269256

অনলাইনে পণ্য বিক্রি করে লাখপতি!

কামরুন নাহার মিমির জন্ম ও বেড়ে ওঠা কুমিল্লার দেবিদ্বারে। মিমি বর্তমানে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। কৃষক বাবার বড় মেয়ে তিনি। বড় ভাই না থাকাতে একমাত্র আয়ের মানুষ মিমির বাবাই।
ছোট বেলা থেকেই আত্ববিশ্বাসী মিমি শুধুই আত্মনির্ভরশীল হওয়ার স্বপ্ন দেখে আসছিল। ২০১৬ সালে মিমি কুমিল্লায় আসেন পড়াশোনার জন্য। কুমিল্লায় এসেই শুরু করেন প্রাইভেট পড়ানো। টিউশনের টাকাতেই চলতো তার পড়াশোনা। এভাবেই মিমি আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠে।

হঠাৎ বন্ধুদের মাধ্যমে যুক্ত হয় উই নামক উই-কমার্স প্লেট ফর্ম। এর পরেই আসে উদ্যোক্তা হওয়ার চিন্তা। কর্মজীবন শুরু করার লক্ষ্যে এপ্রিলে কুমিল্লার খাদি থ্রি পিস ও পাঞ্জাবি নিয়ে শুরু ই-কমার্স উদ্যোগ ‘পল্লীর হাঁট’।

প্রাচীনকাল থেকেই এই উপমহাদেশে হস্তচালিত তাঁত শিল্প ছিল বিখ্যাত। দেশের চাহিদা মিটিয়ে সবসময় এই তাঁতের কাপড় বিদেশেও রফতানি হতো। কুমিল্লার খাদি কাপড়ের কদর আজো বিশ্বজুড়ে।

মিমি উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনে এই চিন্তা গুলোই কাজ করছিল। শূন্য থেকে মিমি কিভাবে লাখপতি হলেন তা জানতে এবং ডেইলি বাংলাদেশ পাঠককে জানাতে কথা হয় তার সঙ্গে।

উদ্যোক্তার আগ্রহ কিভাবে তৈরি হলো?

মিমি বলেন, সব সময়ই ইচ্ছা ছিলো নিজের জন্য নিজেই কিছু করবো। আমার বন্ধু কারিমা আক্তার রুমি আমাকে এই পথ দেখায়। সে আমাকে একটা ফেইসবুক গ্রুপে জয়েন্ট করায়। গ্রুপটাতে অনেক উদ্যোক্তা দেখি। আমার ধীরে ধীরে খাদি নিয়ে কাজ করার চিন্তা আসে। পরে আমার ছোট চাচার সঙ্গে এই বিষয়টা শেয়ার করি। চাচা আমাকে মানসিকভাবে আশ্বস্ত করেন। পরে চাচাই আমাকে তাঁতি বাড়িতে নিয়ে যান।

প্রথমে পাঞ্জাবি আর থ্রি-পিস নিয়ে কাজ শুরু করি। এরপর শাড়ি ও বিভিন্ন পণ্য যুক্ত করি। এভাবেই আমার শুরু। ই-কমার্স করার জন্য নির্দিষ্ট সময় ও অফিসের প্রয়োজন নেই। সবদিক থেকেই ই-কমার্স পেশা আমার স্বপ্ন থেকে সত্যিতে পরিণত হয়।

আপনার চ্যালেঞ্জগুলো কিভাবে মোকাবিলা করেছেন?

মিমির বলেন, উদ্যোক্তা জীবন মানেই চ্যালেঞ্জে ভরপুর আর নারী হলেতো কথাই নেই। কিন্তু আমার বিষয়টা সম্পূর্ণ ভিন্ন। কেননা আমাকে পরিবার থেকে সাপোর্ট দিয়েছে। তেমন কোনো চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়নি। এসব ক্ষেত্রে বেশি সাপোর্ট পেয়েছি ছোট চাচা মো. সোহেলের কাছ থেকে।

ঝামেলায় পড়েছি প্রোডাক্ট পাঠানো নিয়ে। লকডাউনের মাঝে প্রতি সপ্তাহে ৩/৪ বার বাড়ি থেকে কুমিল্লা যেতে হতো শুধু কুরিয়ার করার জন্য। কারণ আশাপাশে কোনো কুরিয়ার ছিল না। যেহেতু শুরু থেকে প্রোডাক্ট প্যাকেজিং, কাস্টমার, ডেলিভারি সবকিছু একা ম্যানেজ করতে হয়েছে, সেক্ষেত্রে আমার উদ্যোক্তা জীবন ভীষণ চ্যালেঞ্জিং ছিলো। মূলত আমার কাজের প্রতি আন্তরিকতা আর ভালোবাসাই এসব চ্যালেঞ্জ জয় করতে সাহায্য করেছে।

উই থেকে প্রাপ্তি গুলো কি?

উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম (উই) দেশি পণ্যের সবচেয়ে বড় প্লাটফর্ম। আমরা যারা দেশি পণ্য নিয়ে কাজ করি তাদের জন্য উই ফেসবুক গ্রুপ একটা আত্মবিশ্বাসের জায়গা।

উইতে এসে মাত্র ৫ মাসে যে নাম ও সম্মান পেয়েছি তা আমাকে আরো পাঁচ বছর এগিয়ে নিয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা করোনা ভাইরাসের প্রভাবে ব্যবসা গুটিয়ে বসে থাকাতে হতো সেখানে উইতে এক্টিভ থেকে লাখ টাকা সেল পেয়েছি।

আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি?

মিমি বলেন, ‘পল্লীর হাট’ নিয়ে আমার একটা লক্ষ্য আছে। নিজেই একটা শো-রুম করার চিন্তা আছে। তবে সেটা আরো সময় লাগবে। মূল কথা হলো কুমিল্লার খাদি নতুন ডিজাইনে বিশ্ব দরবারে ছড়িয়ে দিতে চাই।

লাখপতি হওয়ার অনুভূতি কি?

মিমির উত্তর, সত্যিই লাখপতি হবো এমন আশায় এটা শুরু করিনি। উই গ্রুপ আর আমার বন্ধুদের সাহায্য ও আমার চাচার সাহায্যে এতটুকু এসেছি। এখন পর্যন্ত প্রায় দেড় লাখ টাকার পণ্য বিক্রয় করেছি। তাদের ধন্যবাদ জানাই। এছাড়াও যারা বেকার তাদের উদ্যোক্তা হওয়ার আহবান জানাই।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.