হাত-পা ছাড়াই তিন ফুটের জনসন আজ সাফল্যের চূড়ায়!
মনের জোড়েই নানা প্রতিকূলতা অতিক্রম করে বিশ্ব জয় করেছেন। এমন উদাহরণ রয়েছে অনেক। তেমনই একজন ৫২ বছর বয়সী আমেরিকার নিউ ইয়র্ক শহরের বাসিন্দা জন রবিনসন। জন্ম থেকেই তিনি বিকলাঙ্গ ছিলেন। হাত বলতে সামান্য বাহু আর পা থেকেও যেন নেই। হাটুর কাছেই পায়ের পাতা। সেখানে ছোট্ট ছোট্ট কয়েকটি আঙ্গুল। তা দিয়েই কোনো রকমে হাঁটেন তিনি।
১৯৬৮ সালে আমেরিকার নিউ ইয়র্ক শহরে তার জন্ম। তবে সৃষ্টিকর্তার অসীম দান পেয়েও জনের বাবা মা খুশি হতে পারেননি। যেন আকাশ ভেঙে পড়েছিল তাদের মাথায়। পায়ের নিচের মাটিও দুলছিল। মনে হচ্ছিল এখনই বুঝি ধ্বসে পড়বে সব। জনের বাবা মা তেমনটাই বলেছিলেন। মাঝে মাঝে তাদের মনে হত সব কিছুই স্বপ্ন। ঘুম ভাঙলেই বুঝি দেখবেন সব ঠিক আছে। তবে তা হয়নি। জন জন্ম থেকেই বিকলাঙ্গ ছিল। তার দুটি হাত নেই এবং পা ছোট খুবই ছোট। জন রবিনসনের উচ্চতা মাত্র ৩ ফুট ৯ ইঞ্চি। তার বাবা মার তাকে নিয়ে চিন্তার শেষ ছিল না। তারা ভাবতেন, জন কি কোনোদিন স্কুলে যেতে পারবে? সে কি কখনো পেন্সিল ধরতে পারবে? সে কি আর দশজনের মতো স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবে?
জন রবিনসনের বাবা একজন অবসরপ্রাপ্ত সাধারণ পুরোহিত ছিলেন। জন যখন ছোট ছিলেন তখন তার মা-বাবা তার দিকে তাকাতে বা তাকে ধরতে চান নি। তবে যখন তারা তাকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরে এলো তখন তারা সদ্য জন্ম শিশুর মায়ায় জড়িয়ে যান। জন রবিনসন ছোট থেকেই সাধারণ জীবনযাপন করতে চেয়েছিলেন। তিনি নিজেকে কখনোই অন্যদের থেকে আলাদা ভাবতেন না।
অন্যদের মতোই এই সাধারণ জীবনকে অসাধারণ বলেই ভেবেছেন। যদিও তার হাতে বা পায়ে কোনো সম্প্রসারণ অঙ্গ ছিল না। তবুও তিনি তার কর্ম জীবন বা ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেন নি। তিনি তার শ্রম দিয়ে সফল হওয়ার চেষ্টা করেছেন। পরিশ্রম, প্রতিভা ও বিশ্বাসের জন্য সে ব্যবসায়ে সফলতা লাভ করেছে। এমনকি একটি পরিবার গড়ে তুলতে সফল হয়েছে। যা খুব কম লোক আশা করেছিল।
রবিনসন যখন প্রথম স্কুলে ভর্তি হয় তখন স্কুলের সবাই তাকে নিয়ে হাসাহাসি করতো। তাকে ঘৃণা করতো। তাকে কেউ পছন্দ করতো না।জন আমেরিকার নিউ হাউস স্কুল থেকে স্নাতক শেষ করে। তারপর তিনি নিউ ইয়র্কের উপকূলের এনবিসি সংস্থায় কাজ করতেন। এরপর তিনি আলবানির পাবলিক ব্রডকাস্টিং টেলিভিশন স্টেশন ডব্লিউএমএইচটি এর কর্পোরেট সহায়তার পরিচালক ছিলেন। তিনি কঠোর নেতৃত্বের সঙ্গে কাজ করতেন। পরবর্তীতে এসব টেলিভিশন বিজ্ঞাপন তার ভাগ্য বদলে দেয়।
তরুণ রবিনসন সকল প্রতিকূলতাকে হার মেনে হাঁটা শিখেছিলেন। প্রথমে তিনি পায়ে ভর করে হাঁটতেন। তারপর তিনি কৃত্রিম পদ্ধতির সাহায্যে হাঁটা শিখেছিলেন। এরকম করে হাঁটতে প্রথমে তার সমস্যা হয়েছিল। পরবর্তীতে সে সম্পূর্ণভাবে হাঁটা শিখে যায়।রবিনসন গাড়ি চালানো ও গল্ফ খেলা শিখেছিলেন। তিনি নিজেকে সাজাতেও শিখেছিলেন। তার বেশ কয়েকটি কাজ বিভিন্ন মানুষকে কৌতূহলী করে তুলেছে। তিনি নিজের হাতে শার্ট পরতেন এবং শার্টের বোতামগুলো নিজেই আটকাতেন।
তিনি সকল বাঁধা বিপত্তি অতিক্রম করে চূড়ান্তে পৌঁছান। তার জীবনের সকল কাজেই তিনি সফলতা লাভ করেছেন। প্রতিবন্ধীরা হলো দেশের দুর্বল শক্তি। তারা দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন বাঁধার মুখোমুখি হয়। জনের এই গল্পটি তাদের জন্য অনুপ্রেরণামূলক। এই গল্পটি প্রতিবন্ধী ও অসহায়দের শেখায় শক্তিশালী হতে যা প্রাথমিকভাবে অসম্ভব বলে মনে হয়।