272585

তাহলে কি শুক্র গ্রহে মিলছে প্রাণের দেখা?

সৌরজগত বা মহাবিশ্বে এই পৃথিবী ছাড়া অন্য কোথায় প্রাণের অস্তিত্ব আছে কিনা, তা খুঁজতে মানুষের চোখ বারবার মঙ্গলগ্রহে ছুটলেও এবার খবর এসেছে শুক্র গ্রহ থেকে।

পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের এই গ্রহটির মেঘেতে ফসফিন গ্যাস দেখতে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা, যা প্রাণের অস্তিত্বের বিষয়ে তাদেরকে অনেক আশাবাদী করে তুলেছে।

সেখানে প্রাণের অস্তিত্ব রয়েছে এমন কোনো প্রামাণ্য তথ্য এখনও পর্যন্ত মেলেনি; কিন্তু পৃথিবীতে ফসফিন গ্যাস উৎপাদনে ব্যাকটেরিয়ার ভূমিকার কথা মাথায় রেখে তারা ভাবছেন, তাহলে শুক্র গ্রহেও তেমন কোনো অনুজীব থাকার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

রয়টার্স জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক গবেষক দল প্রথমে হাওয়াই দ্বীপে স্থাপিত জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল টেলিস্কোপে শুক্র গ্রহের মেঘপুঞ্জে ফসফিন গ্যাস দেখতে পান।  এরপর চিলির আতাকামা মুরুভূমি থেকে এএলএমএ রেডিও টেলিস্কোপ দিয়ে তা নিশ্চিত হন।

“এটা একেবারে অপ্রত্যাশিত, স্তম্ভিত করে দেওয়ার মতোও বটে,” বলছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানী গেন গ্রেভস। ফসফিন হল ফসফরাস ও হাইড্রোজেন মিলে গঠিত একটি রাসায়নিক যৌগ।  পৃথিবীতে কিছু ব্যাকটেরিয়া প্রাকৃতিকভাবে ফসফরাসের সঙ্গে হাইড্রোজেনের মিলন ঘটিয়ে এই গ্যাস তৈরি করে।

তবে পৃথিবীতে রসায়নাগারে কিংবা কারখানায় না হয় ফসফিন গ্যাস তৈরি করা যায়, কিন্তু শুক্রে তো কোনো কারখানা নেই।  তাহলে শুক্র গ্রহের পৃষ্ঠের ৫০ কিলোমিটার উপরে মেঘরাশির মধ্যে এই ফসফিন এল কেমন করে? যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির মলিকুলার পদার্থবিদ কার্লা সোস-সিলভা বলেন, “আমাদের এই আবিষ্কারের ব্যাখ্যা যদি করতে হয়, তবে আমি সবার আগে বলব প্রাণ।

“এটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ, যদি এটা ফসফিনই হয়, তবে তার মানে এটাই দাঁড়ায় যে এর পেছনে প্রাণ আছে।  তার মানে আমরা একা নই।”  বিশাল এই মহাবিশ্বে মানুষের আবিষ্কারের পরিধি দিয়ে বিচার করলে পৃথিবী এখনও নিঃসঙ্গ এক গ্রহ।  সৌরজগতের এই গ্রহটিতেই কেবল এখন অবধি প্রাণের সন্ধান মিলেছে।

তবে মহাবিশ্বের আর কোথাও প্রাণ রয়েছে কি না, তা নিয়ে বছরের পর বছর গবেষণা চললেও আশাব্যাঞ্জক কোনো তথ্য এখনও মেলেনি।  এর মধ্যেই আশা জাগানিয়া তথ্য এল কাছের শুক্র গ্রহ থেকে, যে গ্রহটি শুকতারা ও সন্ধ্যাতারা নামে পৃথিবীর আকাশে সবচেয়ে স্পষ্টভাবে উদিত হয়, যার নাম পৃথিবীর মানুষ দিয়েছে গ্রিক পুরানের প্রেমের দেবী ভেনাসকে স্মরণ করে।

শুক্র গ্রহ পৃথিবীর চেয়ে সূর্যের অনেক কাছে বলে এর তাপমাত্রা অনেক বেশি।  এর পৃষ্ঠে ৪৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো তাপমাত্রায় কোনো জীবের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা দেখেন না বিজ্ঞানীরা।  তবে শুক্রের পৃষ্ঠ ছাড়িয়ে অনেক উপরে যেখানে কিনা তাপমাত্রা পৃথিবীর মতোই ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সেখানে ফসফিন গ্যাসের এই আবরণের পেছনে কোনো অনুজীবের অবদান উড়িয়ে দিয়ে পারছেন না তারা।

শুক্রের মেঘে ফসফিন গ্যাস কোনো আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত কিংবা অন্য কোনো ধরনের রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে সৃষ্টি হয়েছে কি?  সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে তার পক্ষেও কোনো সন্তোষজনক ব্যাখ্যা খুঁজে পাননি বিজ্ঞানীরা।  তাই কোনো জীবকে এর কারণ ধরেই এখন আবর্তিত হচ্ছে বিজ্ঞানীদের গবেষণা।

সোসা-সিলভা বলেন, “শুক্র এখন হয়ত বাসযোগ্য নয়, তবে অনেক অনেক কাল আগে হয়ত এর পৃষ্ঠে প্রাণের অস্তিত্ব ছিল।  হয়ত গ্রিনহাউস প্রতিক্রিয়া এই গ্রহকে এখন বসবাস অযোগ্য করে তুলেছে।”

পাঠকের মতামত

Comments are closed.