268634

তিন গম্বুজ ও ২৮ মিনারের চোখ ধাঁধানো জামালপুর মসজিদ

এই মসজিদটি প্রায় ১৫৩ বছরের পুরনো। জানেন কি? বাংলাদেশের অন্যান্য যত মসজিদ রয়েছে সেসবের চেয়ে জামালপুরের এই মসজিদটি বেশ ব্যতিক্রমী। এই মসজিদটির নির্মাণকাজে যুক্ত ছিলেন ভারতের উত্তর প্রদেশের রাজহংস নামের এক ব্যক্তি। তিন গম্বুজ বিশিষ্ট অনন্য ঘরানার এই মসজিদটি মুঘল আমলের চিহ্ন বহন করছে।

তাজপুর পরগনার জমিদারবাড়ি থেকে রওশন আলী নামক এক ব্যক্তি এ অঞ্চলে আসেন এবং তারই কোনো বংশধর পরবর্তীতে এখানে জমিদারী পায় । ১৮৬২ সালে এই জমিদার বাড়ির ভিত্তি স্থাপন করেন। বাড়িটির নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার আগেই ১৮৬৭ সালে মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। মসজিদটির নির্মাণকাজ বেশ ব্যয়বহুল হওয়ায় এটি সমাপ্ত হলেও রাজবাড়ি তৈরির কাজ অসম্পূর্ণই থেকে যায়।

জমিদার বাড়ির ছাদ

জমিদার বাড়ির ছাদ

বর্তমানে এই মসজিদ ও জমিদার বাড়ির পাশে একটি জাদুঘরও রয়েছে। জমিদার রওশন আলী এই জমিদার এস্টেটের মালিক। তারই দশম বংশধর রুম্মন রশীদ চৌধুরী। তিনি জানান, আগেকার মানুষেরা এখনকার থেকে বেশ ধর্মভীরু ছিল। আর এই অঞ্চলে যখন জমিদার রওশন আলী আসেন, তখন এখানে মাটির মসজিদ ছিল। একদিন প্রচণ্ড ঝড় ও বৃষ্টিতে মসজিদ ভেঙে যায়। ঠিক তখন জমিদার বাড়ির নির্মাণ কাজ চলমান ছিল। যেহেতু মসজিদের চেয়ে উঁচু করে বাড়ি নির্মিত হচ্ছিল, এজন্য এলাকাবাসীরা এর সঙ্গে মসজিদ ভেঙে যাওয়ার বিষয়টিকে যুক্ত করে।

অতঃপর ধর্মভীরু মানুষেরা জানায়, মসজিদের চেয়ে বাড়ি উঁচু হওয়ায় এটি ভেঙে গেছে তাই বাড়ির আগে মসজিদ নির্মাণ করতে হবে। এলাকাবাসীর এই দাবির সঙ্গে জমিদার রওশন আলীও একমত ছিলেন। তাই আগে মসজিদটির নির্মাণকাজ চালু করা হয়। আর এটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল হওয়ায় পরে জমিদার বাড়ির নির্মাণকাজ বাধাপ্রাপ্ত হয়। এরপর থেকে আজো জামালপুরের এই রাজবাড়িটি অসম্পূর্ণ অবেস্থাতেই পড়ে রয়েছে। তবে মসজিদটির সৌন্দর্য আজো মানুষকে আকর্ষণ করছে।

দৃষ্টিনন্দন এক মসজিদ

দৃষ্টিনন্দন এক মসজিদ

সম্পূর্ণ ইট দিয়ে নির্মাণ করা হয় এই মসজিদটি। এর নির্মাণ কৌশল যে কারোও চোখকে শীতল করতে প্রস্তুত। জমিদার রওশন আলীর দশম বংশধর রুম্মন রশীদ চৌধুরী জানান, এই মসজিদটি নির্মাণ করতে কমপক্ষে ১০ থেকে ১২ বছর সময় লেগেছিল। ভারতের নামজাদা এক নকশাকারক রাজহংস এই মসজিদের কারিগর ছিলেন। বর্তমানে এই জমিদারবাড়ির বিভিন্ন কক্ষগুলো তালাবন্ধ অবস্থায় রয়েছে। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো, সেখানে রয়েছে এটি কুয়া। এর বয়স প্রায় ৩৫০ বছর। এখনো জমিদারের বংশধরেরা সেই কুয়ার পানি পান করে।    সব কাজে ব্যবহারের জন্য টলটলে জল উঠানো হয় কুয়া থেকে।

জমিদার বড়ির পাশে ও মসজিদের সামনেই রয়েছে একটি বৈঠকঘর। এখনো সাজানো গোছানো রয়েছে একচালার এই খোলামেলা বৈঠকঘরটি। পারিবারিক বৈঠকখানা হিসেবেই এখন এটি ব্যবহৃত হয়। ২০০৮ সালে এই একচালা বৈঠকখানার ভেতরের চালটিতে সুন্দর নকশা করা হয়। যদিও দর্শনার্থীরা জমিদার বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করতে পারে না।

৩৫০ বছর বয়সী কুয়া

৩৫০ বছর বয়সী কুয়া

এই মসজিদ অঙ্গনে প্রবেশমুখে বেশ বড় সুন্দর একটি তোরণ আছে। মসজিদের উপরে বড় বড় তিনটি গম্বুজ আছে। গম্বুজের শীর্ষদেশ কাচ পাথরের কারুকাজ করা । এই মসজিদের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এর মিনারগুলো সম্পূর্ণ নকশা করা । মসজিদের ছাদে মোট ২৮টি মিনার আছে। একেকটি মিনারের উচ্চতা প্রায় ৩৫ ফুট এবং প্রতিটিতে নানা ধরনের কারুকাজ করা রয়েছে। এত মিনারওয়ালা কোনো মসজিদে দেখতে পাওয়া এক বিরল ব্যাপার।

মসজিদটির চার অংশে ভাগ করা হয়েছে । তা হলো মূল কক্ষ, মূল কক্ষের সঙ্গে ছাদসহ বারান্দা, ছাদবিহীন বারান্দা। ছাদবিহীন বারান্দাটি অর্ধ প্রাচীরে বেষ্টিত হয়ে পূর্বাংশে মাঝখানে চার থামের উপর ছাদ বিশিষ্ট মূল দরজা রয়েছে। খোলা বারান্দার প্রাচীরে এবং মূল দরজার ছাদে ছোট ছোট মিনারের নানা ধরনের নকশা রয়েছে।

জমিদার বংশের দশম বংশধর

জমিদার বংশের দশম বংশধর

মূল কক্ষের বাইরের দিক থেকে পরিমাপ হচ্ছে প্রায় ২৯ × ৪৭ ফুট এবং ছাদবিহীন বারান্দার পরিমাপ প্রায় ২১ × ৪৭ ফুট। মূল কক্ষের কোণগুলো তিন থাম বিশিষ্ট। এর জানালা দুটি, দরজা তিনটি, কুলুঙ্গি দুটি। পুরো মসজিদটির ভিতরে এবং বাইরের দেয়ালগুলোতে প্রচুর লতাপাতা ও ফুলের নকশা আছে।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.