267707

সেদিন মূল্যবোধের এক হৃদয়স্পর্শী দৃষ্টান্ত দেখেছিল বিশ্ব

বিশ্বে প্রতিদিন কত ঘটনাই না ঘটছে। তবে এর কয়টিই বা মানুষ মনে রাখে! বিভিন্ন ক্রীড়া ইভেন্টেও প্রতিদিন অসংখ্য ঘটনা ঘটে থাকে। এর মাঝে কিছু ঘটনা স্থান, কাল, পাত্র ছাপিয়ে স্থায়ীভাবে জায়গা করে নেয় মানুষের মনে। বহুদিন পরও স্মৃতিচারণ হতে থাকে সেসব ঘটনার, যেখানে ফলাফলের চেয়ে অন্য দিকগুলোই বেশি উচ্চারিত হয়। তেমনই এক হৃদয়স্পর্শী ঘটনার সাক্ষী হয়ে আছে নাভারার দৌড় প্রতিযোগিতা।
সময়টা ২০১২ সাল। স্পেনের নাভারায় চলছে বুলার্ডা ক্রস কান্ট্রি ম্যারাথন রেস। প্রতিযোগিতার শেষ দিকে সর্বাগ্রে ছিলেন কেনিয়ার হয়ে অলিম্পিকে ব্রোঞ্জ জেতা আবেল মুতাই। তার থেকে মাত্র কয়েক পা পেছনে ছিলেন স্প্যানিশ দৌড়বিদ ইভান ফার্নান্দেজ। বলা যায় এই প্রতিযোগিতায় আবেলের প্রথম হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র।

তবে এমন সময় মনের অজান্তেই ভুল করে বসেন আবেল। ফিনিশ লাইন অতিক্রম করেছেন ভেবে থেমে যান তিনি। অথচ তখনও সীমারেখা থেকে প্রায় ১০ মিটার (৩২ ফুট) দূরে ছিলেন এই দৌড়বিদ। এমতাবস্থায় আবেলকে পিছনে ফেলে প্রথম হয়ে স্বর্ণ জয়ের সুবর্ণ সুযোগ পেয়ে যান ইভান। অন্য প্রতিযোগীরা তখনো ঢেঁড় পেছনে।

হয়তো অন্য কেউ হলে ঠিকই এই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে জিততে চাইতো। তবে বিবেকের তাড়নায় এই কাজ করেননি ইভান। আবেলকে পিছন থেকে চিৎকার করে বলতে থাকেন, ‘তুমি এখনো ফিনিশ লাইন শেষ করোনি। দৌড় চালিয়ে যাও।’

ইভানের স্প্যানিশ ভাষা বুঝতে পারেননি কেনিয়ান আবেল। সে একইভাবে দৌড় থামিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। এটা বুঝতে পেরে আবেলকে পেছন থেকে হালকা ধাক্কা দিয়ে ফিনিশ লাইনটা পার করে দেয় ইভান। নিজে থেকে যান তার পিছে। ঘটনা বুঝতে পেরে ফিনিশ লাইন পার হওয়ার পরই এগিয়ে এসে ইভানের দিকে হাত বাড়িয়ে দেন আবেল, জানান কৃতজ্ঞতা।

স্বাভাবিকভাবেই এমন একটি অসাধারণ ঘটনায় হৈ চৈ পড়ে যায়। প্রতিযোগিতা শেষে ইভানকে এমন মহত্ব প্রদর্শনের কারণ জিজ্ঞাসা করা হয়। সেখানে এই দৌড়বিদ বলেন, ‘আমার স্বপ্ন একদিন আমাদের সমাজে সবাই অন্যকে নিয়ে ভাববে। আমি তাকে জিতিয়ে দেইনি, সে তো জিতেই যাচ্ছিলো।’

ইভান আরো বলেন, ‘ঐ অবস্থা থেকে আমি হয়তো সত্যি জিততে পারতাম। কিন্তু আমার কাছে এই জয়ের কোনো মূল্য থাকতো না। হয়তো একটা মেডেল পেতাম ঠিকই, কিন্তু সম্মান পেতাম? তাহলে সেটা দিয়ে আমি কি করতাম? জয়টা তার প্রাপ্য ছিল।’

সেদিন হয়তো প্রথম হননি ইভান ফার্নান্দেজ। তবে মূল্যবোধের যে মানবিক দৃষ্টান্ত দেখিয়েছেন, সেটা তাকে প্রথম হওয়া স্বর্ণপদকের চেয়ে অনেকগুণ বেশি সম্মান এনে দিয়েছে। স্মৃতির পাতায় হয়েছেন অমর একজন, পেয়েছেন মানসিক প্রশান্তি। মূল্যবোধের এক হৃদয়স্পর্শী ঘটনার দৃষ্টান্ত হিসেবে সর্বদাই উচ্চারিত হবে ইভানের নাম।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.