266223

সেন্টমার্টিনের সেই পর্যটক ঢাকায় ফিরে যা বললেন

করোনার কারণে টানা ৮০ দিন সেন্টমার্টিনে (কক্সবাজার) আটকে ছিলেন তিন পর্যটক। রোজা, ঈদ সব শেষে যেদিন গণপরিবহন চলতে শুরু করল তখন তারা ঢাকায় ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন। তাদের নিয়ে দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যম সংবাদ প্রকাশের পর অনেকেই তাদের ব্যাপারে জানতে আগ্রহ দেখাচ্ছিলেন। ঢাকায় ফিরে এসেই যুগান্তরের কাছে লিখিত অনুভুতি জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সালেহ রেজা আরিফ

গত ১৫ মার্চ ২০২০ থেকে সেন্টমার্টিন থাকার পর মঙ্গলবার সকালে সেন্টমার্টিন থেকে ট্রলারে টেকনাফে পৌঁছাই। বিকেলে সরাসরি ঢাকার একটা বাসে রওনা দিয়ে সুস্থভাবে বুধবার ভোরে ঢাকায় নামি। আমরা সবাই সুস্থ আছি এবং ঠিকভাবে ঢাকায় পৌঁছেছি।

সেন্টমার্টিন থেকে ফিরে আসাটা আসলেই খুব কষ্টের ছিল। অনেক অনুভূতি হয়ত ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না, তাই ‘কষ্ট’ শব্দটাই ব্যবহার করে প্রকাশ করার বৃথা চেষ্টা করলাম আরকি।

সেন্টমার্টিন অনেকবার যাওয়া হয়েছিল এবং কোনবারই ৪/৫ দিনের বেশি থাকা হয়নি। বেশি দিন থাকা হয়নি বিধায় লোকালদের সঙ্গে খুব বেশি মেশার সুযোগ হয়নি।

এবার দ্বীপের লোকদের রোযা, ঈদ কাটানোর ফলে তাদের ব্যাপারে আরও বেশি জানার সুযোগ পেলাম। তাদের আন্তরিকতা আসলেই অন্যরকম। বেশিরভাগ সময় তারা অনেকে এসে আমাদের খোঁজ-খবর নিয়ে যেতেন।

আবার কখনো সৈকতে হাটার সময় অপরিচিত কারো থেকে আমাদের খোঁজ-খবর নেওয়ার ব্যাপারটা অন্যরকম ভাল লাগার জায়গা তৈরি করেছিল। ঈদের দিন থেকে প্রায় দিনই তাদের আপ্যায়ন পেয়েছি। তিনজন অপরিচিত মানুষকে তারা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যেভাবে আপন করে নিয়েছিলেন এতে আমরা আসলেই মুগ্ধ।

বেশিদিন থাকার ফলে দ্বীপের প্রতি আলাদা একটা মায়া আর সখ্যতা গড়ে উঠেছিল, যেটা কাটিয়ে আসাটা ছিল সত্যিই কঠিন। ট্রলারে যতই দ্বীপটাকে পিছে ফেলে টেকনাফের দিকে আগাচ্ছিলাম ততই এই মায়া ছেড়ে আসার কষ্টের পরিমাণ হৃদয়ে প্রতিফলিত হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল, দ্বীপটা বারবার বলছিল আরও কিছুদিন থেকে যাওয়ার জন্য। কিন্তু মনে মনে কথা দিয়ে আসলাম আবার ফিরে যাব নারিকেল জিঞ্জিরায়।

এরকম খোলামেলা পরিবেশ থেকে এসে চার দেয়ালের মধ্যে ঢুকে যাওয়াটা আসলেই কষ্টের। ফিরে আসার একদিনেই উপলব্ধি করতে শুরু করেছি সবাই কেমন কষ্টের মধ্যে বাসায় কাটাচ্ছিলেন! আমরা নিজেরাও এখন পরিবার এবং সবার কথা চিন্তা করে কোয়ারেন্টাইনে আছি এবং দূরত্ব বজায় রাখছি।

সবাইকে ধন্যবাদ দিতে চাই, যারা সব সময় আমাদের খোঁজ-খবর নিয়ে আমাদের পাশে ছিলেন। আশা করি পৃথিবী খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবে আর আমরাও মুক্ত পাখির ন্যায় আগের মত চলাফেরা করতে পারবো।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.