তিশালী মানের যত সুগন্ধি। নবী ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম এর যুগে কাবা ঘরের উপরে কোনো ছাদ ছিল না, ডায়রেক আসমান দেখা যেত। পরবর্তীতে কিছু মানুষ কাবা ঘরের কিছু মালামাল দেয়াল ভেঙ্গে চুরি করে। অতএব মহিমান্বিত ঘরের নিরাপত্তা আর আদব রক্ষায় ছাদ নির্মাণ করা হয়। যারা পবিত্র কাবার মধ্যে প্রবেশের সুযোগ পান তারা ওখানে নফল নামাজ পড়েন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও ওখানে নামাজ পড়েছিলেন।
কাবা ঘরের ভেতরে বাইরে থাকা সম্মানিত উদাহরণ অনেক। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আমলে বন্যায় কাবা ঘরে থাকা হাজরে আসওয়াদ অথবা কালো পাথরটি কাবার ভাটি অঞ্চল ভেসে যায়। সকল গোত্রের সিদ্ধান্ত মোতাবেক গোত্র প্রতিনিধিরা একটি চাদরে করে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মধ্যস্থতায় এটি কাবাঘরে স্থাপন করেন। বর্তমানে এটি কাবা ঘরের পূর্ব কোণে কাঁচের মধ্যে সংরক্ষিত।
যেই পবিত্র কাবায় ৩৬০ টি মূর্তি দেখে অপবিত্র করে রেখেছিল জাহিলি সমাজ সেই কাবাকে তাওহীদের আলোয় দীপ্ত করেছেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তারুণ্যের নবী ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম ইট-পাথরের জড়বস্তু কে ত্যাগ করে, সত্তিকারের স্রষ্টার ইবাদতের যে মিসন আরম্ভ করেছিলেন, প্রভুর মহিমা হাজার হাজার বছর পরে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বদলে তা পূর্ণতা পায়। এবং এই মুহূর্তে প্রতিমুহূর্তে লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক ধ্বনিতে মুখরিত হয় কাবার প্রাঙ্গন।