268323

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন রুকসানার হৃদয়বিদারক গল্প

লেখাপড়ার পাঠ চুকানোর আগে বিয়ে, স্বামীর সংসারে কাজের চাপে ক্রনিক ফ্যাটিগ সিনড্রোম থেকে ক্লান্তি অনুভব ও আতঙ্কে ভুগছিলেন। জিমে হেনস্থা, ক্যারিয়ারের শুরুতে ব্যর্থতার মুখোমুখিও হন। এমন অতিষ্ঠ জীবনকে মাড়িয়ে ওয়ার্ল্ড কিক বক্সিং অ্যাসোসিয়েশনের (৪৮ কেজি ওজন শ্রেণি) বিশ্ব খেতাব জিতেছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ তরুণী রুকসানা বেগম।

সম্প্রতি জীবনের কঠিন পথ নিয়ে লেখা ‘বর্ন ফাইটার’ নামের বই প্রকাশ করেন রোকসানা। এতে ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের নজরে আসেন তিনি। দ্য গার্ডিয়ানকে দেয়া সাক্ষাৎকারে জীবনের কঠিন ও হৃদয়বিদারক সময়ের গল্প বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন রোকসানা।

ইস্ট লন্ডনে জন্মগ্রহণকারী বাংলাদেশি তরুণী রুকসানা বলেন, ২৩ বছর বয়সে আমার বিয়ে ঠিক করে পরিবার। বিয়ের আগে ভবিষ্যত স্বামীকে চিনতামও না। ভয় পেয়ে মাকে বিষয়টি জানাই। কিন্তু পরিবার জানিয়ে দেয়, বিয়ের সবকিছু পাকা হয়ে গেছে। ইস্ট লন্ডনের ব্যাংকার ব্যক্তির সঙ্গে জোর করেই আমাকে বিয়ে দেয়া হয়েছিল। তখন হতাশ হয়ে পড়ি। সংসারের কাজ করতে করতে কাউকে বলতেও পারতাম না যে আমি ক্লান্ত। সব সময় স্বামীর পরিবারকে খুশি করে চলতে হতো।

অনুশীলনের সময় তোলা রোকসানার ছবি।

অনুশীলনের সময় তোলা রোকসানার ছবি।

দিন দিন অবস্থা বেগতিক হতে থাকে। কয়েক মাসের ভেতর প্যানিক অ্যাটাকের শিকার হই। কারণে-অকারণে আতঙ্কগ্রস্ত হতে থাকি। তখন চিকিৎসক আমাকে বাবার বাড়িতে ফেরার পরামর্শ দেন।

ওই সময় বিশাল বেকায়দায় পড়ি। ঐতিহ্যের দোহাই দিয়ে মা ও ভাই স্বামীর সংসারে ফিরে যেতে বলেছিল। বাবা ছিলেন দোটানায়। একবার বাবাকে বোঝানোর চেষ্টা করি। কিন্তু তার প্রতিক্রিয়া ভালো ছিল না।  এরইমধ্যে স্বামী ভিভোর্স পাঠিয়ে দেয়। ওই ভিভোর্স পেয়ে মনে হয়েছিল, আল্লাহ এটাই আমার মুক্তি। এরপর মা-বাবা আমার পরিস্থিতি বুঝতে পারেন।

রোকসানা বলেন, পরিবারকে বক্সিং পেশা শুরু করি। জিমনেশিয়ামে আরেক নারী ফাইটার আমার জীবনকে অতিষ্ঠ করে তোলেন। উচ্চতা ৫ ফুট ৩ ইঞ্চি থাকায় হেনস্তা করতে থাকেন তিনি।

২০১১ সালে প্রথমবার সবাইকে চমকে দেন রুকসানা। নিজের কর্নারে সহায়তা ছাড়াই ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন হন তিনি। কয়েক রাউন্ড হওয়ার পর এক ড্যানিশ ট্রেইনার রুকসানা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার বিষয়টি বুঝতে পারেন। তখন কর্নারে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন তিনি।

পাঁচ বছর পর লন্ডনের দ্য রাউন্ড চাপেল মিলনায়তনে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হন রুকসানা। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর বাড়ি ফিরে রাতেই মা-বাবাকে ডেকে ওঠান।  এ খবর পেয়ে ঘুম থেকে উঠা বাবা বন্ধুদের সঙ্গে মেয়ের জয় উদযাপন করতে চলে যান। কিন্তু সকালের ঘটনা ছিল উল্টো।

জিমে অনুশীলনের সময় রোকসানার ছবি।

জিমে অনুশীলনের সময় রোকসানার ছবি।

রোকসানা বলছিলেন, ঘুম থেকে উঠার পর অসুস্থবোধ করছিলাম। দোয়া নিতে বাবার কাছে যাই। তখন আমার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার খবর না জানার ভান করেন বাবা। তবে পরের দিন বাবা আর নিজেকে সামলে রাখতে পারেননি। আমার সঙ্গে উল্লাসে মেতে উঠেন। আর মা অনেকক্ষণ জড়িয়ে ধরেছিলেন।

রোকাসানার আদি বাড়ি সিলেটের বালাগঞ্জে। ১৬ বছর বয়সে সবশেষ দেশে আসেন তিনি। পেশায় কিক বক্সার। কিন্তু স্থাপত্য বিষয়ে লেখাপড়া করেছেন রোকসানা।

২০০৯ সালের ওয়ার্ল্ড অ্যামেচার কিকবক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপ, ২০১০ সালের ব্রিটিশ অ্যাটমওয়েট মুয়ে থাই চ্যাম্পিয়ন, ২০১১ সালের ইউরোপীয় ক্লাব কাপ অ্যামেচার মুয়ে থাই চ্যাম্পিয়ন, ২০১২ সালের আন্তর্জাতিক ফেডারেশনের মুয়াইথাই অ্যামেচার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন, ২০১৬ সালে ওয়ার্ল্ড কিকবক্সিং অ্যাসোসিয়েশন চ্যাম্পিয়শিপে রোকসানার সাফল্য রয়েছে।

সূত্র- দ্য গার্ডিয়ান।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.