265821

পঙ্গপাল খেতে নাকি টেস্টি, রইলো নানা দেশের নানা পদ

কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের পূর্ব দিকে উত্তর কিভুর রাজধানী গোমা। রুক্ষ, আগ্নেয়গিরি ঘেরা এই শহরের সিংহভাগ দারিদ্রসীমার নীচে। খাদ্যাভাসে পোকাতেই এরা স্বচ্ছন্দ। বাজারে রীতিমতো পসরা সাজিয়ে পোকা কেনাবেচা চলে। ঝিঁঝিঁ, গঙ্গাফড়িং, মথের লার্ভা। তবে উপাদেয় ও সুস্বাদু পোকা হিসেবে পঙ্গপালের কদর একটু বেশি।

প্রোটিনে ভরপুর এবং পুষ্টিও মেলে পঙ্গপালে। ভারতে এখন আতঙ্কের আর এক নামই পঙ্গপাল। ভারতে বলে শুধু নয়, মিশর, ইজরায়েল, আফ্রিকার দেশগুলিতে ঝাঁকে ঝাঁকে ঝোড়ো হাওয়ার মতো পঙ্গপালের ঝাঁক বিভীষিকা তৈরি করেছে। ক্ষেতের ফসল তছনছ করে, টন টন শস্য দানা সাবাড় করে নাস্তানাবুদ করে ছাড়ে। তবে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে এখনো পঙ্গপাল খাবার অভ্যাস তেমন তৈরি হয়নি, কিন্তু এশিয়ার বেশ কিছু দেশে পঙ্গপাল বেশ উপাদেয় ডেলিকেসি। মধ্যপ্রাচ্যে আবার পঙ্গপাল খাওয়ার রীতি রয়েছে। আফ্রিকার দেশগুলিতে আবার খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গেই ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছে নানা রকমের পোকা। তার মধ্যে রয়েছে পঙ্গপালও।

পঙ্গপাল রেঁধে খাওয়ার হরেক রকম রেসিপি আছে। মুচমুচে ভাজা করে, সিদ্ধ বা হাল্কা ভাপিয়ে পঙ্গপাল নাকি বেশ উপাদেয়। আবার শুকিয়ে রেখে পরে সেটা রান্না করে খাওয়ার অভ্যাসও আছে। ওই অনেকটা শুঁটকির মতো।

সৌদি আরবের অনেক অঞ্চলে রমজানের সময় পঙ্গপাল রেঁধে খাওয়া হয়। এটা নাকি তাদের রীতির মধ্যেই পড়ে। ২০১৪ সালে আল-কাসিম এলাকায় পঙ্গপাল খাওয়ার অভ্যাস এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে শক্ত হাতে হাল ধরতে হয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে।

গাদা গাদা পঙ্গপাল খেয়ে সে এলাকায় রোগও ছড়াতে শুরু করে। সেসময় সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, পঙ্গপাল মারতে জমিতে যে কীটনাশক দেওয়া হয় সেটা পোকার শরীরেও ঢোকে। জ্যান্ত পোকা ধরে খেলে সে বিষ শরীরেও ঢুকবে। যদিও সৌদিতে এখনও পঙ্গপাল খাওয়ার রীতি কোথাও কোথাও চালু আছে।

ইয়েমেনিরা সরকারি নিষেধ অমান্য করেই পঙ্গপাল খেয়ে চলেছে। মরক্কোতে তো পঙ্গপাল রান্নার বিশেষ রেসিপিও রয়েছে। আরব, মিশর, মরক্কোর বাজারে ভাল দামেই পঙ্গপাল কেনাবেচা চলে। তার রান্নারও অনেক ধরন আছে।

এই অমেরুদণ্ডী সন্ধিপদ প্রাণীর অনেক প্রজাতি রয়েছে। চেনা পরিচিত প্রজাতি হল ডেসার্ট লোকাস যা উত্তর আমেরিকা ও এশিয়ার কয়েকটি দেশে পাওয়া যায়। এই প্রজাতির পঙ্গপালদের দেশ ঘোরার নেশা রয়েছে। মাইলের পর মাইল পথ পাড়ি দিয়ে এই পরিযায়ী পঙ্গপালরা এক দেশ থেকে অন্য দেশে ঘুরে বেড়ায়। ২০০৩-০৪ সালে এমনই লক্ষাধিক ডেসার্ট পঙ্গপালের ঝাঁকের কারণে পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলিতে নাজেহাল অবস্থা হয়েছিল। মাইগ্রেটরি লোকাস্ট বা পরিযায়ী পঙ্গপালের এই প্রজাতির আবার কয়েকটি ছোট ছোট গোষ্ঠী আছে। তারা আফ্রিকা, এশিয়া, নিউজিল্যান্ডে চড়ে বেড়ায়। ২০১৩ সালে এমন পঙ্গপালের হানাকে বিধ্বংসী বলেছিল মাদাগাস্কার।

তবে এই পঙ্গপাল খাওয়ার অভ্যাসটা ঠিক কবে থেকে তৈরি হয়েছে তার সঠিক সাল, তারিখ নেই। বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রাচীনকাল থেকেই পোকা খাওয়ার অভ্যাস তৈরি হয়েছে মানুষের মধ্যে, যার কিছুটা প্রয়োজনের তাগিদে আর বাকিটা কোনও না কোনওভাবেই স্থানীয় রীতি-রেওয়াজের মধ্য়ে ঢুকে গেছে। বাইবেলেও মধু দিয়ে পঙ্গপাল খাওয়ার কথা রয়েছে।

পোকা খাওয়ার অভ্যাসকে বলে এন্টোমোফ্যাগি। মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা, এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড-সহ বিশ্বের নানা দেশের খাদ্যাভাসেই পোকা রয়েছে। সমীক্ষা বলছে ৮০ শতাংশ মানুষ ‘এন্টোমোফ্যাগাস’। হাজারেরও বেশি ধরনের পোকা রয়েছে তাদের খাবারের তালিকায়। মেক্সিকোতে পুষ্টিকর খাবার হিসেবে পোকার চল রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পঙ্গপালের মধ্যে ভরপুর প্রোটিন রয়েছে। প্রতি ১০০ গ্রামে প্রায় ১৩-২৮ গ্রাম। পঙ্গপালের লার্ভায় প্রতি ১০০ গ্রামে প্রোটিন রয়েছে ১৪-১৮ গ্রাম। ডেসার্ট পঙ্গপালের প্রতি ১০০ গ্রামে ফ্যাট রয়েছে ১১.৫ গ্রাম, কোলেস্টেরল ২৮৬ মিলিগ্রাম। তাছাড়া ফ্যাটি অ্যাসিডও রয়েছে প্রচুর পরিমাণে।

‘ইউনিভার্সিটি অব উইসকনসিন’ এবং ‘ম্যাডিসন নেলসন ইনস্টিটিউট ফর এনভায়োরনমেন্টাল স্টাডিজ’-এর গবেষকেরা জানিয়েছেন, কীট-পতঙ্গের মধ্যে রয়েছে প্রোটিন-সহ নানা পুষ্টিকর উপাদান।

এরা শরীরে বাসা বাধা ক্ষতিকর ব্যাকটিরিয়াগুলিকে নষ্ট করে, রোগ প্রতিরোধ শক্তি গড়ে তোলে। পোকার মধ্যে রয়েছে চিটিন নামে একপ্রকার ফাইবার যা সাধারণত ফল বা সব্জির ডায়েটারি ফাইবারের থেকে অনেক আলাদা। এই ফাইবার হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। অন্ত্রে সাহায্যকারী ব্যকটিরিয়া ‘প্রোবায়োটিকস’ তৈরিতে সাহায্য করে, যেগুলি খাদ্যনালীতে বাসা বাঁধা ক্ষতিকর ব্যকটিরিয়াগুলিকে সমূলে বিনাশ করে।

গবেষকরা বলছেন, বর্তমানে ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেশিরভাগ জায়গায় ‘ইনসেক্ট ইটিং কালচার’ শুরু হয়েছে। যেখানে পোকামাকড়ের তালিকায় রয়েছে, পিঁপড়ে ছোট কীট বা পতঙ্গ রেশম মথ এবং পঙ্গপাল।

সূত্র: দ্য ওয়াল

পাঠকের মতামত

Comments are closed.