অবিশ্বাস্য লবণ পর্বতমালা, যা বিশ্বে দ্বিতীয়টি নেই!
পৃথিবীতে জনসংখ্যা এবং তাদের প্রয়োজনে প্রাকৃতিক অনেক নিদর্শন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন জঙ্গল উজার করে কিংবা নদী নালা ভরাট করে বসতি স্থাপনের প্রতিযোগিতা চলছে সব জায়গাতেই। কলকারখানার বর্জ্য নদীর পানিকে করেছে ব্যবহারের অযোগ্য। এমন অনেক কিছুই আজ বিলীন প্রায়।
তেমনই কয়েক মিলিয়ন বছর আগে, পারস্য উপসাগরটি আজকের চেয়ে অনেক অনেক গুণ প্রশস্থ ছিল। পানির স্তরও ছিল অনেক বেশি। এর দক্ষিণে আরব উপদ্বীপের বিশাল অংশ এবং পশ্চিমে ইরান। সমুদ্রের পানি বাষ্প হয়ে যাওয়ায় এর থেকে প্রচুর লবণ পাওয়া যায়।
এই লবণ এখন একেবারে পাহাড় সমান। বৃষ্টির পানিতে আশেপাশের পাহাড় থেকে ধুয়ে যাওয়া পলি মাটি লবণের স্তরটি আরো মজবুত করেছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পলির স্তরটি আরো ঘন হয় এবং নীচের লবণের উপরে চেপে বসে। এই রকম অবিশ্বাস্য লবণের স্তম্ভগুলো ইরানের দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিম এবং মধ্য অঞ্চলে বেশি দেখা যায়।
এর মধ্যে জাগ্রোস পর্বতমালা রয়েছে পারস্য উপসাগরে ইরানের উপকূলের সমান্তরালের দিকে। আরবীয় প্লেট এবং ইউরেশিয়ান প্লেটের সঙ্গে সংঘর্ষে যখন জাগ্রস পর্বতমালা গঠিত হয়েছিল তখন লবণের এই স্তরগুলোতে প্রচুর পরিমাণে খাঁজ তৈরি হয়। ইউনেস্কোর মতে, বিশ্বের আর কোথাও লবণের এমন গম্বুজ দেখা যায়নি।
সাইটটি এখনো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী সাইট নয়। তবে ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাউটের অন্তর্ভুক্তির জন্য বিবেচিত হচ্ছে। লবণের হিমবাহের কাঠামো অনেকটা বরফ হিমবাহের মতো। গড়ে লবণ হিমবাহগুলো প্রতি বছর কয়েক মিটার অগ্রসর হতে পারে। পললতা, ক্ষয় এবং ভাঙ্গনের হার যদি ধীর গতিতে কমতে থাকে তবে সামান্য প্রভাব ফেলবে।
বৃষ্টিপাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লবণের হিমবাহগুলো দ্রুত গতিতে কমতে থাকে। কারণ অনেক বেশি বৃষ্টিপাতে লবণ দ্রবীভূত হতে পারে। জাগ্রোস পর্বতমালার দক্ষিণাঞ্চলে, ১৩০ টিরও বেশি লবণের গম্বুজ রয়েছে। যা বিশ্বের অন্যতম উল্লেখযোগ্য স্থান হিসেবে জাগ্রোস পর্বতমালাকে মনে করা হয়।
লবণের গম্বুজ ছাড়াও, নামকদান পর্বতমালার ছয় দশমিক আট কিলোমিটার দূরে বিশ্বের দীর্ঘতম লবণের গুহা, লবণের হিমবাহ, লবণের উপত্যকা, কার্ট সিঙ্কহোল এবং লবণের ঝর্ণাও রয়েছে। লবণ হিমবাহগুলো বেশিরভাগ শুষ্ক অঞ্চলেই পাওয়া যায়। আর শুষ্ক আবহাওয়ার কারণেই সেগুলো সংরক্ষিত থাকে। দক্ষিণ ইরান বেশিরভাগ লবণের হিমবাহ এবং বিশ্বের সর্বাধিক সক্রিয় লবণ হিমবাহের স্থান।
কুহ-এ-নামক লবণের হিমবাহ দক্ষিণ-পূর্ব ইরানে অবস্থিত। এই লবণের বৈশিষ্ট্যটি দুটি লবণের হিমবাহ দ্বারা গঠিত। এর মধ্যে বড়টি ৫০ থেকে ১০০ মিটার পুরু এবং তিন হাজার মিটার দীর্ঘ। এটি সমুদ্রতল থেকে প্রায় এক হাজার ৬০০ মিটার উপরে।
ইরানের লবণের গম্বুজগুলো ভবিষ্যতে তেল অনুসন্ধানকারীদের জন্য ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। কারণ লবণের গম্বুজগুলোতে পাওয়া দুর্ভেদ্য শিলাগুলো প্রায়শই অন্যান্য শিলা স্তরগুলোর নীচে পেট্রোলিয়াম পাওয়া যায়। অন্যান্য অঞ্চল যেমন- যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো, উত্তর সাগর, জার্মানি এবং রোমানিয়ায় লবণের গম্বুজগুলো এরইমধ্যে পেট্রোলিয়ামের গুরুত্বপূর্ণ উৎস হয়েছে।
এমনকি বহু বছর ধরে এই অঞ্চলগুলো এসব খনিজ সম্পদ সংগ্রহে ব্যবহার করা হচ্ছে। যা এইসব অঞ্চলের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হবে। জাগ্রোস পর্বতমালার খোঁজ প্রথম নভোচারীরা পান। ১৯৯৫ কিংবা ১৯৯৭ সালে একদল নভোচারী মহাকাশ থেকে পৃথিবীর ছবি তুলছিল, আর তখনই তাদের নজরে আসে এই স্থানটি। বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, স্থানটি ইরানে। আর এটি লবণের পর্বত। সালটা নিয়ে নানা মতবাদ রয়েছে। সর্বশেষ ২০০৮ সালে মহাকাশ থেকে আবারো এই স্থানের ছবি নেয়া হয় গবেষণার জন্য।
সূত্র: অ্যামিউজিংপ্লানেটস