272751

অ্যালার্জি থাকলেও নেওয়া যাবে করোনার টিকা, তবে মানতে হবে সতর্কতা

অ্যালার্জি থাকলে করোনার টিকা বিপজ্জনক হতে পারে? নতুন প্রোটোকলে বলা হচ্ছে, এতটা ভয়ের কিছু নেই।  ভ্যাকসিনে অ্যালার্জি আর কোনও বাধা নয়।  শুধু টিকা নেওয়ার আগে মানতে হবে কিছু জিনিস।  এ ব্যাপারে বললেন এসএসকেএম হাসপাতালের পালমনোলজিস্ট ডা. সুরজিৎ চট্টোপাধ্যায়।

শুরু হয়েছে ভ্যাকসিনেশন।  চিকিৎসক ও ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কারদের পরিমণ্ডল পেরিয়ে ভ্যাকসিন এখন আমআদমির দোরগোড়ায়। টিকা পাচ্ছেন ৪৫ বছর বয়সি নাগরিকরাও।  টিকায় দেশে এগিয়ে রয়েছে কোভিশিল্ড ও কোভ্যাকসিন।  যদিও প্যানেলে আরও কয়েকটি ভ্যাকসিন রয়েছে, যেগুলির প্রয়োগও শীঘ্রই শুরু হবে।  কিন্তু ভ্যাকসিন নিয়ে ভয় কমছে না, বিশেষত ভ্যাকসিন নেওয়ার পর যদি শরীর খারাপ করে!

শ্বাসকষ্ট, অ্যালার্জি শুরু হয়।  সেই ভয়ে অনেকেই ভ্যাকসিন (Vaccine) নেওয়ার আগে ডাক্তারদের সঙ্গেই একচোট কথা বলে নিচ্ছেন।  মনে নানা দ্বিধা, আগে কারও কিছু হয়েছে কি না ভ্যাকসিন নেওয়ার কারণে, হলে কী করবেন ইত্যাদি।  তবুও যেন একটা কিন্তুভাব রয়ে গিয়েছে।

বিভিন্ন খাবারে অ্যালার্জি কিংবা ধুলোবালি, ফুলের রেণুতে।  কারও আবার বিভিন্ন ওষুধে সমস্যা। কেউ অ্যাজমাটিক, তারা কি নির্দ্বিধায় ভ্যাকসিন নিতে পারবে? এ প্রশ্ন সকলের মনে।  ভ্যাকসিনেশন শুরুর প্রথম দিকে দেখা গিয়েছিল অনেকেই ভ্যাকসিনের দরুন অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হয়েছে, বর্তমানে সেই ভয়টা তেমন নেই।  তবে অ্যালার্জির সম্ভাবনা থাকলে তাদের কিছু সতর্কতা মেনেই ভ্যাকসিন নিতে হবে।

কী কী বিষয় মাথায় রাখবেন?

  1. এখন নতুন গাইড লাইনে বলা হয়েছে, যাদের অ্যালার্জির জন্য চিকিৎসা চলে নিত্য তাদের ক্ষেত্রেও ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য কোনও রকম বাধা-নিষেধ নেই।  অ্যালার্জির চিকিৎসা করার সঙ্গে সঙ্গেই এই ভ্যাকসিন নেওয়া যেতে পারে।
  2. আরও একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে, ভ্যাকসিন নিতে গিয়ে, সর্বপ্রথম যিনি ভ্যাকসিন দিচ্ছেন তাঁকে গ্রাহকের পূর্ব অ্যালার্জি সংক্রান্ত সমস্ত বিষয় জানাতে হবে। তারপর টিকা নিতে হবে।
  3. কারও যদি প্রথম ডোজ নেওয়ার পর মারাত্মকভাবে অ্যালার্জির কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় সেক্ষেত্রে সেই রোগীকে ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া যাবে না।  তবে রোগী করোনার অন্য ভ্যাকসিন নিতে পারবেন কি না তা চিকিৎসকের বিচার্য।  যদিও আমেরিকা বা ইউরোপীয় দেশগুলিতে করোনার কোনও ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজে অ্যালার্জি হলে সেক্ষেত্রে অন্য করোনা ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হচ্ছে।  এদেশে এখনও এটা শুরু হয়নি।
  4.  এখন এটাও বলা হচ্ছে, অ্যালার্জি থাকলে যদি তার চিকিৎসা চলে বা কোনও ওষুধে বা ইনজেকশনে সিভিয়ার অ্যালার্জি হওয়ার হিস্ট্রি না থাকে তবে ভ্যাকসিনে অ্যালার্জি ভয় নেই।  সাধারণত যেসব অ্যালার্জি অনেকেরই থাকে যেমন, অল্পতেই সর্দি-কাশি হওয়া, কিছু খেলে গা-হাতে র‌্যাশ, চুলকানি, ধুলোতে অ্যালার্জি থাকলে একজন স্বছন্দে ভ্যাকসিন নিতে পারে। এতে কোনও ভয় নেই।  শুধু ভ্যাকসিনেটরকে ভ্যাকসিন নেওয়ার আগে একথা জানাতে হবে, এটা বাধ্যতামূলক।
  5. যাঁদের এই ধরনের অ্যালার্জি রয়েছে, ভ্যাকসিন নিতে যাওয়ার আগে অ্যান্টি অ্যালার্জি ট্যাবলেট অবশ্যই খেয়ে যান।
  6. ভ্যাকসিন নেওয়ার পর ‘অ্যানাফাইলাক্সিস’ (Anaphylaxis) হলে তখন সেটা প্রাণঘাতী হতে পারে।  এক্ষেত্রে ভ্যাকসিন নেওয়ার ৩০ মিনিটের মধ্যেই অ্যাকিউট রি-অ্যাকশন হয়।  চোখ-মুখ ফুলে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট হওয়ার সমস্যা দেখা দেয়।  তাই ভ্যাকসিন নেওয়ার পর আধ ঘণ্টা বসিয়ে রাখা হচ্ছে সকলকে।  এই ৩০ মিনিট পার হয়ে গেলে ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে তেমন ভয়ের কিছু নেই।
  7. সারা বিশ্বজুড়ে এখন ভ্যাকসিনেশনচলছে, এতদিনে তেমন কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার খবর পাওয়া যায়নি, তাই অ্যালার্জি থাকলে ভ্যাকসিন নেওয়া থেকে বিরত থাকবেন না।  ভ্যাকসিন নিতে পারে সবাই।
  8. ভ্যাকসিন নেওয়ার আগে যদি জ্বর থাকে, কারও যদি ব্লিডিং ডিসঅর্ডার থাকে কিংবা রক্ত পাতলা করার ওষুধ যারা খান ও ইমিউন কম্প্রেসিভ ড্রাগ যাঁরা সেবন করেন তাঁদেরও ভ্যাকসিনেটরকে আগে তা জানাতে হবে।  পরামর্শ করে তারপর ভ্যাকসিন নিন।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.