274530

সুন্দরী ললনাদের সঙ্গে আড্ডা দিতে গিয়ে ৩০ কোটি টাকা হারালেন লাখো বাংলাদেশি

দেশে অবৈধ হলেও নানা পন্থায় লাইভ স্ট্রিমিং অ্যাপ ‘স্ট্রিমকার’ চালিয়ে ভার্চুয়াল জগতে সুন্দরী তরুণীদের সঙ্গে আড্ডা দেয়ার ফাঁদে ফেলে এক লাখের বেশি বাংলাদেশির সঙ্গে প্রতারণা করেছে একটি ভয়ংকর প্রতারক চক্র। 

এ চক্রের পাল্লায় পড়ে ‘বিন্স’ ও ‘জেমস’ নামে দু’টি ডিজিটাল মুদ্রার মাধ্যমে তারা হারিয়েছেন কষ্টার্জিত কোটি কোটি টাকা।  সেই চক্রের দুই সদস্যকে সম্প্রতি গ্রেফতার করা হয়েছে।  বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির সাইবার ক্রাইম কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. কামরুল আহসান এসব তথ্য জানান।

তিনি জানান, এক লাখ বিন্স এক হাজার ২০ টাকা ও এক লাখ জেমস ৬০০ টাকায় বিক্রি করা হয়।  আর এসব ডিজিটাল মুদ্রার দাম বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং ও ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়। 

গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত ১৯ মে পুলিশের অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটের (এটিইউ) সদস্যরা অভিযান চালিয়ে স্ট্রিমকার পরিচালনাকারী চক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতার করে।  পরে তাদের বিরুদ্ধে সাভার থানায় দায়ের করা মামলাটি তদন্ত শুরু করে সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার। মামলাটি তদন্তের ধারাবাহিকতায় বুধবার রাতে সিলেটের গোয়াইনঘাট এলাকায় অভিযান চালিয়ে আরো দুই জনকে গ্রেফতার করা হয়।  গ্রেফতারকৃতরা হলেন- নিধু রাম দাস, (২৭) ও ফরিদ উদ্দিন (৪০)।

তিনি বলেন, অ্যাপ প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ১৫টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ লেনদেনের তথ্য পায় সাইবার পুলিশ।  এ অ্যাপের মূল টার্গেট যুব সমাজ ও বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসীরা।  ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (ভিপিএন) ব্যবহার করে দেশ থেকে অ্যাপটিতে যুক্ত হতেন ব্যবহারকারীরা।

সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি মো. কামরুল আহসান বলেন, এ অ্যাপে দুই ধরনের আইডি আছে। ইউজার বা ব্যবহারকারীর আইডি ও হোস্ট আইডি। হোস্ট আইডি ব্যবহার করে বিশেষ কিছু চক্র এক ধরনের অপরাধ কার্যক্রম পরিচালনা করে।  সেখানে তরুণীদের হোস্টিং করিয়ে বিভিন্ন উপায়ে অর্থ উপার্জন করা হয়।

লাইভ স্ট্রিমিংয়ে তাদের সঙ্গে আড্ডা দেয়ার প্রলোভনে অ্যাপে প্রবেশ করেন সাধারণ ব্যবহারকারীরা।  তার জন্য ‘বিন্স’ নামে ভার্চুয়াল মুদ্রা কিনতে হয়। সেই মুদ্রা উপহার হিসেবে দিয়ে আড্ডায় যুক্ত হন ব্যবহারকারীরা।

টাকা সংগ্রহের ব্যাপারে তিনি বলেন, লাখের বেশি বাংলাদেশি ব্যবহারকারী অনলাইন ব্যাংকিং, হুন্ডি, নেটেলার, স্ক্রিল ও বিদেশি একটি ব্যাংকের মাধ্যমে ডিজিটাল মুদ্রা ‘বিন্স’ ও ‘জেমস’ কিনছে।  এর মাধ্যমে প্রতি মাসে বিপুল পরিমাণ টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে।  এরপর বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং ও ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে টাকা সংগ্রহ করা হচ্ছে।

সিআইডির এ কর্মকর্তা বলেন, স্ট্রিমকার পরিচালনায় জড়িত প্রত্যেকের একাধিক ব্যাংক ও বিকাশ অ্যাকাউন্ট রয়েছে।  গ্রেফতার নিধু রাম দাসের ব্যাংক ও বিকাশ অ্যাকাউন্টে গত এক বছরে ১০ কোটিরও বেশি টাকা লেনদেনের তথ্য মিলেছে।  অন্যজন ফরিদ উদ্দিনের ব্যাংক ও বিকাশ অ্যাকাউন্টে প্রায় তিন কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।

তিনি আরো বলেন, গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে আরো অনেকের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে।  তাদের ব্যাংক ও বিকাশ অ্যাকাউন্টে গত এক বছরে প্রায় ৩০ কোটি টাকারও বেশি লেনদেনের তথ্য মিলেছে।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.