266113

বিষ্ময়কর গোলাপি ডলফিন, সমুদ্রে থাকা পুরুষদের রাতে ধাঁধায় ফেলে!

প্রাণীকূল বরাবরই সৌন্দর্যের আঁধার। প্রকৃতির সৌন্দর্য বহুগুণ বৃদ্ধি করেছে প্রাণীকূল। বিশেষ করে সামুদ্রিক প্রাণীজগত আরো সৌন্দর্যমণ্ডিত। সমুদ্রে যেন বৈচিত্র্যতার শেষ নেই। বিষ্ময়কর সব প্রাণীর বাস সমুদ্রে। এর মধ্যে অন্যতম সুন্দর প্রাণী হিসেবে বিবেচিত ডলফিন।

ডলফিনের কয়েকটি প্রজাতি রয়েছে। দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন অঞ্চলে একটি বিশেষ প্রজাতির ডলফিনের দেখা মেলে। এগুলো আমাজন রিভার ডলফিন নামেও পরিচিত। এরা মিঠা পানির সবচেয়ে বড় প্রজাতির ডলফিন। আমাজন রিভার ডলফিনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো এদের গায়ের রং। পূর্ণ বয়সে এই ডলফিন প্রজাতির শরীরের রং পুরোপুরি গোলাপি হয়ে ওঠে। বিরল প্রজাতির এই গোলাপি ডলফিন নিয়েই আজকের লেখা।

শরীরের রং বদলানোর ক্ষমতা রয়েছে এই ডলফিনের

শরীরের রং বদলানোর ক্ষমতা রয়েছে এই ডলফিনের

গোলাপি ডলফিনকে পর্তুগিজ ভাষায় বোতো বলা হয়। তবে আমাজন রিভার ডলফিন বা পিঙ্ক রিভার ডলফিন নামেই এদের পরিচিতি বেশি। পূর্ণ বয়স্ক একটি পুরুষ গোলাপি ডলফিনের ওজন ১৮৫ কিলোগ্রাম পর্যন্ত হতে পারে। এদের দৈর্ঘ্য হয় আড়াই মিটার পর্যন্ত। একটি পূর্ণ বয়স্ক স্ত্রী গোলাপি ডলফিনের ওজন দুই দশমিক ১৫ মিটার পর্যন্ত হতে পারে এবং ওজন হয় প্রায় ১৫০ কিলোগ্রাম। এদের শরীর তুলনামূলকভাবে অন্যান্য ডলফিনের চেয়ে ভারী এবং সুগঠিত।মাছ এদের প্রধান খাবার। লম্বা ঠোঁট এবং চোয়ালের মধ্যে এদের ২৫ থেকে ২৮ জোড়া বড় দাঁত থাকে। বড় এবং শক্ত এই দাঁতের সাহায্যে এরা শিকার ধরে। আমাজন রিভার ডলফিন বা পিঙ্ক রিভার ডলফিনের গড় আয়ু প্রায় ৩০ বছর। তবে এই প্রজাতির ডলফিনের ৪০ বছর পর্যন্ত জীবিত থাকার নজিরও আছে। গোলাপি ডলফিন সম্পর্কে কয়েকটি তথ্য জানলে হয়তো আপনি সত্যিই অবাক হবেন! তবে জেনে নিন এই বিরল প্রজাতির ডলফিনের কয়েকটি বিস্ময়কর দিক সম্পর্কে-

এরা নির্জন থাকলেও মানুষের সংস্পর্শে আসে

এরা নির্জন থাকলেও মানুষের সংস্পর্শে আসে

১. আমাজন পিঙ্ক রিভার ডলফিন শরীরের রং পরিবর্তন করতে পারে। এটি তাদের সবচেয়ে অন্যতম বৈশিষ্ট্য। আমাজন পিঙ্ক রিভার ডলফিন শরীরের গোলাপি রঙের জন্য বিখ্যাত হলেও জন্মগতভাবে এদের রং গোলাপি নয়। জন্মের সময় এদের রং ধূসর হলেও বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শরীরের রং গোলাপি হয়ে যায়। খাদ্যাভ্যাস, সূর্যের আলো, চলাচলের অবস্থান, আচরণ সব মিলিয়ে শরীরের চূড়ান্ত রঙে পৌঁছায় এই প্রজাতির ডলফিন। উত্তেজিত হয়ে উঠলে এদের শরীর উজ্জ্বল গোলাপি রঙা হয়ে ওঠে।২. গোলাপি ডলফিনের শরীর এবং মস্তিস্ক অন্য প্রজাতির মিঠা পানির ডলফিনের থেকে বড়। পাঁচ প্রজাতির মিঠা পানির ডলফিনের মধ্যে গোলাপি ডলফিনের শারীরিক গড়ন সবচেয়ে বড়। এদের মস্তিষ্কের আকার বড় হয়ে থাকে। এমনকি এদের মস্তিষ্কের সক্ষমতাও অনেক বেশি। মানুষের তুলনায় এদের মস্তিষ্কের সক্ষমতা প্রায় ৪০ শতাংশ বেশি।

গোলাপি ডলফিন

গোলাপি ডলফিন

৩. এরা নির্জন থাকতে পছন্দ করে। সাধারণত ডলফিন দলবদ্ধ হয়ে থাকার জন্য বিখ্যাত। তবে গোলাপি ডলফিন একাকী থাকতে পছন্দ করে। দুই থেকে চার সদস্যের ছোট দলেই এরা থাকে। তবে বেশি খাদ্য সমৃদ্ধ অঞ্চলে এদের বড় দলও দেখা যায়। ছোট দলে থাকলেও এরা অসম্ভব কৌতূহলী প্রাণী। সহজেই গোলাপি ডলফিন মানুষ কিংবা অন্য প্রজাতির সংস্পর্শে আসে।৪. গোলাপি ডলফিন শারীরিক কসরত করতে দক্ষ। এই প্রজাতির ডলফিনের ঘাড় এবং মেরুদণ্ড বিশেষ প্রকৃতির হয়ে থাকে। গোলাপি ডলফিনের ঘাড়ের মূল হাড় একসঙ্গে জোড়া লাগানো নয়। ফলে এরা শরীরের চারদিকে ৯০ ডিগ্রি পর্যন্ত মাথা ঘোরাতে পারে। মেরুদণ্ডের বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কারণে এরা পুরো শরীর ১৮০ ডিগ্রি পর্যন্ত বাঁকাতে পারে। শারীরিক এমন কসরত করার সক্ষমতা থাকায় এরা প্রতিবন্ধকতাপূর্ণ পথেও সহজেই চলতে পারে।

এরা বড় বড় মাছও খেয়ে থাকে

এরা বড় বড় মাছও খেয়ে থাকে

৫. গোলাপি ডলফিন একটি পৌরাণিক প্রাণী। আমজন পিঙ্ক রিভার ডলফিন বা গোলাপি ডলফিন সম্পর্কে দক্ষিণ আমেরিকার কয়েকটি দেশে অনেক কিংবদন্তী এবং পৌরাণিক কাহিনী প্রচলিত আছে। একটি কাহিনী প্রচলিত আছে, এই ডলফিন রাতে সুদর্শন পুরুষদের ধাঁধায় ফেলে দেয়। অন্য এক কাহিনী অনুসারে, একা সাঁতার কাটতে গেলে এরা সমুদ্রের নিচে জাদুর শহরে নিয়ে যেতে পারে। দক্ষিণ আমেরিকার কয়েকটি উপজাতির বিশ্বাস করে, গোলাপি ডলফিন হত্যা করলে তাদের জীবনে চরম দুর্দশা নেমে আসবে।বাংলাদেশের উপকূলেও কয়েকবার বিরল প্রজাতির গোলাপি ডলফিনের দেখা মিলেছে। ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন সোসাইটির একটি জরিপ পরিচালনার সময় ২০০২ সালে বাংলাদেশে প্রথম গোলাপি ডলফিনের অস্তিত্ব সম্পর্কে জানা যায়। এরপর ২০১১ সালে সুন্দরবন সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে এই ডলফিনের দেখা মেলে। বাংলাদেশে সর্বশেষ গোলাপি ডলফিনের দেখা মিলেছে এ বছরের মার্চ মাসে। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের কলাতলী এবং সুগন্ধা পয়েন্টে স্থানীয়রা দুটি ডলফিন দলের সঙ্গে গোলাপি ডলফিন দেখতে পান।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.