270088

১৫০ বছর পুরনো ঢাকার ‘ব্রাহ্ম লাইব্রেরি’: যেখানে মেলে দুর্লভ বই

বাংলাবাজার চৌরাস্তা মোড় থেকে পাটুয়াটুলীর দিকে রওনা করে কিছুটা পথ পেরুনোর পরই ডান পাশে চোখে পড়বে সুদৃশ্য একটি দালান। ২-৩-৪- লয়েল স্ট্রীট, পাটুয়াটলি ঠিকানায় লাল রঙের দালানটি ব্রাহ্মসমাজ মন্দির।
সাজানো-গোছানো পরিবেশে মন্দিরের সামনে প্রশস্ত ফুলের বাগান। পেছনে আছে নানা ফলের বাগান। ফলের গাছ-গাছালি ছাড়িয়ে মন্দির পরিচালকদের বসতি। ১৮৭১ সালে ব্রাহ্ম সমাজের উপাসনা, ধর্মালোচনা ও সমাজ সংস্কার মূলক কাজের পাশাপাশি অভয় চন্দ্র দাসের উদ্যোগে একটি পাঠাগার স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল।

অভয় চন্দ্র দাস ছিলেন ঢাকার নাট্য আন্দোলনের অন্যতম সূচনাকারী। ব্রাহ্ম সমাজের প্রতিষ্ঠাতা রাজা রামমোহন রায়ের নামানুসারে পাঠাগারটি ‘রামমোহন গণপাঠাগার’ নামকরণ করা হয়।

প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের দানে দুর্লভ-দুষ্প্রাপ্য গ্রন্থের সংগ্রহশালা হয়ে ওঠে এই লাইব্রেরি। তবে একাত্তরে পাক-হানাদার বাহিনীর রোষাণলে পড়ে ধ্বংস হয়ে যায় বাঙালির অমূল্য সম্পদ এ পাঠাগারটি। সে সময় হানাদার বাহিনী এই পাঠাগারটি থেকে অনেক মূল্যবান বই গায়েব করে ফেলে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ব্রাহ্ম সমাজের গেইট দিয়ে ঢুকতেই একটি জরাজীর্ণ ভবনের সামনে লেখা আছে ‘রাজা রামমোহন রায় পাঠাগার’। পাঠাগারটির ভাঙ্গা চৌকাঠে তালা লাগানো। ভিতরে ঢুকে দেখা গেল যে কয়েকটি আসবাবপত্র আছে তার ওপর ধুলাবালির স্তুপ।

এখানে যে কারো পায়ের ছাপ পড়েনি সে বিষয়টি সহজেই বোঝা যায়। এভাবে দেশের প্রথম গণগ্রন্থাগার ‘রাজা রামমোহন রায় পাঠাগার’ পাঠক বিনে এখন নিজেই হাহাকারের গল্প হয়ে নীরবে বসে আছে রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা পাটুয়াটুলীতে।

ব্রাহ্ম সমাজের ইতিহাস থেকে জানা যায়, ঐতিহাসিক এই পাঠাগারটিতে এসেছিলেন বাংলা সাহিত্যের বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক ঔপন্যাসিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্রপাধ্যায়, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরসহ অনেক গুনীজন।

১৮৯৮ সালে ঢাকা এসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যে তিনটি দর্শনীয় স্থানের কথা বলেছিলেন, এর মধ্যে এই পাঠাগারটিও একটি। সুচিত্রা সেন একবার এই ব্রাহ্মসমাজে এসেছিলেন। সে সময়ের ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক পাখাটিসহ শত বছরের পুরনো ঘড়ি, রাজকীয় পালংক টি-টেবিল, টেবিল, মুখ দেখার আয়না এখনো ব্যবহার হচ্ছে।

ব্রাহ্মসমাজের পাঠাগার সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা আজিম বক্স বলেন, ‘আদি সময়ে যখন ঢাকা শহরে তেমন বই পাওয়া যেত না। তখন আমরা দল বেঁধে যেতাম ব্রাহ্ম সমাজের পাঠাগারে পড়তে।

বিকেল বেলাটা ওই পাঠাগারেই কাটিয়ে আসতাম। এর আগেও পুরান ঢাকার বাসিন্দারা ব্রাহ্ম সমাজের এই পাঠাগারে আড্ডা বসাতো। কবি-সাহিত্যিকরা নিজেদের অবসর সময়ে এই ব্রাহ্ম লাইব্রেরিতে আসতেন।

পাঠাগার ও ব্রাহ্ম সমাজের সার্বিক অবস্থা নিয়ে জানতে চাইলে তিনপুরুষ থেকে ব্রাহ্ম সমাজের সঙ্গে জড়িত বর্তমান ব্রাহ্ম সমাজর সাধারণ সম্পাদক রণবীর পাল রবি বলেন, লাইব্রেরির মূল ভবনটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।

আইনি জটিলতায় ষেখানে নতুন ভবন নির্মাণ করার কাজ আটকে আছে। সরকারী সহযোগিতা পেলে এই লাইব্রেরিটিকে সম্প্রসারণ করে সেমিনার কক্ষ ও গবেষণা কেন্দ্র বানানোর পরিকল্পনা আছে। লাইব্রেরিটি সংস্কার করা হলে এখানে একটি শিক্ষা কেন্দ্র গড়ে উঠবে।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.