267227

পুরো পৃথিবীতে তারাই নীল রঙের মানুষ, জীবন কেটেছে অতি কষ্টে

নীল মানব, অন্য কোনো গ্রহ নয় পৃথিবীতেই ছিলেন তারা। অনেকেই আছেন এডভেঞ্চার ধরনের বই বা সিনেমা দেখতে পছন্দ করেন। এর মধ্যে হলিউডের এভাটার সিনামাটি নিশ্চয় দেখেছেন। জনপ্রিয়তা পাওয়ায় বেশ কয়েকটি সিকুয়ালও তৈরি করা হয়েছে।

এখানে দেখানো হয়েছে নীল গায়ের রঙের মানুষদের। দেখা যায় ভিন গ্রহের একদল মানুষের বেঁচে থাকার লড়াইয়ের কাহিনী। নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে লড়াই করে যাচ্ছে প্রতি মুহূর্তে। ভিন গ্রহের এসব মানুষ আমাদের কাছে এলিয়েন নামেই পরিচিত। সিনেমায় একটি যুগলের প্রেমও দর্শকদের বেশ আন্দোলিত করেছে।

জানেন কি? কল্পনায় শুধু নয়, পৃথিবীতেও ছিল নীল মানব। সময়টা ১৮২০ সাল। মার্টিন ফুগেট নামের এক ব্যক্তি পূর্ব কেনটাকি এর প্রত্যন্ত অঞ্চল ট্রাবলসোম ক্রিকে এসেছিলেন। তিনি ছিলেন অনাথ। পরিবার বা নিজের মানুষ বলতে কেউ ছিল না তার। এখানে এসে তিনি এলিজাবেথ স্মিথ নামের একটি মেয়েকে ভালোবেসে বিয়ে করেন। নিজেদের মতো করে একটি বাড়ি তৈরি করেন। সেখানেই সুখে বাস করতে থাকেন এই দম্পতি।

তবে কিছুদিন পড়েই ঘটে বিপত্তি। মার্টিন জানতে পারেন এলিজাবেথের রয়েছে এক সমস্যা। কিছুদিন পর পর তার শরীরের রং নীল হয়ে যায়। এমনিতে এলিজাবেথ সাদা চামড়ার মানুষ ছিলেন। এই দম্পতির ঘরে জন্ম নেয় সাত সন্তান। তাদের মধ্যে চার জনের শরীরের রং নীল ছিল। এলিজাবেথের একটি বিরল জিনগত সমস্যা ছিল। যেটি জন্মসূত্রে তার চার সন্তান পেয়েছে। তাদের গায়ের রং ছিল পুরোপুরি নীল।

প্রতিবেশীরা তাদের দেখে হাসাহাসি করত। তাদের সঙ্গে কেউই মিশতে চাইত না। ভাবত এটা বুঝি কোনো অভিশাপের কারণে হয়েছে। বলতে গেলে মার্টিন আর এলিজাবেথ তাদের সন্তানদের নিয়ে একঘরে হয়ে থাকত। এমনিতে তাদের এলাকাটি প্রত্যন্ত এক অঞ্চল ছিল। যে কারণে খুব কম মানুষই সেখানে বসবাস করতে আসত।

এই দম্পতির এক ছেলে জাকারি এলিজাবেথের এক বোনকে বিয়ে করে। এরপর এই ফুগেট পরিবারে বংশধররাও নীল রংয়ের চামড়া নিয়েই জন্মাতে থাকে। মার্টিন না জেনেই এলিজাবেথকে বিয়ে করেছিলেন। তিনি জানতেন না এলিজাবেথের এমন একটি বিরল রোগ রয়েছে। তারা সমাজে বর্নবৈষম্যের স্বীকার হতেন প্রতিনিয়ত।

এই ব্যক্তির অ্যালার্জির চিকিৎসা করতে গিয়ে চামড়া নীল হয়ে গিয়েছিল

এই ব্যক্তির অ্যালার্জির চিকিৎসা করতে গিয়ে চামড়া নীল হয়ে গিয়েছিল

অবশেষে ১৯৬০ সালে একদল গবেষক তাদের এই রংয়ের কারণ খুঁজতে থাকে। বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয় তাদের শরীরে। হেমাটোলজিস্ট বিশ্ববিদ্যালয় যেটি কেনটাকি মেডিকেলের অন্তর্গত। সেখানকার একজন চিকিৎসক এবং গবেষক ডা. কেউইন ব্লু  এই গবেষণাটি করেন। এই সময় ফুগেট পরিবারের দুইজন সদস্য ম্যাডিসন এবং ক্যাউইন তৃতীয়কে পরীক্ষা করেন তিনি। ডা. কেউইন ব্লু জানান ফুগেট পরিবারের সদস্যরা মেথেমোগ্লোবাইনেমিয়া নামে একটি রোগে ভুগছেন। যখন লোহিত রক্ত ​​কণিকার মেথেমোগ্লোবিনের মাত্রা এক শতাংশের বেশি হয়। তখন ত্বক নীল হয়ে যায়। আরো বেশি হলে ঠোঁট বেগুনি হয়ে যায় এবং এমনকি লাল রক্ত ​​একটি চকোলেট বাদামি রং ধারণ করে।

এই সিনড্রোমটি বেনজোকেন এবং জাইলোকেনের মতো কিছু রাসায়নিকের সংস্পর্শে বা উত্তরাধিকার সূত্রেও জিনগতভাবে পেয়ে থাকে অনেকে। গবেষণাটি করতে ডা. কেউইন রুথ পেন্ডারগ্রাস নামে একজন নার্স নিয়োগ করেছিলেন। রুথ পেন্ডারগ্রাসও এই গবেষণার কাজ করতে আগ্রহী ছিলেন। কারণ তিনি এর আগে হাসপাতালে একটি নীল গায়ের রং এমন এক নারীকে দেখে ছিলেন। নীল চামড়াযুক্ত ওই নারী রক্ত ​​পরীক্ষা করতে এসেছিলেন। তার অস্বাভাবিক চেহারাটি পেন্ডারগ্রাসকে হতবাক করেছিল। এর জন্যই তিনি এর কারণ অনুসন্ধানে আগ্রহী ছিলেন।

তবে এক সময় ফুগেট পরিবার এর থেকে মুক্ত হতে পেরেছিল। ডা. কেউইন তাদের চিকিৎসা করেছিলেন। তাদের দৈনিক মিথাইলিন নীল রঙের ট্যাবলেট নির্দিষ্ট পরিমাণে খাওয়ানো হয়। আর মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই ত্বকের নীল রঙটি নষ্ট হয়ে যায় তাদের।

প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে তারা অনেক বিব্রতকর পরিস্থিতি পার করেছে। জানা যায়, ফুগেট পরিবারের পরিচিত শেষ উত্তরসূরি ছিলেন বেনজামিন বেঞ্জি স্ট্যাসি। তিনি ১৯৭৫ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার গায়ের রং জন্ম থেকেই নীল ছিল। তবে সাত বছর বয়সের মধ্যেই তার ত্বকের রং স্বাভাবিক হয়ে ওঠে। বর্তমানে এই পরিবারের কারো গায়ের রং নীল নয়। মনে করা হয় বিরল এই ব্যাধিটি থেকে মুক্ত হতে পেরেছেন তারা।

সূত্র:মিস্টেরিয়াসফ্যাক্টস

পাঠকের মতামত

Comments are closed.