265179

মানবিক নায়ক আলমগীর

কেতাদুরস্ত। গুরুগম্ভীর। পর্দায় দেখা মানুষটির রিয়েলিস্টি চরিত্র। দেখে বোঝার উপায় নেই, এ মানুষটির ভেতর কোমল মানবিক পুরুষহৃদয় বহমান। প্রচ- আড্ডাবাজ। শরীরে, আতিথেয়তায় পূর্বপুরুষের ধারা বহমান। তাই তো তাকে ঘিরেই বসে আড্ডা। তিনি মধ্যমণি। একের পর এক চা-শিঙাড়া, মুড়ি আসছে। চনমনে পরিচালক সমিতির অফিস (স্টাডি রুম)। আড্ডা চলে পানসে হওয়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত। সেখানে বসেই সহকর্মীদের খবরাখবর নেন। প্রয়োজনীয় ব্যক্তির নাম টুকে নেন সবার অলক্ষে। এর পর যাচাই-বাছাই। সবশেষ যথাযথ ব্যক্তির হাতে সহযোগিতা মেশানো বিশেষ প্যাকেট এবং কাউকে না প্রকাশের অনুরোধ। এই হলো ঢালিউডের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক আলমগীরের চরিত্র। চলচ্চিত্রপাড়ায় কান পাতলে শোনা যায়, তার এই উপকারভোগীদের সংখ্যা এক, দুই, তিন, চার, পাঁচ, দশ করে এখন অসংখ্য। শুধু তা-ই নয়, গ্রহীতার মর্যাদা যাতে ভূলুণ্ঠিত না হয়Ñ সে ব্যাপারে সচেতন তিনি।

ব্যক্তি সমস্যা বা প্রাকৃতিক সৃষ্ট সমস্যা যখন নিকটে, তখন গোপনে চলে আলমগীরের সহযোগিতা। হলিউড-বলিউডের অনেকের দান বা সহযোগিতাকে আমরা ফলাও করে প্রচার করি। কিন্তু আমাদের দেশেই খুব কাছের কেউ ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই যে উপকার করে চলেছেন, যা আজও বহমান। ভঙ্গুর দশার মধ্যে তার সমসাময়িক অনেকেই যখন ইন্ডাস্ট্রি থেকে শতহাত দূরে বসে হাত পা গুটিয়ে, এর ব্যতিক্রম আলমগীর।

গত ২৭ এপ্রিল এ নিয়ে একটি পোস্ট দিয়েছিলাম। তাতে এ অভিনেতার নামটি না দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন শক্তিমান অভিনেত্রী অরুণা বিশ^াস। যিনি করোনা দুর্যোগে সবার অগোচরে দুস্থদের রান্না করে খাওয়াচ্ছেন। তবে এসব পাশ কাটিয়ে ‘ওসব তেমন কিছু না’ বলে কিছুটা অধিকারকণ্ঠে জানালেন, এই দুর্যোগে ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম জ্যেষ্ঠ অভিনেতা আলমগীরের দানের কথা। তার বক্তব্যÑ আলমগীর ভাইয়ের অকাতরে গোপন দান আজকের বা একদিনের নয়, সুদীর্ঘ সময়ের। সম্ভবত এটা তাদের পরম্পরা। তার এ মুহূর্তে পাওয়ার কিছু নেই। এর পরও যখন যে বলছেন তিনি খালি হাতে ফেরাচ্ছেন না। বড় সমস্যায় পড়লে প্রথম যে নামটি আসে তোমার স্ট্যাটাসে, তার নামটি না আসায় বিব্রত হয়েছি। তিনি হয়তো চান না কেউ তার উপকারের কথা জানুক। তাই বলে তোমরা জানাতে কিপটেমি করবে কেন? তার মতো অনেকের অবস্থা ভালোই আছে, তাই বলে কি তাদের কথা বলছি আমরা।

এ নিয়ে আলমগীরের কন্যা কণ্ঠশিল্পী আঁখি আলমগীরের কাছে প্রশ্ন করতেই কিছুটা বিব্রত সুরে বলেন, ‘দেখুন, এটা বাবা পেয়েছেন দাদা থেকে। আমরা দেখেছি বাবা-মা দুজনই গোপনে মানুষের পাশে দাঁড়াতেন। পাশাপাশি গ্রহীতার মর্যাদাকেও তারা সম্মান দেখাতেন। আমরা ভাইবোনরাও সেটা চেষ্টা করি।’ অবাক বিস্ময়ে আঁখির কথা শুনে শ্রদ্ধায় মাথা নত হয় অনন্ত জলিল, ডিপজল, জায়েদ, অঞ্জনা, আবীর চৌধুরী, ওমর সানী, শরীফ চৌধুরী, পপি, নিপুনদের জন্য। তারা এই প্রলয়ে আমাদের ক্ষয়ে যাওয়া ইন্ডাস্ট্রির আশার আলো। অথচ আজিজ মো. ভাই, সোহেল রানা, ফারুক পাঠান, শাবানা, ববিতা, রোজিনা, সুচরিতা, শাবনূর, মো. কলি, ওয়াসিম, কাঞ্চন, শাকিব খান, ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ, হেলাল খান, খসরু, ফেরদৌস, রিয়াজ, গাজী মাজহারুল আনোয়ার, আজিজুর রহমানরা ধরাছোঁয়ার অনেক বাইরে। সুস্থ থাকুন, আড্ডায় থাকুন কিংবদন্তি আলমগীর।

সূত্র: প্রথম আলো

পাঠকের মতামত

Comments are closed.