267221

বিস্ময়কর প্রেম: ৬০০০ বছর ধরে মৃত্যুও তাদের আলিঙ্গনকে পৃথক করতে পারেনি!

যুগে যুগে অনেক প্রেমই সাক্ষী হয়ে রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কিছু সফলতার গল্প, আবার রয়েছে কিছু ব্যর্থতার কাহিনীও। বর্তমানে সত্যিকারের প্রেম-ভালোবাসা খুঁজে পাওয়া দায়। তাই বলে যে থেমে আছে প্রেম, তা কিন্তু নয়।

প্রায় ৬০০০ বছর আগের এমন এক প্রেমের গল্প নিয়েই সাজানো হয়েছে আমাদের আজকের প্রতিবেদন। যা আপনার হৃদয়স্পর্শ করবে।

‘লাভার্স অফ ভালদারো’- প্রাণহীন এক যুগল। যাদের রক্ত মাংস মিশে গেছে মাটির সঙ্গে। তবু হাড়ে প্রতিফলিত হচ্ছে অপার প্রেম। মরে গিয়েই প্রায় ৬ হাজার বছর ধরে একে-অপরকে আলিঙ্গন করে রেখেছে এই তরুণ-তরুণী। আলিঙ্গনরত অবস্থায় তাদের হয়েছে মৃত্যু। এই মৃত্যুও তাদের আলিঙ্গনকে পৃথক করতে পারেনি। প্রায় ৬০০০ বছর ধরে মাটির তলায় ঘুমিয়ে রয়েছেন দুজনে। নিশ্চিন্তে নির্লিপ্তে। বিশ্বজুড়ে প্রতিনিয়ত ঘটে চলা সমস্ত ঘটনাকে এক প্রকার নস্যাৎ করে দিয়েই মাটির সঙ্গে মিশে রয়েছেন তারা। এতদিনেও একটু বদলায়নি তাদের অবস্থান। রোমিও – জুলিয়েট, হীর- রঞ্জার প্রেমের উপাখ্যানের সঙ্গে এরাও তৈরি করে নিয়েছে তাদের নিজের পরিচিতি।

লাভার্স অফ ভালদারো

লাভার্স অফ ভালদারো

২০০৭ সালের প্রত্নতাত্ত্বিকেরা উত্তর ইতালির মান্তুয়া গ্রামে সাক্ষী হয় এই প্রেমের। এক ব্যবসায়ী তার বাড়ির পাশের ফেলে রাখা জায়গায় খননকার্য চালান। এই সময় মাটির তলা থেকে পাওয়া যায় দু’টি কঙ্কাল। যা মাটির নিচে মিশে যাওয়া অন্যান্য কঙ্কালের মত নয়। সবাই আশ্চর্য হয়ে আবিষ্কার করে, কঙ্কাল দুটো একে অপরের ঠিক মুখোমুখি, আলিঙ্গন করে আছে একে অন্যকে। কালের নিয়মে তাও জরাজীর্ণ।’লাভার্স অফ ভালদারো’ এই নামেই লোকে চেনেন তাদের।

সমস্তকিছু পরীক্ষা- নিরীক্ষা করার পর প্রত্নতাত্ত্বিকেরা জানিয়েছেন, ওই কঙ্কালদু’টি ৫০০০ থেকে ৪০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের। তারা জানিয়েছেন, এভাবেই হয়ত তাদের দু’জনকে কবর দেয়া হয়েছিল। কিংবা তারা এভাবেই মাটির তলায় চাপা পড়ে মারা গিয়েছিলেন।

প্রত্নতাত্ত্বিকদের তরফে জানানো হয়েছে, মৃত্যুর সময় ওই যুবক – যুবতীর বয়স ছিলো ১৮ থেকে ২০ বছরের মধ্যে। উচ্চতা ছিল ৫ ফুট ২ইঞ্চির কাছাকাছি। মৃত্যুর পরেও এদের দু’জনকে কউ আলাদা করতে পারেনি।

লাভার্স অফ ভালদারো

লাভার্স অফ ভালদারো

এ সময় কঙ্কাল দুইটির সঙ্গে ওই সময়ের একটি ছুরি পাওয়া যায়। এ থেকে বিয়োগাত্মক প্রেমের উপাখ্যানের মতই সবাই অনুমান করেন যে এই তরুণ-তরুণীকে হত্যা করা হয়েছে। তবে তাদের হত্যা করার কোনো লক্ষণ গবেষকেরা পাননি।

অথবা হতে পারে তীব্র শীতের রাতে এই যুগল আলিঙ্গনরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। তারপরেও কঙ্কাল দুইটির একে অপরকে আঁকড়ে ধরে রাখা নিয়ে রহস্যের জন্ম দিয়েছে। মৃত্যুর পরেই তাদের এই অবস্থায় রাখা হয়েছিল বলে গবেষকদের অনুমান।

লোকে বলে সত্যিকারের ভালোবাসার কোনো দিনেও মৃত্যু হয় না। আর ছ’হাজার বছরের সেই ভালোবাসা আরো একবার সেই কথাই প্রমাণ করল। বর্তমানে তাদের নতুন ঠিকানা ইতালির মাঁতুয়ার ন্যাশনাল আর্কিওলজিকাল মিউজিয়ামে।

সূত্র: ডেইলি বাংলাদেশ

পাঠকের মতামত

Comments are closed.