274037

মৃত্যুর আগে বড় বোনকে যা বলেছিল মুনিয়া

রাজধানীর গুলশানে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট থেকে মরদেহ উদ্ধার হওয়া তরুণী মোসারাত জাহান মুনিয়া আত্মহত্যা করেনি, তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন তার ভগ্নিপতি মিজানুর রহমান।  অপরদিকে তার বড় বোন নুসরাত জাহান তানিয়া একটি গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে মুনিয়ার মৃত্যুর আগে তার সঙ্গে কথোপকথনের বিষয়টি তুলে ধরেছেন।

নুসরাত জাহান বলেন, সোমবার সকাল ৯টার দিকে ওর (মোসারাত জাহান মুনিয়া) ফোনে কান্নায় আমার ঘুম ভাঙে।  ও অনেক কান্না করছিল আর আমাকে বলছিল, ‘আপু আনভীর আমাকে ধোকা দিছে।  আমি অনেক বিপদে আছি। তুমি তাড়াতাড়ি ঢাকায় আস।’

আমি ওকে অনেক বুঝিয়ে বলি, আমি অফিসে। অফিস থেকে বেরিয়ে রওনা দিয়ে তোমাকে কুমিল্লা নিয়ে আসব।  তুমি চিন্তা কর না।  এর কিছুক্ষণ পর তখন হয়তো সাড়ে ১০টা কিংবা ১১টা হবে তখন ও আবার আমাকে কল দিয়ে বলে, ‘আপু, আমার অনেক বিপদ।  তুমি তাড়াতাড়ি আস।’

‘তারপর আমি গাড়ি ঠিক করে ঢাকায় আসতে আসতে অনেকবার কল দেই কিন্তু ও ফোন ধরে না।  আমার সঙ্গে কাজিনরাও ছিল।  কারো ফোন না ধরায় আমরা চিন্তাই পড়ে যাই।  আমরা এসে পৌছাই ৪টা বা সাড়ে ৪টা হবে।  এসে দরজায় কলিং বেল দিলে দেখি সেটা নষ্ট।  পরে বাড়ির মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করি।  তিনি বাইরে থেকে মিস্ত্রী এনে তালা ভাঙার কথা বলেন।  পরে বাড়ির ম্যানেজার লোক এনে তালা ভাঙার ব্যবস্থা করেন।  এতো জোড়ে তালা ভাঙার শব্দ হচ্ছিল তারপরও ভেতর থেকে কোনো শব্দ না পেয়ে আমরা ভয় পাচ্ছিলাম।  এভাবে তো কেউ ঘুমাতে পারে না।’

‘তালা ভাঙার পর বাইরে থেকেই তাকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পাই।  পরে আমরা কেউ ভেতরে ঢুকিনি।  তখন পুলিশকে কল দিলে ইফতারের পর পুলিশ আসে।  পুলিশের অনুরোধে তখন ভেতরে যাই।  গিয়ে তাকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখি।  পা দুটি বাঁকা অবস্থায় বিছানায় লাগানো ছিল।  বিছানাটাও ছিল পরিপাটি।  পরে পুলিশ ওড়নার প্যাঁচ কেটে তার মরদেহ নামায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আনভীর তাকে ফুসলিয়ে আবার ঢাকায় নিয়ে আসার কথা বললে, সে আমার সঙ্গে ঝগড়া করে ঢাকায় চলে আসে।  সে বলে, ঢাকায় গিয়ে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে।  আনভীর তাকে বিয়ে করবে।  তবে কিছুদিন গোপন রাখতে হবে।  তারপর বিদেশে নিয়ে সেটেল হবে।’

সোমবার (২৬ এপ্রিল) সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে রাজধানীর গুলশান-২-এর ১২০ নম্বর রোডের ১৯ নম্বর বাড়ির ৩/বি ফ্ল্যাট থেকে এইচএসসি পড়ুয়া মোসারাত জাহান মুনিয়ার মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।  মুনিয়ার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত শফিকুর রহমান।  তার বাড়ি কুমিল্লা শহরের উজির দিঘিরপাড়।

পুলিশ জানিয়েছে, এক লাখ টাকা ভাড়ায় দুই মাস আগে ফ্ল্যাটটি ভাড়া নিয়েছিলেন মুনিয়া।  তবে ফ্ল্যাটে ওই তরুণী একাই থাকতেন।  এ ঘটনায় সোমবার মধ্যরাতে গুলশান থানায় মুনিয়ার বোন নুসরাত জাহান বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন।  মামলায় বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরকে আসামি করে তার বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ আনা হয়েছে।  ওই তরুণীর মৃতদেহ ময়নাতদন্তের পর গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায় নিয়ে দাফন করা হয়েছে।

 

পাঠকের মতামত

Comments are closed.