269487

সৌরবিদ্যুৎ বদলাচ্ছে পৃথিবীর চিত্র, হবে আরো সহজলভ্য

‘বিদ্যুৎ তো সবসময় থাকে না, তখন সৌরবিদুৎই ভরসা’ বাক্যটি শুধু একজনের নয়, কোটি কোটি মানুষের। সৌরশক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে এখন বিশ্বের অনেক দেশই এগিয়ে। ভবিষ্যতে আরো সহজলভ্য হতে চলেছে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবস্থা।

সৌরশক্তি কী? সূর্য থেকে যে শক্তি পাওয়া যায় তাকে সৌরশক্তি বলে। পৃথিবীতে যত শক্তি আছে তা সূর্য কিরণ ব্যবহার করেই তৈরি হয়েছে। জীবাশ্ম জ্বালানি যেমন- প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা, তেল ইত্যাদি আসলে বহু দিনের সঞ্চিত সৌরশক্তি।

সৌরশক্তি কীভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে? সূর্য এক বিশাল বড় নিউক্লিয়ার পাওয়ারের গোলা। পৃথিবী পৃষ্ঠের প্রত্যেক বর্গমিটারে সূর্য প্রায় ১০০০ ওয়াট এনার্জি বর্ষিত করে। যদি এই সম্পূর্ণ এনার্জিকে ধরা যেত তবে বিদ্যুতের সব চাহিদা মেটানো সম্ভব হত।

সোলার প্যানেল

সোলার প্যানেল

তবে বিষয়টি ততোটাও সহজ নয়। সূর্য পৃথিবীতে সরাসরি ইলেক্ট্রিসিটি পাঠায় না বরং আলো এবং তাপ মিশ্রিত করে পাঠায়। সরাসরি এই আলো এবং তাপ থেকে তো আর ঘরের বাতি জ্বলবে না, প্রয়োজন হবে ইলেক্ট্রিসিটির। তাই এই আলো আর তাপকে বিদ্যুৎ এ রূপান্তরিত করে ‘সোলার সেল’।

সোলার প্যানেল কী? ঘরের ছাদে বা বাহিরে চাহিদা অনুসারে সোলার প্যানেল লাগানো থাকে। রাতে পাওয়ার ব্যাকআপ পাওয়ার জন্য প্রতিদিন ব্যাটারি লাগানো থাকে। ব্যাটারির সঙ্গে একটি চার্জ কন্ট্রোলার লাগানো থাকে।

ব্যাটারি যদি ওভার চার্জ না হয়, তবে সেটা অনেক ভালো ব্যাকআপ দিতে সক্ষম হয়। ব্যাটারি একবার ফুল চার্জ হয়ে গেলে কন্ট্রোলার আর পিভি মডিউল থেকে ব্যাটারিতে কারেন্ট প্রবাহিত করে না।

সৌরবিদ্যুতের সুফল ভোগ করছে দেশবাসী

সৌরবিদ্যুতের সুফল ভোগ করছে দেশবাসী

বিশ্বে সৌরশক্তি ব্যবহারকারী দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষস্থানে অবস্থান করছে বাংলাদেশ। বিশ্বে ৬০ লাখ সৌর প্যানেলের মধ্যে ৪০ লাখই বাংলাদেশে ব্যবহার করা হয়। ‘রিনিউয়েবলস ২০১৭ গ্লোবাল স্ট্যাটাস রিপোর্ট’-এ এসেছে এই তথ্য।

বাংলাদেশের ছয়টি প্রতিষ্ঠান এখন সোলার প্যানেল উৎপাদন করছে। এছাড়া সৌরশক্তি বিষয়ে অনেক গবেষণা হচ্ছে। বর্তমানে দেশেই তৈরি হচ্ছে সোলার প্যানেল। এজন্য দামও অনেক কমেছে। শুধু বাংলাদেশেই নয় বরং বিগত এক দশক ধরে সৌর শক্তির ব্যবহার দাম নাটকীয়ভাবে হ্রাস পেয়েছে।

প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ফলেই আরো কম খরচে সৌরশক্তি উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়েছে। জীবাশ্ম জ্বালানির তুলনায় সৌরশক্তি অনেকটাই সহজলভ্য ও সস্তা। বিগত এক দশকে সৌরশক্তির ব্যবহার অনেকাংশেই বেড়েছে। বিবিসি’র এক প্রতিবেদন অনুসারে, এ বছর বিশ্বজুড়ে ১১০০ এরও বেশি গিগাওয়াট (জিডাব্লু) সৌর বসানো হবে।

পরিসংখ্যান

পরিসংখ্যান

যার সঙ্গে অন্য সব জেনারেশনের প্রযুক্তিও সংযুক্ত থাকবে। বর্তমান জেনারেশন লেটেস্ট সেল। আগের দ্বিতীয় এবং প্রথম জেনারেশন থেকে অনেক বেশি উন্নত। এটি ৩০ শতাংশের উপর পাওয়ার কনভার্ট করতে সক্ষম সঙ্গে এতে খরচও অনেক কম পড়ে।

যেসব দেশে বা অঞ্চলে সূর্যের আলোর পরিমাণ বেশি সেসব স্থানে খুবই কম খরচে সোলার প্যানেল ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উত্পাদন সম্ভব। আর এ কারণেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এখন সৌরবিদ্যুৎ এর উপর নির্ভরশীল।

বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ভবিষ্যতে প্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে সৌর ব্যবস্থা আরো সস্তা হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে সৌরশক্তি বিশ্বের এক বিরাট অংশের বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শক্তির উত্স হয়ে উঠবে। এটি পরিবেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তনেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

আরো উন্নত প্রযুক্তিনির্ভর হতে চলেছে সোলার এনার্জি ব্যবস্থা

আরো উন্নত প্রযুক্তিনির্ভর হতে চলেছে সোলার এনার্জি ব্যবস্থা

সৌর শিল্প এই দিকনির্দেশা নিয়েই সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। তারা চেষ্টা করছে ২০৩০ সাল নাগাদ সৌর ব্যয়ের খরচ অর্ধেকে নামিয়ে আনার। যাতে বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোও এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উপাদন করতে পারে। এই বিষয়ে ট্যানডেম সিলিকন সেল নামে পরিচিত একটি প্রযুক্তি বিশাল প্রভাব ফেলতে চলেছে।

এছাড়াও সৌর কোষ তৈরিতে ব্যবহৃত রৌপ্য এবং সিলিকনের মতো ব্যয়বহুল উপাদান ব্যবহারের পরিমাণ কমানোর বিষয়েও গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে কীভাবে বাড়িতে বা প্রতিষ্ঠানসমূহে সৌরশক্তি আরো সহজে ব্যবহার করা যায় সে বিষয় নিয়েও কাজ করছে সৌর শিল্প। ভবিষ্যতে পুরো বিশ্বেই সৌরশক্তি পৌঁছে যাবে অনেক কম খরচে। সেইসঙ্গে আশা করা যাচ্ছে, জীবাশ্ম জ্বালানির তুলনায় এটি দামেও অনেক সস্তা হবে।

কৃষিক্ষেত্রে সৌরবিদ্যুতের ব্যবহার

কৃষিক্ষেত্রে সৌরবিদ্যুতের ব্যবহার

আকাশে উড়বে বিমান, সমুদ্রে জাহাজ, সবই চলবে সৌরবিদ্যুতে। বিজ্ঞানীরা তাই ব্যস্ত আছেন লাগসই সৌরবিদ্যুৎ প্রযুক্তি আবিষ্কার নিয়ে। জেনে নিন সৌরবিদ্যুৎ এর নানামুখী ব্যবহার সম্পর্কে-

কৃষিবান্ধব সৌরবিদ্যুৎ

ক্ষেতের মাচা তৈরি হবে সোলার প্যানেল দিয়ে। এ প্যানেল ব্যবহার করে কৃষক একদিকে যেমন বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে, অন্যদিকে এটি জমির জন্য প্রয়োজনীয় ছায়াও সরবরাহ করবে। দুইদিক থেকেই ফলদায়ক এ প্রযুক্তি।

ঘরের ছাদে সোলার প্যানেল

ঘরের ছাদে সোলার প্যানেল

সোলার প্যানেলে ঘরের ছাদ

জার্মানির রাজধানী বার্লিনের বাসিন্দাদের অনেকেই নিজেদের ঘরের ছাদকে বানিয়েছেন সৌরবিদ্যুতের উৎস। এ ধারণাটি পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা গেলে সেটি অনেক সহজ ও কার্যকরী উপায়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সহায়ক হবে। দামও পড়বে কম। প্রতি কিলোওয়াট মাত্র ১০ সেন্ট।

গাড়িতে সোলার প্যানেল

গাড়িতেও সোলার

গাড়িতেও সোলার

গাড়ি নিয়ে জ্বালানির খোঁজে আপনাকে আর পেট্রোলপাম্প খুঁজতে হবে না। চলার সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি নিজেই তার প্রয়োজনীয় জ্বালানি নিশ্চিত করবে।

জাহাজেও সোলার প্যানেল

জাহাজেও সোলার প্যানেল

জাহাজেও সোলার প্যানেল

গাড়িতে সোলার প্যানেল বসাতে পারলে সমুদ্রগামী জাহাজে কেন নয়? এরই মধ্যে সেই কাজও সেরে ফেলেছেন বিজ্ঞানীরা। ছোট্ট এ জাহাজটিতে স্থাপিত সোলার প্যানেল এটিকে চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি জোগানোর পাশাপাশি কিছু শক্তি জমিয়েও রাখতে পারে।

উড়বে বিমানও

উড়বে বিমানও

উড়বে বিমানও

জল ও স্থল শেষে এবার চেষ্টা চলছে সৌরশক্তি ব্যবহার করে আকাশে ওড়ার। এরই মধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে চালানোর চেষ্টা করা হয়েছে ছবির এ ছোট্ট বিমানটিকে। সফলও হয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তবে যাত্রীবাহী বিমানে এ প্রযুক্তি আরোপ করতে কিছুটা সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন তারা।

সৌরবিদ্যুতের রিকশা

সৌরবিদ্যুৎ দিয়ে চলছে রিক্সা

সৌরবিদ্যুৎ দিয়ে চলছে রিক্সা

রিকশার মতো এ বাহনের ছাদটি তৈরি হয়েছে সোলার প্যানেল দিয়ে। বাহনটি যতই চলবে, ততই জ্বালানি তৈরি করবে এটি। কেনিয়ার নাইরোবির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বানিয়েছেন এই রিকশা।

বিদ্যুৎ পাবে সবাই

পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বের প্রায় এক বিলিয়ন লোক বিদ্যুৎ সেবা থেকে বঞ্চিত। সৌরবিদ্যুতের ব্যবহার বাড়ানো গেলে সবাইকেই সহজেই বিদ্যুৎ সেবার আওতায় আনা যাবে। আর তা শুরুও হয়েছে এরই মধ্যে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে রুয়ান্ডার বাসিন্দারা নিজেদের বাড়ির ছাদে স্থাপন করছেন সোলার প্যানেল।

সূত্র: বিবিসি, ডয়েচে ভেলে

পাঠকের মতামত

Comments are closed.