267609

নির্মাণাধীন ও মুক্তি প্রতীক্ষিত সিনেমার হালচাল

করোনাভাইরাসের অদৃশ্য শক্তির কাছে জিম্মি পুরো পৃথিবী। থেমে গেছে বিশ্ব সংস্কৃতির নানা মাধ্যম। শুটিং নেই, নেই ডাবিং; নেই চির চেনা লাইট-ক্যামেরা-অ্যাকশন, নেই নতুন গানের কাজ, সিনেমা হল বন্ধ থাকার কারণে নেই নতুন সিনেমা মুক্তিও। ঢাকাই সিনেমার অবস্থাও একই দোলাচলে। বলা চলে করোনা যেন ঢালিউডের জন্য মরার উপর খাড়ার ঘা।
কারণ, আমাদের সিনেমার অবস্থা বেশ কয়েক বছর ধরেই একেবারেই নাজুক। ভালো হল নেই, সিনেমার গল্প নেই, ভালো অভিনেতা-অভিনেত্রীর অভাব, নেই ভালো নির্মাণ। সব মিলিয়ে অচলাবস্থা। শতকের উপর থেকে সিনেমা মুক্তির তালিকায় নেমে এসেছে ৪০-এর ঘরে। তবে অনেকেই মনে করেছিলেন চলতি বছরটি সিনেমার বছর হবে। তালিকায় ছিলো বেশ কিছু ভালো মানের সিনেমা। যা মুক্তি পেলে হয়তো দর্শকদের মনে ফের আশার সঞ্চার হতো। কিন্তু করোনায় সব থেমে আছে।

গেল ঈদুল ফিতরে মুক্তির তালিকায় ছিলো বড় বাজেটের চার ছবি। এগুলো হলো- ‘মিশন এক্সট্রিম’, ‘শান’, ‘বিদ্রোহী’ ও ‘মন দেব মন নেব’। আর মার্চ মাসেই ‘নীল মুকুট’, ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ ২’, ‘চল যাই’, ‘নারীর শক্তি’, ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’, ‘বান্ধব’, ‘নীল ফড়িং’, ‘জ্বীন’, ‘আমার মা’, ‘গোর’, ‘পরাণ’ ছবিগুলোও মুক্তির কথা ছিলো। কিন্তু করোনার কারণে গত মার্চ মাস থেকে সিনেমা হল বন্ধ থাকায় সিনেমাগুলো মুক্তি পায়নি।

শুটিং বন্ধ হয়ে গেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনীভিত্তিক সিনেমা ‘বঙ্গবন্ধু’। এর শুটিং শুরু হওয়ার কথা ছিলো ১৭ মার্চ। করোনার কারণে ভারতীয় নির্মাতা শ্যাম বেনেগাল ছবিটির কাজ পিছিয়ে দিয়েছেন। আরো বন্ধ হয়ে গেছে- অনন্ত জলিলের ‘দিন: দ্য ডে’, নঈম ইমতিয়াজ নেয়ামুলের ‘গাঙচিল’, ‘জ্যাম’; রায়হান রাফীর ‘স্বপ্নবাজী’, ‘ইত্তেফাক’; সৈকত নাসিরের ‘ক্যাসিনো’, ‘আকবর’; সাইফ চন্দনের ‘ওস্তাদ’; অনন্য মামুনের ‘নবাব এলএলবি’সহ বেশ কয়েকটি ছবির শুটিং।

এদিকে করোনার নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো শুটিংয়ের অনুমতি দিলেও স্বাস্থ্য ঝুকি নিয়ে কাজে ফিরছেন না নির্মাতা প্রযোজক শিল্পী ও কলাকুশলী। অপেক্ষায় রয়েছেন পরিস্থিতি স্বাভাবিকের।

চিত্রনায়ক অনন্ত জলিল ও বর্ষা অভিনীত ছবি ‘দিন: দ্য ডে’ ছবির প্রায় ৮০ ভাগ শেষ হয়েছে। এটি পরিচালনা করছেন ইরানি পরিচালক মুর্তজা অতাশ জমজম। এ ছবির গানের শুটিং করার কথা ছিলো তুরস্ক ও ইউরোপের কয়েকটি দেশে। কিন্তু করোনার কারণে শুটিং বন্ধ রয়েছে। এই কারণে নির্ধারিত সময়ে মুক্তি পাচ্ছে না ছবিটি।

এ বিষয়ে অনন্ত জলিল বলেন, ‘দিন: দ্য ডে’ এর অল্প কিছু শুটিং বাকি আছে। ইচ্ছা ছিলো বাকি অংশটুকু বিদেশে শুটিং করার। কিন্তু পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত শুটিং করছি না।

পুলিশি অ্যাকশন ছবি ‘ঢাকা অ্যাটাক’র দ্বিতীয় কিস্তি ‘মিশন এক্সট্রিম’। এ ছবিটি দুই পর্বে নির্মিত হচ্ছে। প্রথম পর্ব মুক্তির জন্য প্রস্তুত থাকলেও শেষ হয়নি দ্বিতীয় পর্বের কাজ। প্রথম পর্ব রোজার ঈদে এবং দ্বিতীয় পর্ব কোরবানির ঈদে মুক্তি পাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু ঘোষণা অনুয়ায়ী ছবিটি মুক্তি পাচ্ছে না।

ছবির পরিচালক সানী সানোয়ার বলেন, আমাদের শুটিং শেষ হয়েছে অনেক আগেই। বেশিরভাগ ডাবিংও শেষ। বাকি আছে অল্প কিছু। ফাইনাল কিছু কারেকশন, ভিএফক্সের এডিটিং বাকি আছে। শিগগিরই এগুলো শেষ করার ইচ্ছা ছিলো। কিন্তু পরিস্থিতি অনুকূল না হলে কাজ শুরু করা যাচ্ছে না।

বড় বাজেটের নির্মাণাধীন ছবিগুলোর মধ্যে রয়েছে দীপঙ্কর দীপন পরিচালিত ‘ঢাকা-২০৪০’ ও ‘অপারেশন সুন্দরবন’। ছবি দুটির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে সঠিক সময়ে শুটিং শেষ করতে পারছেন না বলে জানান নির্মাতা।

দীপঙ্কর দীপন বলেন, অপারেশন সুন্দরবন ছবির তিন দিনের শুটিং বাকি আছে ঢাকার অংশের। ঢাকা-২০৪০ ছবির আউটডোরের দৃশ্য বেশি বাকি। তাই এখনই বলতে পারছি না কী করবো। পরিস্থিতি বিবেচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবো।

নির্মাতা রায়হান রাফির ‘পরান’ নামের একটি ছবি মুক্তির অপেক্ষা রয়েছে। ‘ইত্তেফাক’ আর ‘স্বপ্নবাজি’ ছবির কাজ থেমে আছে করোনার কারণে। এ নির্মাতা বলেন, আমরা এখনই শুটিংয়ে যাবো না, কারণ আমি আরো একটু সময় নিয়ে দেখতে চাই পরিস্থিতি কোথায় যায়। কাজ গুলো শেষ করতে পারছি না। তাই যে সময়ে ছবিগুলো মুক্তি পাওয়ার কথা ছিলো সেসময়ে মুক্তি দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতি আগে কখনো আসেনি। তাই সবাইকে সচেতন হয়েই কাজ করতে হবে।

আরেক নির্মাতা নঈম ইমতিয়াজ নেয়ামুলের ছবি দিয়ে দীর্ঘদিন পর ফেরার কথা ছিল পূর্ণিমা ও ফেরদৌসের। কিন্তু তার নির্মাণাধীন ছবি ‘গাঙচিল’ ও ‘জ্যাম’ এর শুটিংও আটকে আছে শেষ পর্যায়ে এসে। করোনার এই পরিস্থিতিতে কবে নাগাদ বাকি অংশের শুটিং শুরু হবে সেটিও নিশ্চিত করতে পারেননি নির্মাতা।

মুক্তির মিছিলে বেশ আলোচনায় ছিলো নাদের খান পরিচালিত ভৌতিক ঘরনার সিনেমা ‘জ্বীন’। এই ছবিতে প্রথমবার জুটি বেঁধেছেন ছোট পর্দার অভিনেতা সজল ও পূজা চেরি। হল বন্ধ থাকায় ছবিটি অনলাইন মাধ্যমে মুক্তি দেয়ার কথা ভাবছেন বলে জানিয়েছেন ছবির পরিচালক। তবে সব কিছুই পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে।

এছাড়াও আলোচিত বেশ কয়েকটি ছবির কাজ থেমে আছে। এই তালিকায় রয়েছে সৈকত নাসিরের দুই ছবি- ‘ক্যাসিনো’, ‘আকবর’। ক্যাসিনোতে শাকিব খানের বাইরে গিয়ে প্রথমবার নিরবের সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করছেন বুবলি। আর ঢাকার গ্যাং কালচার নিয়ে নির্মিত ‘আকবর’ এ প্রথমবার জুটি বেঁধেছেন বুবলি ও ইমন। এ ছবিগুলোর কাজও করোনার কারণে থেমে আছে বলে জানান নির্মাতা সৈকত নাসির।

এই ছবিগুলো সঠিক সময়ে মুক্তি পেলে ঘুরে দাঁড়াতে পারতো ঢাকাই সিনেমা- এমনটিই ধারণা সিনেমা সংশ্লিষ্টদের। সিনেমার অভাবে একের পর এক হল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু ছবিগুলো মুক্তি পেলে সিনেমা হল মালিকদেরও ব্যবসা ফের চাঙ্গা হতো বলে মনে করেন পরিবেশক সমিতির নেতারা। এখন অপেক্ষা পরিস্থিতি স্বাভাবিকের। এরপরেই বোঝা যাবে আলোচিত এই ছবিগুলো কতটা সুখকর হতে পারে বাংলা চলচ্চিত্রের জন্য।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.