262043

বসন্ত ও ভালোবাসা দিবসে ফুল চাষিদের টার্গেট ৫ কোটি টাকা

ডেস্ক রিপোর্ট : বাড়ির উঠানে বসে কাঠমালতির কলি দিয়ে গাজরা ও লহর বানাতে ব্যস্ত বধূ-কন্যারা। পাশের বিস্তীর্ণ মাঠে রংবেরঙের ফুল। এ এক অন্যরকম দৃশ্য ব্রহ্মপুত্র নদবিধৌত নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার সাবদী গ্রাম। সাবদী যেন পুরোটাই ফুলের গ্রাম।

এ গ্রামের মানুষ অন্য ফসল আবাদ বাদ দিয়ে ঝুঁকছে ফুল চাষে। শুধু সাবদী কেন, এর আশপাশের গ্রাম দীঘলদি, সেলশারদী, মাধবপাশা ও আইছতলায় বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষ হচ্ছে। গলাগাছিয়া ইউনিয়নের এসব গ্রামের ১৫ হাজার নারী-পুরুষ এ পেশায় এখন স্বাবলম্বী।

এবার ১৫৫ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে ২৪ ধরনের ফুল। আসছে বসন্ত, ভালোবাসা দিবস ও শহীদ দিবসকে কেন্দ্র করে এখানকার চাষিরা অন্তত ৫ কোটি টাকার ফুল বিক্রির আশা করছেন।

প্রতিদিনই ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে শত শত নারী-পুরুষ ভিড় জমান এই সাবদী গ্রামে। সাবদীর সবচেয়ে বড় ফুল বাগানের মালিক জাকির হোসেন। বছরের বারোমাসই তিনি ফুল চাষ করেন। গোলাপ, গাঁদা, রজনীগন্ধা, গ্লাডিওলাস, জারবেরা, বাগানবিলাস, চন্দ্রমল্লিকা, ডালিয়া, কসমস, দোলনচাঁপা, নয়নতারা, মোরগঝুঁটি, কলাবতী, বেলি, জিপসি, চেরি, কাঠমালতি, আলমন্ডা, জবা, রঙ্গন, টগর, কাঠগোলাপ, রক্তজবা, ক্যালেন্ডুলা শোভাবর্ধন করছে তার বাগানে।

জাকির হোসেন বলেন, ফলন ভালো হলে ভালো লাভ হয়। তবে ফুল চাষের জন্য মানসম্পন্ন বীজ, চারা ও টিস্যু কালচারের জন্য গবেষণাগার নেই। স্বল্প সুদে ঋণের সুবিধা পাওয়া যায় না। উৎপাদিত ফুল সংরক্ষণে কোনো হিমাগার এবং বাজারজাত করারও ভালো ব্যবস্থা নেই। এসব সমস্যার সমাধান করলে ফুলের চাষ আরও বাড়বে, আগ্রহী হবে মানুষ।

ফুলচাষি সানী মিয়া বলেন, নারায়ণগঞ্জ, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ফুলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। পহেলা ফাল্কগ্দুন, ভালোবাসা দিবস, পহেলা বৈশাখ, ২১ ফেব্রুয়ারিসহ নানা দিবস ছাড়াও বিয়ে, জন্মদিন পূজা-পার্বণে ফুলের বেশ চাহিদা থাকে। এ সময় দামও ভালো পাওয়া যায়।

তিনি জানান, দীঘলদি গ্রামের বেকার যুবক সুধেব চন্দ্র দাস প্রথম এই গ্রামে বাণিজ্যিকভাবে ফুলের চাষ শুরু করেন। পরে আরও কয়েকজন যুবক ওই গ্রামে সুধেবের দেখাদেখি ফুলের চাষাবাদ করেন। ওই গ্রামের রহমতউল্লাহ ১৯৯২ সালে ডেমরার বাওয়ানী জুটমিলের চাকরি চলে যাওয়ার পর ঢাকায় ফেরি করে ফুলের ব্যবসা করতেন। পরে ওই গ্রামের আরেক ফুল ব্যবসায়ী মোতালেবের উৎসাহে ১৯৯৫ সালে তিনি গ্রামে এসে অন্যের জমি ইজারা নিয়ে ফুল চাষ শুরু করেন। ফুল চাষ করে রহমতউল্লাহ আজ ২০ বিঘা জমির মালিক।

ফুল তুলে ও মালা গেঁথে ঘরে বসেই পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও বাড়তি আয় করে সংসারে সহায়তা করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন। ফুল শ্রমিক সীতা রানী চন্দ্র বলেন, এখানকার নারীরা সাংসারিক সুখ-দুঃখের আলাপচারিতার ফাঁকে ফাঁকে ডালা ভরে ফুলকলি তুলে যার যার বাড়িতে ফিরে আসে।

কাঠমালতির ফুল দিয়ে ‘গাজরা’ ও ফুল কলির লহর বানাতে ব্যস্ত থাকে পুরো এলাকার নারীরা। স্কুলের ছাত্রছাত্রীরাও সকাল ৯টা পর্যন্ত কলি তুলে স্কুলে যায়। তারা আবার বিকেলে বাড়ি ফিরে ফুলের লহর বানাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

বন্দর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফারহানা সুলতানা জানান, বছরের বারোমাসই বন্দরের কয়েকটি গ্রামে ফুল চাষ করা হয়। পহেলা ফাল্গুন, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস- এ তিনটি দিবসেই প্রায় ৫ কোটি টাকার ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ব্যস্ততা ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীদের।

বন্দর থানা বহুমুখী ফুল ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক তাওলাদ হোসেন বলেন, সারা বছর ফুলের ব্যবসা হলেও বিশেষ বিশেষ সময়ে বেশি ভালো হয়। বিভিন্ন দিবসে ফুল বিক্রির ধুম পড়ে যায়। এ ব্যবসায় আরও সাফল্য পেতে চীন থেকে আসা কৃত্রিম ফুল বন্ধের জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

নারায়ণগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক ড. গোলাম মোস্তফা বলেন, ফুল চাষ লাভজনক। নারায়ণগঞ্জে বিশেষ করে বন্দরে ফুল চাষ ব্যাপকতা লাভ করেছে। তিনি বলেন, বন্দরের পাশাপাশি সোনারগাঁ উপজেলার সম্ভুপুরা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে এবং রূপগঞ্জ উপজেলার মাসুমাবাদ ও ভোলাব এলাকায়ও ফুল চাষ করে সাবলম্বী হয়েছেন অনেকে।

চলতি সপ্তাহে বন্দরের দীঘলদি এলাকায় একটি মন্দিরের উন্নয়নকাজ পরিদর্শনে গিয়ে সাবদীকে পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান।

তিনি বলেছেন, ‘এই এলাকার চারপাশে ফুলের ক্ষেত। অপরপাশে ব্রহ্মপুত্র নদ। এখানে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসে। তাই এটিকে সম্পূর্ণভাবে পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এতে সব থেকে বেশি সহযোগিতার প্রয়োজন হবে এই এলাকার মানুষের। সূত্র : আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া

পাঠকের মতামত

Comments are closed.