269991

নাসার উদ্ভাবনী প্রোগ্রামে বাংলাদেশের ‘ওরিওন-সিক্স’

২০১২ সাল থেকে বিশ্বের বিভিন্ন টিম পৃথিবী এবং মহাকাশে বাস্তব-বিশ্বের সমস্যাগুলো সমাধান করার জন্য নাসার উন্মুক্ত ডেটা নিয়ে কাজ করছে।
প্রতি বছরের নির্দিষ্ট সময়ে নাসার গ্লোবাল অর্গানাইজিং টিমের সহায়তায় বিশ্বজুড়ে শত শত রিজিওনাল শীর্ষস্থানীয়রা ৪৮ ঘণ্টার স্প্রিন্ট ইভেন্টের আয়োজন করে। যেখানে অংশগ্রহণকারীরা নাসার প্রস্তাবিত চ্যালেঞ্জগুলোর সমাধান করে গেমস, স্মার্টফোন এবং কম্পিউটার অ্যাপস, ভিডিও, শিক্ষাদানের সরঞ্জামসহ আরো অনেক কিছু তৈরি করে।

তারই ধারাবাহিকতায় ষষ্ঠবারের মতো বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) উদ্যোগে নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ-২০২০’ প্রতিযোগিতা শেষ হয়েছে।

এ বছর নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ ২০২০ এ বাংলাদেশে বেসিস আয়োজিত ৯ টি স্থানে (ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল, রংপুর, রাজশাহী, কুমিল্লা, খুলনা, ময়মনসিংহ) অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বিভিন্ন কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়, এবং তাদের মধ্যে ৯ টি দল চ্যাম্পিয়ন এবং ৮ টি দল রানার আপ হয়। এই ১৭ টি দলকে গ্লোবাল জাজমেন্ট এবং বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে। বাংলাদেশের নির্বাচিত ১৭ টি দল সহ বিশ্বজুড়ে প্রায় ৫৪০ টি দল বিশ্ব প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে।

নাসা স্পেস অ্যাপসটি ন্যাশনাল অ্যারোনটিকস অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (নাসা) এর ইনকিউবেটর উদ্ভাবনী প্রোগ্রাম।
দেশের মধ্যে অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতায় সেরা ১৭ দলের একটি ‘ওরিওন-সিক্স’। এই দলটি চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে চ্যাম্পিয়ন হয়। যেখানে টিম লিডারের দায়িত্বে ঢাকার তেঁজগাও কলেজের মো. সোয়াইব আবদুল্লাহ, সদস্য হিসেবে ইন্সিটিটিউট অব সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজির মো. সারোয়ার জাহান সাবিত, নটরডেম কলেজের সামিন ইয়াসার, তেজগাঁও কলেজের ইব্রাহিম সাদিক তামিম, নটরডেম কলেজের আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ মাহি এবং চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট কলেজের আবরার শহীদ।

যে উদ্ভাবনে লড়বে ‘ওরিওন-সিক্স’

তাদের চ্যালেঞ্জটি ছিল সব বয়সের মানুষের কাছে পরিবেশগত দায়বদ্ধতার গুরুত্বের যোগাযোগের জন্য একটি উপায় তৈরি করা। চ্যালেঞ্জটা জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে পৃথিবীকে বাঁচানোর পাশাপাশি আমাদের নিরাপদ ভবিষ্যতের জন্য একটি টেকসই সমাধান তৈরি করা।

ওরিওন-সিক্স টিম সেখানে গ্রিনএক্স নামে একটি অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করে। যা বন উজাড় ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতা তৈরি করতে উৎসাহ যোগাবে। এই অ্যাপ্লিকেশনটিতে, ব্যবহারকারীরা তাদের যাত্রা শুরু করতে একটি একক উদ্ভিদ রোপণ করবেন। এই অ্যাপ্লিকেশনটি একটি মোবাইল গেম এর মতো, যার মাধ্যমে টিম ওরিওন-সিক্স বনায়নের হার এবং ভবিষ্যতের জলবায়ু হুমকির বিষয়ে সচেতন মানুষের হার বাড়ানোর চেষ্টা করবে।

‘ওরিওন-সিক্স’ এর অন্যতম সদস্য আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ মাহি। তার বাবা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক।

মাহি বলছিলেন, ছোটকাল থেকে আব্বুর ইচ্ছা আমি যেন নতুন কিছু করি, যা একটু আলদা হবে সবার চেয়ে। সেজন্য ছোটকাল থেকে অনেক প্রোগ্রামে অংশ নিচ্ছি। জাতীয় জ্যোর্তিবিজ্ঞান প্রতিযোগিতার ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়ন ছিলাম, এরপর টানা ৩ বার জাতীয় স্কাউট জাম্বুরি করেছি। প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে গিয়ে পুরস্কার জিতেছি তেমনিভাবে ফেলও করেছি। কিন্তু থেমে থাকি নি। আমার বন্ধু সামিন ইয়াসির ও ভালোই সাহায্য করতো এইসব কাজে।

প্রতিযোগিতার বিষয়ে মাহি বলেন, আসলে আমরাই তো নতুন৷ কিন্তু আমরা শুরু থেকেই অনেক বেশি জানার চেষ্টা করেছি এবং এখনো করছি কীভাবে আমরা আন্তর্জাতিক মানের অ্যাপস তৈরি করতে পারি৷ এক্ষেত্রে আমাদের নিজেদের গন্ডি থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা করেছি৷ আশাকরি ভালো ফলাফল পাবো।

‘ওরিওন-সিক্স’এর টিম লিডার মো. সোয়াইব আবদুল্লাহ। তাদের উদ্ভাবন নিয়ে জানালেন, বিশ্বব্যাপী একটি উদ্বেগ রয়েছে যে, আমাদের বর্তমানে পরিবেশগত সমস্যাগুলি ভবিষ্যতের প্রজন্মকে প্রভাবিত করবে। ‘নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ-২০২০’ প্রতিযোগিতায় আমরা তেমনই একটা বিষয় নিয়ে অংশগ্রহণ করেছি। আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের স্লোগান ‘প্লান্ট গ্রীন, সাসটেইন ফিউচার’পরিবেশ বাঁচাতে, বিশ্বকে বাঁচাতে ও আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে বাঁচাতে দুর্দান্ত প্রভাব তৈরি করবে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের দলগুলো পৃথিবীর ২৭০টি শহরের প্রতিযোগীদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। সেখান থেকে ১৭টি দলকে নাসা বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করবে। নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন দলগুলো যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের জন এফ কেনেডি স্পেস সেন্টার ঘুরে দেখার সুযোগ পাবে। সেখানে আয়োজিত জমকালো এক অনুষ্ঠান থেকে সনদ সংগ্রহ করবে।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.