276130

পথ দেখিয়ে দেওয়া রাস্তার একটি আদব, যা অতি সওয়াবের কাজ

পৃথিবীতে পথ বা রাস্তা মানুষের জন্য আবশ্যকীয় বিষয়গুলোর অন্যতম। পার্থিব প্রয়োজনে মানুষকে বাড়ীতে প্রবেশ ও বের হওয়া, বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত ইত্যাদি কারণে রাস্তা ব্যবহার করতে হয়।

মানুষের চলাচলের এই রাস্তাকে নিরাপদ, নির্বিঘ্ন ও নিষ্কণ্টক করাই ইসলামের নির্দেশ। কিন্তু কোনো কোনো মানুষ এই পথ বা রাস্তাকে বন্ধ করে দিয়ে অন্যকে বিপদে ফেলে, যা ইসলামে বৈধ নয়। এই রাস্তার পরিধি বা প্রশস্ততা সম্পর্কে ইসলামে নির্দেশনা রয়েছে।

হাদিসে এসেছে- আবূ হুরায়রাহ (রা.) বলেন, ‘যখন মালিকেরা রাস্তার ব্যাপারে পরস্পরে বিবাদ করল, তখন নবী করিম (সা.) রাস্তার জন্য সাত হাত জমি ছেড়ে দেওয়ার ফায়সালা দেন’। (বুখারি হা/২৪৭৩; সহিহাহ হা/৩৯৬০। অন্যত্র তিনি বলেন- ‘সাত হাত প্রশস্ত করে রাস্তা তৈরি কর’। (তিরমিযী হা/১৩৫৫; ইবনু মাজাহ হা/২৩৩৮, সনদ সহিহ) এই প্রশস্ততা এজন্য যে, যাতে সেখানে যানবাহন প্রবেশ ও বের হতে কোনো সমস্যা সৃষ্টি না হয়। এমনকি ঐ রাস্তা ব্যবহারকারীরা যাতে তাদের প্রয়োজনীয় মালপত্রও সহজে আনা নেওয়া করতে পারে।

রাস্তার আদব দ্বারা উদ্দেশ্য

রাস্তা বা পথের আদব বলতে এমন কিছু কাজকে বুঝানো হয়, যা পথচারী, রাস্তা বা পথে উপবেশনকারী ও অবস্থানকারীর জন্য পালন করা জরুরি। আর কারো পক্ষে তা পালন করা সম্ভব না হলেও যেন তার প্রতি সচেতনভাবে লক্ষ্য রাখে। এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা রাস্তার ওপর বসা থেকে বিরত থাক। লোকজন বলল, এছাড়া আমাদের কোনো উপায় নেই। কেননা এটাই আমাদের ওঠা-বসার জায়গা এবং এখানে আমরা কথাবার্তা বলে থাকি। নবী মুহাম্মাদ (সা.) বলেন, যদি তোমাদের সেখানে বসতেই হয়, তবে রাস্তার হক আদায় করবে। তারা বলল, রাস্তার হক কী? তিনি বললেন, দৃষ্টি অবনমিত রাখা, কষ্ট দেওয়া হতে বিরত থাকা, সালামের জবাব দেওয়া, সৎকাজের আদেশ দেওয়া এবং অন্যায় কাজে নিষেধ করা’। (বুখারি হা/২৪৬৫, ৬২২৯; সহিহুল জামে হা/২৬৭৫)

রাস্তার আদব সমূহ

রাস্তার হক বা আদবসমূহ পালনে ইসলাম উৎসাহিত করেছে। এগুলো প্রতিপালনের ফজিলত ও সওয়াবও বর্ণিত হয়েছে। যেমন-

(১) নম্রভাবে চলাচল করা: রাস্তায় চলার সময় গর্ব-অহংকার প্রকাশ পায় এমনভাবে চলাচল করা মুমিনের জন্য সমীচীন নয়। কেননা অহংকার আল্লাহর বৈশিষ্ট্য, যা হরণ করতে আল্লাহ নিষেধ করেছেন। আর মুমিনকে নম্রভাবে রাস্তায় চলার জন্য আদেশ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন- ‘আর অহংকারবশে তুমি মানুষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না এবং যমীনে উদ্ধতভাবে চলাফেরা করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ কোনো দাম্ভিক ও অহংকারীকে ভালবাসেন না’ (সূরা: লোকমান, আয়াত:১৮)

(২) দৃষ্টি নিম্নগামী রাখা: দৃষ্টি নিম্নগামী রাখার অর্থ হচ্ছে মুমিন নারী-পুরুষের লজ্জাস্থান, যাবতীয় নিষিদ্ধ বিষয় এবং যার দিকে তাকালে ফিৎনায় পতিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে, এমন বস্ত্তর দিকে না তাকানো। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তুমি মুমিন পুরুষদের বলে দাও, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। এটা তাদের জন্য পবিত্রতর। নিশ্চয়ই তারা যা করে সে বিষয়ে আল্লাহ সম্যক অবহিত। আর তুমি মুমিন নারীদের বলে দাও, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থান সমূহের হেফাজত করে’ (সূরা: আন-নূর, আয়াত: ৩০-৩১)

দৃষ্টি অবনমিত রাখাকে রাসূল (সা.) রাস্তার হক বা আদব হিসেবে উল্লেখ করেছেন। যাতে মুমিন অপসন্দনীয় জিনিসের দিকে দৃষ্টি দেওয়া থেকে বিরত থাকে অন্য মুমিনের সম্মানের দিকে লক্ষ্য করে।

(৩) মানুষকে কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকা: মানুষকে কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকা। অর্থাৎ তাদের শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। যেসব কথা-কাজে কোনো কল্যাণ নেই; সেগুলো থেকে বিরত থাকা। অনুরূপভাবে পথচারীদের কষ্ট দেয় এমন কাজ থেকে বিরত থাকা। যেমন- তাদেরকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা, তাদের গীবত করা অথবা অনুরূপ কষ্টদায়ক কথা ও কাজ পরিহার করা। তাছাড়া পথচারীদের চলাচলে কষ্ট হয় এমনভাবে রাস্তা সংকীর্ণ করে না বসা, কারো বাড়ীতে যাতায়াতের পথে না বসা, কারো বাড়ীর পার্শ্ববর্তী রাস্তায় এমনভাবে না বসা যাতে বাড়ীর লোকজনের ইয্যত-আব্রু রক্ষায় সমস্যা হয়।

মোটকথা পথচারীকে কথা-কাজের মাধ্যমে কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকা। আবূ বারযা আল-আসলামী (রা.) বলেন, আমি বললাম- ‘হে আল্লাহর রাসূাল (সা.)! আমাকে এমন একটি কাজের নির্দেশ দিন যার দ্বারা আমি উপকৃত হতে পারি। তিনি বলেন, মুসলমানদের যাতায়াতের পথ থেকে কষ্টদায়ক বস্ত্ত সরিয়ে ফেল’। (মুসলিম হা/২৬১৮; ইবনু মাজাহ হা/৩৬৮১; মিশকাত হা/১৯০৬)

অন্যত্র রাসূল (সা.) বলেন, ‘প্রত্যেক মুসলিমের উপর সাদাকাহ করা ওয়াজিব। প্রশ্ন করা হলো, যদি সাদাকাহ করার জন্য কিছু না পায়? তিনি বললেন, তবে সে নিজ হাতে উপার্জন করবে এবং নিজে উপকৃত হবে ও সাদাকাহ করবে। পুনরায় জিজ্ঞেস করা হলো, যদি সে এতেও সক্ষম না হয় তবে কী হবে? তিনি বললেন, তাহলে সে অসহায় আর্ত মানুষের সাহায্য করবে। রাবী বলেন, আবার জিজ্ঞেস করা হলো, যদি সে এতেও সক্ষম না হয়? তিনি বললেন, তাহলে সৎ কাজের কিংবা কল্যাণের আদেশ করবে। আবারো জিজ্ঞেস করা হলো, যদি সে তাও না করে? তিনি বললেন, তবে মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকবে। কেননা এটাও সাদাকাহ’। (মুসলিম হা/১০০৮; নাসাঈ হা/২৫৩৮)

(৪) রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্ত্ত সরানো: রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্ত্ত অপসারণ করতে ইসলাম উৎসাহিত করেছে এবং একে ঈমানের শাখা বলে অভিহিত করেছে। রাসূল (সা.) বলেন, ‘ঈমানের সত্তরটির অধিক শাখা রয়েছে। অথবা ষাটটিরও অধিক। এর সর্বোচ্চ শাখা হচ্ছে এ সাক্ষ্য প্রদান করা যে, আল্লাহ ব্যতীত কোনো প্রকৃত ইলাহ নেই। আর এর সর্বনিম্ন শাখা হচ্ছে- রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু অপসারণ করা। আর লজ্জা ঈমানের একটি অন্যতম শাখা’। (মুসলিম হা/৩৫; তিরমিযী হা/৫৭; সহিহাহ হা/১৭৬৯; মিশকাত হা/৫। রাস্তা হতে কষ্টদায়ক বস্ত্ত সরানোর ফজিলত সম্পর্কে রাসূল (সা) বলেন, ‘এক ব্যক্তি রাস্তা দিয়ে চলার সময় রাস্তায় একটি কাঁটাযুক্ত ডাল দেখতে পেয়ে তা সরিয়ে ফেলল। আল্লাহ তাআলা তার এ কাজ সাদরে কবুল করে তার গুনাহ মাফ করে দিলেন’। (বুখারি হা/৬৫২, ২৪৭২; মুসলিম হা/১৯১৪; তিরমিজি হা/১৯৫৮)

অন্যত্র তিনি বলেন, ‘এক ব্যক্তি কখনো কোনো ভালো কাজ করেনি, শুধু একটি কাঁটাযুক্ত ডাল রাস্তা থেকে সরিয়েছিল। হয়তো ডালটি গাছেই ছিল, কেউ তা কেটে ফেলে রেখেছিল অথবা রাস্তায়ই পড়েছিল। সে তা সরিয়ে ফেলেছিল। আল্লাহ তার একাজ সাদরে গ্রহণ করলেন এবং তাকে জান্নাতে প্রবেশ করালেন’। (আবূদাঊদ হা/৫২৪৫; সহিহুল জামে‘ হা/৬৭৫৫)

রাসূল (সা.) আরো বলেন, ‘আমি এক ব্যক্তিকে দেখলাম জান্নাতে একটি গাছের নীচে স্বাচ্ছন্দ্যে হাঁটছে। সে এমন একটি গাছ রাস্তার মধ্য থেকে কেটে ফেলে দিয়েছিল যা মানুষকে কষ্ট দিত’। (মুসলিম হা/১৯১৪; মিশকাত হা/১৯০৫; ছহীহুল জামে‘ হা/৫১৩৪)

(৫) পরিচিত-অপরিচিত সবাইকে সালাম দেওয়া: রাস্তার আরেকটি আদব হচ্ছে সব মুসলমানকে সালাম দেওয়া। আর রাসূল (সা.) ব্যাপকভাবে সালামের প্রসার ঘটাতে বলেছেন। আর এটাকে মানুষের পারস্পরিক মহববত বৃদ্ধির উপায় বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, ‘তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, যতক্ষণ না ঈমানদার হবে। আর তোমরা ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ না পরস্পর ভালোবাসা স্থাপন করবে। আমি কি এমন একটি কাজের কথা তোমাদেরকে বলে দেব না, যখন তোমরা তা করবে, পরস্পর ভালোবাসা স্থাপিত হবে? তোমরা একে অপরের মধ্যে সালামের প্রসার ঘটাও’। (মুসলিম হা/৫৪; মিশকাত হা/৪৬৩১)

অন্যত্র এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রা.) হতে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি আল্লাহর রাসূল (সা)-কে জিজ্ঞেস করল, ‘ইসলামের কোন্ জিনিসটি উত্তম? তিনি বললেন, তুমি খাদ্য খাওয়াবে ও পরিচিত-অপরিচিত সকলকে সালাম দিবে’। (বুখারি হা/১২, ২৮, ৬২৩৬; মুসলিম হা/৩৬; মিশকাত হা/৪৬২৯)।

সালাম প্রদানের নিয়ম সম্পর্কে রাসূল (সা) বলেন, ‘আরোহী পদচারীকে, পদচারী উপবিষ্টকে এবং অল্প সংখ্যক অধিক সংখ্যককে সালাম দিবে’। (বুখারি হা/৬২৩৬; মুসলিম হা/২১৬০; মিশকাত হা/৪৬৩২) অন্যত্র তিনি বলেন, ‘বয়োকনিষ্ঠ বয়োজ্যেষ্ঠকে, পথচারী উপবিষ্টকে এবং অল্প সংখ্যক অধিক সংখ্যককে সালাম দিবে’। (বুখারি হা/৬২৩১; আবূদাঊদ হা/৫১৯৮; তিরমিজি হা/২৭০৪; মিশকাত হা/৪৬৩৩)।

(৬) সবার সালামের উত্তর দেওয়া: রাস্তার আরেকটি আদব হচ্ছে সালামের উত্তর দেওয়া। আর কেউ সালাম দিলে তার উত্তর দেওয়া ওয়াজিব। আল্লাহ বলেন ‘আর যখন তোমরা সম্ভাষণ প্রাপ্ত হও, তখন তার চেয়ে উত্তম সম্ভাষণ প্রদান কর অথবা ওটাই প্রত্যুত্তর কর’। (সূরা: নিসা, আয়াত: ৮৬)

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘প্রত্যেক মুসলিমের ওপর তার মুসলিম ভাইয়ের পাঁচটি অবশ্য কর্তব্য রয়েছে। সালামের জবাব দেওয়া, হাঁচি শুনে জবাব দেওয়া, দাওয়াত কবুল করা, অসুস্থ হলে দেখতে যাওয়া এবং জানাজা ও দাফনে অংশগ্রহণ করা’। (মুসলিম হা/২১৬২; আবূদাঊদ হা/৫০৩০; সহিহুল জামে‘ হা/৩২৪১)

(৭) সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ করা: সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ করা প্রত্যেক মুসলিমের ওপরে আবশ্যক। আল্লাহর আনুগত্য ও তার নৈকট্য হাছিল, মানবতার কল্যাণ সাধন এবং শরিয়ত সম্মত যাবতীয় কাজের প্রতি মানুষকে আহ্বান জানানো সৎকাজের আদেশের অন্তর্ভুক্ত। পক্ষান্তরে যাবতীয় অন্যায়-অপকর্ম যা শরিয়তে নিষিদ্ধ ও নিন্দনীয় কাজ থেকে মানুষকে বাধা দেওয়া বা বিরত রাখার চেষ্টা করা অসৎকাজের নিষেধের অন্তর্গত। এসব কাজ মুমিনের বিশেষ বৈশিষ্ট্য বলে আল্লাহ উল্লেখ করেছেন।

(৮) পথ প্রদর্শন করা: পথ দেখিয়ে দেওয়া রাস্তার একটি আদব, যা অতি সওয়াবের কাজ। যাকে সাদাকার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। পথ দেখানো বিভিন্নভাবে হতে পারে। যেমন-

(ক) সাধারণ পথিককে পথ দেখানো: যারা গন্তব্যে পৌঁছার পথ চেনে না, তাদেরকে সহজ ও সঠিক পথ বাতলে দেওয়া মুমিনের জন্য অবশ্য কর্তব্য। এ ব্যাপারে ইসলাম উৎসাহিত করেছে এবং এর অনেক ফজিলত রয়েছে।

(খ) পথহারাকে পথ দেখানো: মানুষ উদ্দিষ্ট স্থানে পৌঁছার পথ হারিয়ে ফেললে সীমাহীন বিড়ম্বনার সম্মুখীন হয়। এ অবস্থা থেকে তাকে উত্তরণের জন্য সঠিক পথ বাতলে দেওয়া জরুরি। পথহারাকে পথ প্রদর্শনের ফজিলত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘পথহারা লোককে পথের সন্ধান দেওয়া তোমার জন্য সাদাকা’।

(গ) অন্ধকে পথ চলতে সাহায্য করা: পথ চলার ক্ষেত্রে অন্ধ ব্যক্তির ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া উচিত। কখনও তাকে হাত ধরে তার সাথে চলে তাকে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করা। এটা একটি বড় শিষ্টাচার। যার প্রতি ইসলাম উৎসাহিত করেছে। পক্ষান্তরে অন্ধকে ভুল পথ প্রদর্শন করা হ’তে ইসলাম সাবধান করেছে এবং একে অভিশাপে পতিত হওয়ার কারণ বলে আখ্যায়িত করেছে। রাসূল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ ঐ ব্যক্তিকে অভিশাপ করেন যে অন্ধকে ভুল পথ দেখায়’।

(৯) বোঝা বহনকারীকে সাহায্য করা: রাস্তায় উপবেশনকারী বা পথিক অন্যকে তার বোঝা বহনে বা মাথায় উঠাতে অপারগ দেখলে তাকে সাহায্য করবে। এটা রাস্তার অন্যতম আদব।

(১০) উত্তম কথা বলা: পথচারী ও অন্যদের সঙ্গে উত্তম ও শালীন কথাবার্তা বলা রাস্তার অন্যতম শিষ্টাচার। যার প্রতি ইসলাম বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে। আল্লাহ বলেন, (হে নবী!) তুমি আমার বান্দাদের বলো, তারা যেন (পরস্পরে) উত্তম কথা বলে। (কেননা) শয়তান সর্বদা তাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির উস্কানি দেয়। এটা সর্বসাধারণের জন্য পালনীয় আদব।

(১১) মাযলূম বা অত্যাচারিতকে সাহায্য করা: রাস্তার অন্যতম আদব হচ্ছে অত্যাচারিতকে সাহায্য-সহযোগিতা করা। সম্ভব হলে বল প্রয়োগে, নতুবা মুখের মাধ্যমে সাহায্য করা। রাসূল (সা.) বলেন, ‘তোমার ভাইকে সাহায্য কর, সে যালিম হোক অথবা মাযলূম’।

(১২) নারীদের রাস্তার পার্শ্ব দিয়ে চলা: রাস্তায় চলাচলের ক্ষেত্রে নারীদের উচিত নিজেদের ইজ্জত-আব্রু বজায় রাখার জন্য এক পার্শ্ব দিয়ে চলাচল করার চেষ্টা করা। যাতে পুরুষের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে না যায়।

(১৩) বাহন দ্রুত চালনা না করা: যানবাহনে নারী, শিশু, বৃদ্ধ, অসুস্থ বিভিন্ন ধরনের যাত্রী থাকে। ফলে যানবাহন দ্রুত চালালে তাদের কষ্ট হয়। আবার এতে যানবাহন নিয়ন্ত্রণেও সমস্যা হয়। তাই যানবাহন আস্তে-ধীরে চালাতে হবে। আনাস (রা.) হতে বর্ণিত, একবার উম্মু সুলাইম সফরের সামগ্রীবাহী উটে সওয়ার ছিলেন। আর নবী করিম (সা.) এর গোলাম আন্জাশা উটগুলোকে দ্রুত হাঁকিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। তখন নবী করিম (সা.) তাকে বললেন, ‘ওহে আনজাশা! তুমি কাঁচের পাত্র বহনকারী উটগুলো আস্তে আস্তে হাঁকাও’।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.