267998

যত্রতত্র যখন-তখন শুয়ে পড়া ও বাচ্চা পয়দা করা ছাড়া আর কোন ক্রিয়েটিভিটি কি নেই এই জাতির ?

ডা. নাসিমুন নাহার :  একটা বিষয় নোটিশ করলাম, আজকাল ক্লাশ সেভেন এইটের মেয়েরা frequently প্রেগন্যান্ট হচ্ছে ! ব্যাপারটা খুব আজব এবং অবশ্যই দুঃখজনক। বলার অপেক্ষাই রাখে না যে এগুলো সব বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে ঘটছে। হুমম কিশোরী বেলায় প্রেম জীবনে আসতেই পারে। সেটা স্বাভাবিকও। কিন্তু তাই বলে এই বয়সে প্রেগন্যান্ট !!! এটা একটু বাড়াবাড়ি হয়ে যায় না ? কিশোরী বেলার প্রেমে শরীর কিভাবে আসে ?

এসব কেসে আমাদের সমাজে সাধারণত ছেলেদেরকে দায়ী করা হয়। মেয়েগুলোকে ভিক্টিম বানানো হয় । কিন্তু সব সময় যে ছেলেরাই মেয়েগুলোকে use করছে ঘটনা কিন্তু তা না। বহুত পাকনার হাড্ডি ঝুনা নারকেল টাইপ মেয়ে দেখতে পাই ডাক্তার হবার সুবাদে। যাদের কাছে psysical relation করতে পারাটাই যেন একটা যোগ্যতা ! নিজেরে বিশেষ কিছু প্রমাণ করা !!
Yeah I lost my virginity at 13 ! বলাটাই যেন ক্রেডিট ।

ব্যক্তিগত কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করি আপনাদের সাথে,
আমি একটা আন্তর্জাতিক আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আবাসিক চিকিৎসক হিসেবে কাজ করেছিলাম বছরখানেক। তো সেখানে adolescent child health care নিয়ে হেলথ সেশন করতে হতো আমাকে। মজার কথা হলো আমি তাদেরকে কি সেশন/ ওয়ার্কশপ করাব তারা সব জেনে বসে আছে দেখতাম। গ্রেড থ্রি/ ফোরের বাচ্চা মেয়েগুলো পিরিয়ড, প্যাড এমনকি intercourse নিয়ে পর্যন্ত ঝরঝরে ডিসকাশ করতো ডক্টর মিসের সাথে। ছেলেরা তো আরো ভয়ংকর। মাস্টারবেশন, ড্রাগস, ইয়াবা, স্মোকিং এ ইরেকটাইল ডিসফাংশন হয় কিনা তাদের ডিসকাশনে চলে আসতো এসব টপিক। কি বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে? ঘটনা কিন্তু পুরোই সত্যিই। এমনকি আইসিটি ক্লাশের জন্য ব্যবহৃত পিসিতে তারা নিজেদের প্রাইভেট পার্টসের ন্যুড পর্যন্ত শেয়ার করতো ! ধরাও খেত। কারন পুরো ক্যাম্পাসের আইটি ডিপার্টমেন্ট 24/7 এক্টিভ থাকতো। কিন্তু কোন রকম ভয় বা পাপবোধ দেখতাম না ওদের চোখে মুখে।

কি বলব ? বাচ্চাগুলোর শরীরে কিছুই নাই আই মীন মাত্রই development period চলছে তবুও শরীরকে ঘিরেই তাদের সব ভাবনা চিন্তা হতাশ করতো আমাকে।
আমি হয়তো খানিকটা সেকেলে বলে এসব হজম করতে বেগ পেতাম। আমার কষ্ট হতো। ওদের এই বয়সে আমরা তিন গোয়েন্দাতে বুঁদ হয়ে থাকতাম। গান, আবৃত্তি, ডিবেট ক্লাশে দৌঁড়াতাম। নামাজ না পড়লে আম্মুর হাতে মাইর খেতাম । আর ওরা প্ল্যান করে কিভাবে মা বাবাকে চাপ দিয়ে নতুন মডেলের গ্যাজেট/ মেকাপ বক্স আদায় করবে। এমনকি নতুন মডেলের গাড়ির আবদার করতে দেখেছি গ্রেড নাইনের বাচ্চাকে!!!

আপনারা হয়তো ভাবছেন বড়লোকের পোলাপাইন এমনই তো হবে। বাপের মায়ের অবৈধ পয়সার খেসারত এসব।
না, ঘটনা কিন্তু তা না।

2013তে দেশের প্রথম সারির একটা এনজিওর শেল্টার হোমসের মেডিকেল অফিসার হিসেবে কাজ করেছি। মূলতঃ পথ শিশুদেরকে আশ্রয়, একাডেমিক এবং কারিগরী শিক্ষার ব্যবস্থা করতো এনজিওটা। ওখানে হোমসে থাকা চৌদ্দ বছরের কিশোরীকে প্রেগন্যান্ট হতে দেখেছি আমি। ছুটির মধ্যে হেড অফিস থেকে আমার উপর অর্ডার এবং চাপ এসেছিল যেভাবেই হোক abortion এর ব্যবস্থা করে সেইফ রিপোর্ট সাবমিট করার জন্য ! হিস্ট্রি নিতে যেয়ে জানতে পারি মেয়েটি স্কুল শেষে যে পার্লারে যেত কাজ শিখতে(কারিগরি শিক্ষার অন্তর্ভুক্ত ছিল এটা) ওখান থেকেই ওর কয়েকজনের সাথে পরিচয় ঘটেছিল। ঐ বয়সেই মেয়েটির কয়েকজন সেক্স পার্টনার ছিল ! এবং মেয়েটি নিজে আমাকে হিস্ট্রি দিয়েছিল সে মোটেও অখুশি বা অনুতপ্ত না এইসব নিয়ে। She loudly told me that she was enjoying those times !

এই হচ্ছে সমাজের চিত্র। অবশ্যই এসব অধঃপতনের জন্য বাবা মা এবং সমাজকে দায়ী করব আমি। খালি সন্তান জন্ম দিলেই তো হবে না। তাকে পারিবারিক শিক্ষা, নৈতিকতা , মূল্যবোধ তো শেখাতে হবে। আর সমাজ তো পুরোই মুখোশধারী আমাদের। শেল্টার হোমসের নামে চলে বানিজ্য ! কাঁড়ি কাঁড়ি ফান্ড ঠিকই আসে । কিন্তু তা এ সমাজের উঁচুতলার সুশীলদের, টকশো ওম্যানদের ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স ভারী করে। Disadvanced children রা তার খুব সামান্যই ভোগ করে।

সকালবেলা এই ধরনের টপিক নিয়ে লেখার কোন ইচ্ছে ছিল না আমার। লিখলাম কারন আমার বাসায় কয়েক বছর আগে কাজ করত যে খালা সে ভোরে ফোন করে কাঁদতে কাঁদতে জানাল, তার তের বছরের মাইয়ার পেটে বাচ্চা। পেরেম করছিল মাষ্টরের লগে। লতাপাতা দিয়ে বাইর করার চেষ্টা করছে বাড়ীতে। এখন প্রচুর ব্লিডিং হচ্ছে । কি করবে ?

দ্রুত হাসপাতালে নেবার পরামর্শ দিলাম। চোখে ভেসে উঠলো খালার মেয়েটার মুখটা। হাফ প্যান্ট পরা মেয়েটা খালার সাথে আসতো আমার কোয়ার্টারে। আল্লাহ যেন ওকে বাঁচিয়ে দেন।

আচ্ছা, যত্রতত্র যখন তখন শুয়ে পড়া ছাড়া এবং বাচ্চা পয়দা করা ছাড়া ( sorry for using these words) আর কোন ক্রিয়েটিভিটি কি নেই এই জাতির ?
©Dr.Nasimon Nahar

পাঠকের মতামত

Comments are closed.