265749

বেলজিয়ামে স্মরণীয় ঈদ

ঈদ মানে আনন্দ। আর এই আনন্দটা তখনই পরিপূর্ণ হয় যখন তা পরিবারের সবার সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া যায়। আমরা যারা প্রবাসে থাকি, ঈদ তাদের জন্য এক ভিন্ন অনুভূতি নিয়ে আসে। কারণ, বিদেশে আমরা অনেকেই পরিবার-পরিজন, প্রিয়তম স্ত্রী, মমতাময়ী মা, প্রিয় বাবা, স্নেহের সন্তান, আদরের ভাইবোন ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ দিনটি অতিবাহিত করি।

আর তাই ঈদের দিনটা এখানে অনেকটাই আনন্দ-বেদনায় মিশ্রিত একটা সময়। প্রবাসীদের মনটা থাকে দেশে আর দেহটা থাকে বিদেশে। বিশেষ করে পৃথিবীর বহু দেশেই প্রবাসীদের পরিবারবিহীন একাকী থাকতে হয়। আর জীবনসংগ্রামের এই চ্যালেঞ্জ নিয়েই প্রবাসীরা ঈদ উদযাপন করেন।

টেলিফোনে অথবা স্কাইপে, ভাইবারে বা ম্যাসেঞ্জারে প্রিয়জনের সঙ্গে কথা বলেন। অনেকেই হয়তো মরুভূমির মরীচিকায় নিজের দুঃখটাকে মিশিয়ে দিয়ে কাজেও যান। এ বছর অন্যরকম একটি ঈদ উদযাপন করছি আমরা। বিশ্বজুড়ে মুসলমানদের জন্য এমন ঈদ আগে কখনো আসেনি। এবারের ঈদ কষ্টের, এবারের ঈদ হচ্ছে বেদনার। এবারের ঈদ স্বজন হারানোর এবং বন্দিদশার মধ্যে ঈদ।

করোনা দিনের ব্যতিক্রমী এক ঈদ পুরো বিশ্বের তথা বেলজিয়ামের। কারণ বেলজিয়াম লকডাউন ৭ জুন পর্যন্ত চলবে। সুতরাং সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে সবাইকে। ঘরে বসেই ঈদের নামাজ পড়তে হয়েছে।
কোনো কোনো প্রবাসীর ঈদের দিনের আনন্দ খুশিটা ভেসে যায়। একাকী রুমে শুয়ে নীরবে নিভৃতে অশ্রু ঝরায়ে।

অশ্রু ঝরে ফোঁটায় ফোঁটায় আবার কখনো মুষলধারে বৃষ্টির মতোই। তাদের কষ্ট যাতনাগুলো চোখের পানিতে বের হয়ে আসে। ভিজে একাকার হয়ে যায় বালিশ। না পারে কাউকে বলতে, না পারে সইতে, ঠিক সেই অবস্থা আমারও।

শুয়ে শুয়ে তারা ভাবে মা-বাবার কথা। ভাবে জীবনসঙ্গিনীর কথা। আদরের খোকা-খুকির কথা। যতই ভাবে ততই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ে। শত চেষ্টা করেও চোখের নদীর অশ্রু বন্যাকে বাঁধ দিতে পারে না। পারে না নিজেকে শান্ত করতে। ঈদের আনন্দঘন দিনে তাদের এই কষ্টের কথা কেউ জানে না একমাত্র আল্লাহ ছাড়া।

ঈদের দিন প্রবাসীদের মনে ভীষণভাবে দাগ কাটে পেছন স্মৃতিগুলোর কথা স্মরণ করে। মায়ের হাতের রান্না করা ফিন্নি-পায়েস খেয়ে ঈদের মাঠে যাওয়া। সহধর্মিণীর প্রেম ভালোবাসায় সিক্ত হওয়া। কলিজার টুকরো খোকা খুকির মায়া জড়ানো আব্বু ডাকটির কথা। তাদেরকে নতুন জামা কাপড় পরিয়ে ঈদগাহে নিয়ে যাওয়ার কথা।

এসব হাজারো স্মৃতির কথা ভেবে ভেবে কষ্টের অনলে জ্বলতে জ্বলতে নিজে যেমন দগ্ধ হয়, তেমনি সে ভাবতে থাকে তার মা-বাবা স্ত্রী-সন্তান তাকে ছাড়া ঈদ করতে গিয়ে তারাও কত কষ্ট ব্যথাহৃদয় মনে পোষণ করে ঈদের দিনটি কাটায়।

অনেক প্রবাসীরা আবার তাদের কষ্টগুলোকে পাত্তা না দিয়ে ঈদের দিন চুটিয়ে আনন্দ করে বেড়ায়। একাকী রুমে বসে না থেকে ছুটে যায় প্রিয় বন্ধু বন্ধবদের বাসায়। কেউবা বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে যায় সুন্দর থেকে সুন্দরতম কোনো জায়গায়। আড্ডায় আড্ডায় পার করে দেয় পুরো ঈদের দিন।

এভাবেই প্রতিটি প্রবাসী বিদেশ বিভুয়ে কাটিয়ে দিচ্ছে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর। শুধুমাত্র জন্মভূমির রেমিট্যান্স বৃদ্ধি এবং নিজের পরিবারের সুখের আশায়। তাদের ঠোঁটে এক চিলতে হাসি ফুটানোর প্রচেষ্টায়।
আনন্দ-বেদনার করোনার ঈদের নাম হচ্ছে প্রবাসের ঈদ।

অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও নিজের মতো করে আনন্দ খুঁজে নেয় প্রবাসীরা। তারাও ঈদের নামাজ পড়ে, কোলাকুলি করা যাবে না বেড়াতে যাওয়া যাবে না আত্মীয়র বাড়িতে প্রিয়জন থেকে অনেক অনেক দূরে। এই করোনার কারণে সৃষ্ট অভাব আমাদের আবার মনে করিয়ে দিল যে সাধ তা কোনো কালে পূরণ হওয়ার নয়, সাধ্যের মধ্যেই আছে সকল সত্য। চলুন সবাইকে সঙ্গে নিয়ে বাঁচি।

সূত্র: যুগান্তর

পাঠকের মতামত

Comments are closed.