276148

বাকিটা আল্লাহর হাতে- এভাবে বলা কি শিরক ?

প্রশ্ন: আমরা চেষ্টা করতে পারি, বাকিটা আল্লাহর হাতে। এভাবে বলা কি শিরক ?

উত্তর: না, এভাবে বলা শিরক নয়। চেষ্টা করা বান্দার কাজ। বান্দা তাই করবে।

পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, وَأَنْ لَيْسَ لِلْإِنْسَانِ إِلَّا مَا سَعَى وَأَنَّ سَعْيَهُ سَوْفَ يُرَى

মানুষ যা চেষ্টা করে তাই পায়। তার চেষ্টার ফল অচিরেই প্রকাশ পাবে। (সূরা নাজম, আয়াত: ৩৯-৪০)

চেষ্টা করার পরও কখনো কখনো সফল হওয়া যায় না। কেননা সফলতা আল্লাহর হাতে। তাই বান্দা বলে, আমরা চেষ্টা করতে পারি, বাকিটা আল্লাহর হাতে। সুতরাং এভাবে বলা কোনভাবেই শিরক নয়।

কারণ এই বাক্যের উদ্দেশ্য কখনোই এটা নয় যে, অর্ধেক আল্লাহর হাতে আর অর্ধেক বান্দার হাতে। বরং উদ্দেশ্য হলো, বান্দা তার সাধ্যানুযায়ী চেষ্টা করবে। বাকি সফল হওয়া না হওয়াটা আল্লাহর ফয়সালার উপর।

মূলত আল্লাহ তায়ালা দুনিয়াকে দারুল আসবাব বা উপকরণ নির্ভর বানিয়েছেন। যদিও আল্লাহ উপকরণ ছাড়াও দিতে পারেন- এটাই মুমিনের বিশ্বাস। ফলে দুনিয়াতে যে বীজ বুনবে, সে ফসল পাবে এটাই নিয়ম। কিন্তু বীজ বুনলেই যে ফসল ফলবে তার গ্যারান্টি নাই।

বান্দার কাজ বীজ বপন করা ও ক্ষেতের পরিচর্যা করা। বাকিটুকু আল্লাহর ওপর। অর্থাৎ, সেই বীজ থেকে ঠিক মতো চারা গজানো, তারপর সেই চারা বড় হয়ে তাতে ফসল ফলা ইত্যাদি।

সুতরাং এই ধরনের কথাকে এভাবে ব্যাখ্যা করা যে- এর মানে হলো অর্ধেক বান্দার উপর আর অর্ধেক আল্লাহর উপর, সম্পূর্ণ ভুল ব্যাখ্যা ও আক্ষরিক অর্থ গ্রহণ। এমন অক্ষরবাদিতা থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাই।

মানুষের কথাকে আক্ষরিক অর্থে না ধরে বরং এর উদ্দেশ্য ও মর্মের প্রতি লক্ষ্য রাখা নিয়ম। এটা ভাষার আলংকারিক দিক এবং সকল ভাষাতেই সমানভাবে প্রযোজ্য।

আরবী বালাগাত বা অলংকার শাস্ত্রে এই বিষয়ে খুব প্রসিদ্ধ একটি উদাহরণ আছে- আনবাতার রবীউল বাকলা। অর্থাৎ, বসন্ত ফসল উৎপাদন করেছে। এই কথাটি একজন মুমিন বললে এটি মাজায বা রূপক হবে।

কেননা মূল সৃষ্টিকর্তা তো আল্লাহ, এটা মুমিনমাত্রই বিশ্বাস করে। কিন্তু বসন্ত কালের উপযোগী আবহাওয়া যেহেতু ফসল ফলানোর ক্ষেত্রে বাহ্যিক ভূমিকা রাখে, তাই তার দিকেই ক্রিয়াকে সম্বন্ধিত করা হয়েছে।

বাংলাতেও আমরা বলি, দুধ খাওয়ার কারণে পেট ব্যাথা হয়েছে বা অমুক ঔষুধ তাকে সুস্থ করেছে। যাদের কমনসেন্স আছে, তারা কখনো এগুলোকে শিরকের আওতায় ফেলবে না।

 

পাঠকের মতামত

Comments are closed.