267559

ভারতের অঙ্গরাজ্যে প্রচলিত ছিলো স্তন কর বা ব্রেস্ট ট্যাক্স !

কৌশিক চক্রবর্তী : খুব বেশি দিন আগে নয়। মাত্র দুশ’ বছর আগে দক্ষিণ ভারতের ত্রিবাঙ্কুর অঙ্গরাজ্যে প্রচলিত ছিলো— স্তন কর বা ব্রেস্ট ট্যাক্স।
এর আরেকটি নাম মুলাকরম (Mulakaram)। আজকের অত্যাধুনিক যুগে যাদের পক্ষে এটা বিশ্বাস করাও শক্ত তারা বা উৎসাহী মন গুগল করে দেখে নিতে পারেন। সময়টা ব্রিটিশ শাসনকাল 1803 সাল। তখন নিয়ম ছিলো ব্রাহ্মণ ব্যতীত অন্য কোনো হিন্দু নারী তার স্তনকে ঢেকে রাখতে পারবে না। শুধুমাত্র ব্রাহ্মণ শ্রেণীর হিন্দু নারীরা তাদের স্তনকে এক টুকরো সাদা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতে পারতো, বাকি হিন্দু শ্রেণীর নারীদেরকে প্রকাশ্যে স্তন উন্মুক্ত করে রাখতে হতো। তবে যদি কোনো নারী তার স্তনকে কাপড় দ্বারা আবৃত করতে চাইতো, তবে তাকে স্তনের সাইজের উপর নির্ভর করে ট্যাক্স বা কর দিতে হতো। এই নির্মম করকেই বলা হয় স্তন কর বা ব্রেস্ট ট্যাক্স।

প্রতিবাদ করলেও নারীদের বুকের উপর আরোপিত কর বন্ধ করতে পারেনি কেউ। সেটা বন্ধ করেছিলেন শেষপর্যন্ত কেরালার চেরথালা শহরের নাঙ্গেলি নামের অতি সাধারণ এক নারী। নারী হিসেবে নাঙ্গেলিকে আরও অনেকের মত জনসম্মুখে অস্বস্তি ও লজ্জা পেতে হয়েছে।তাই তিনি ঠিক করলেন প্রতিবাদ করবেন। তিনি সাদা কাপড়ে বক্ষ আবদ্ধ করে সমাজে বেরোলেন। সমাজের হর্তা কর্তারা হন্তদন্ত হয়ে নাঙ্গেলির বাড়ি গিয়ে হাজির হলেন। খাজনা চাইলেন। কিন্তু খাজনা না দিয়ে নাঙ্গেলি যেটা করলেন, সেটা দেখার জন্য কেউ প্রস্তুত ছিলেন না। নাঙ্গেলি দুই স্তন কেটে দিলেন সবার সামনে।খাজনা আদায়কারীরা ভয় পেয়ে পালালেন।

ঠিক এর পরের দিন নারীদের বুকের উপর খাজনা তুলে নিলেন ত্রিভাংকুরের মহারাজা স্যার মুলাম থিরুনাল। কারণ বুকের ক্ষত থেকে রক্তক্ষরণে নাঙ্গেলির মৃত্যুতে জনগণ ক্ষেপে গিয়েছিলেন। ঘটনার সময় তার স্বামী কান্দাপ্পান উপস্থিত ছিলেন না। তিনি ফিরে এসে দেখলেন তার স্ত্রীর দেহ চিতায় জ্বলছে।ভারতের সতীদাহ আইন নিয়ে অনেক আলাপ-বিলাপ হয়েছে এযাবৎ। স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসায় নাঙ্গেলি র স্বামী নিজেকেও উৎসর্গ করেছিলেন সেই চিতায়। মৃত স্ত্রীর চিতায় স্বামীর প্রাণ দেয়ার এই ঘটনা সমগ্র মানব ইতিহাসের আর কোথাও নেই। এই নির্ভীক সাহসী প্রেমিক যুগলের আত্ম বিসর্জনের মাধ্যমেই সমাপ্তি ঘটেছিলো এক ঘৃণ্য প্রথার।

তবে স্তন কর রোহিত হলেও দক্ষিণ ভারতে নারীদের স্তন আবৃত করার জন্য বহু সংগ্রাম করতে হয়েছে। এমনকি বিষয়টি নিয়ে রক্তক্ষয়ী দাঙ্গা পর্যন্ত করতে হয়েছে তাদের। ১৯ শতাব্দীর মাঝে এসে যখন কিছু হিন্দু নারী তাদের শরীরের উপরের অংশ আবৃত করার অধিকার দাবি করে, তখন হিন্দু পুরোহিতরা স্পষ্ট করে বলে দেয়- নীচু বর্ণের নারীদের শরীরের উপরের অংশ আবৃত করা ধর্ম-বিরোধী। বিষয়টি নিয়ে ১৮৫৯ সালে দক্ষিণ ভারতে একটি দাঙ্গা সংগঠিত হয়। এই দাঙ্গার উদ্দেশ্য ছিলো হিন্দু নারীদের শরীরের উপরের অংশ আবৃত করার অধিকার আদায় করা। এই দাঙ্গা ‘কাপড়ের দাঙ্গা’ হিসেবে পরিচিত।

 

পাঠকের মতামত

Comments are closed.