259798

ধর্ষককে ধিক্কার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে গেলেন তরুণী (দেখুন ভিডিওসহ)

ডেস্ক রিপোর্ট : ইসলামের নামে করা বিভিন্ন হামলার নেপথ্যে থাকা জঙ্গি সংগঠন আইএসের এক সদস্যকে নিজেদের টেলিভিশন চ্যানেলের এক অনুষ্ঠানে এনেছিল আল-ইরাকিয়া কর্তৃপক্ষ।

অনুষ্ঠানে মোহাম্মদ রাশিদ নামের ওই জঙ্গি সদস্যের সামনে দাঁড় করানো হয় তার কাছে ধর্ষণ হওয়া এক ইয়াজিদি তরুণীকে। আসওয়াক হাজি হামিদ নামের ওই নারী অনুষ্ঠানে তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া বর্বরতার জন্য ক্ষোভ ঝাড়েন। একপর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি।

আল-ইরাকিয়া টেলিভিশনে এমন অনুষ্ঠান প্রচার করায় চ্যানেলটির বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় উঠেছে ইরাকসহ মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশে।

টেলিভিশনে আনা আসওয়াক হাজি হামিদ যখন মাত্র ১৪ বছর বয়সী ছিলেন, তখন তাকে ইরাকের সিঞ্জার পাহাড় এলাকার বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায় আইএস জঙ্গিরা।

২০১৪ সালে তার সঙ্গে অপহরণ করা হয় আরও হাজার খানেক ইয়াজিদি নারীকে। রাশিদ ছিলেন সেই জঙ্গি সদস্যদের দলে। তিনি আসওয়াককে অপহরণের পর নিজেদের আস্তানায় রেখে হাতকড়া পরিয়ে বারবার ধর্ষণ করে।

একদিন সুযোগ পেয়ে আরও কয়েক নারীসহ আইএস জঙ্গিদের আস্তানা থেকে পালিয়ে যান আসওয়াক। ইরাক ছেড়ে জার্মানিতে গিয়ে আশ্রয় নেন তিনি। এ সময়টিতে ধর্ষক রাশিদও জার্মানিতে চলে যান। ২০১৮ সালে ফের মুখোমুখি হন দুজন। জার্মানির রাস্তায় এ সময় রাশিদকে দেখে ফুঁসে ওঠেন আসওয়াক। তেড়ে গিয়ে ক্ষোভ ঝাড়েন।

আল-ইরাকিয়া টিভি চ্যানেলের একটি বিশেষ প্রতিবেদনে নিজের কথাগুলো এভাবেই জানান আসওয়াক। পরে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক গণমাধ্যম ‘দ্য টেলিগ্রাফ’ তাদের বিশ্বসংবাদ ক্যাটাগরিতে প্রকাশ করে।

জার্মানির ঘটনার পর রাশিদ গ্রেপ্তার হন। তাকে ইরাকে নিয়ে আসা হয়। আসওয়াক বিষয়টি জানতে পারেন। গতমাসে ধর্ষক ও ধর্ষিতাকে আবার মুখোমুখি করার সিদ্ধান্ত নেয় আল-ইরাকিয়া।

ইরাকি কারাগারে থাকা রাশিদকে তার বন্দি পোশাকে আসওয়াক হাজি হামিদের সামনে হাজির করা হয়। এবং তাকে তার কৃতকর্মের জন্য আসওয়াকের বেদনার কথা শুনতে বাধ্য করা হয়।

টেলিভিশনের অনুষ্ঠানে আসওয়াক যখন কথা বলছিলেন, কান্না থামাতে পারছিলেন না তিনি। বর্তমানে ১৯ বছর বয়সী আসওয়াক তার ধর্ষক রাশিদকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘তুমি আমার জীবনটাই ধ্বংস করে দিয়েছ। তুমি আমার সব স্বপ্ন ধ্বংস করে দিয়েছ। আমার দিকে তাকাও। তোমার কি কোনো অনুভুতি নেই? তোমার কি কোনো সম্মান নেই? আমার বয়স ছিলে মাত্র ১৪ বছর। হয়তো তোমার মেয়ে, ছেলে বা বোনের বয়সী ছিলাম আমি।’

কান্না করতে করতে কথা বলার একপর্যায়ে অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন আসওয়াক। উপস্থিত সঞ্চালক ও টিভি ক্রুরা তখন তাকে ধরাধরি করে বিশ্রাম কক্ষে নিয়ে যায়। পরে চিকিৎসককে ডেকে আনা হয়।

এদিকে আল ইরাকিয়া টেলিভিশনটির সমালোচনায় মেতে উঠেছেন মানসিক ট্রমা বিশেষজ্ঞরা। কারণ, তারা আগেই বলেছিলেন, ধর্ষণের শিকার তরুণীর মনে এমনিতেই বড় ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। তা আরেকবার উন্মুক্ত হলো শুধু অযাচিত অনুষ্ঠানটির জন্য।

জান ইলহান কিজিলহান নামে কুর্দি-জার্মান বংশোদ্ভুত এক চিকিৎসক বলেছেন, ‘কোনো ধর্ষিতা নারীকে এভাবে ধর্ষকের মুখোমুখি করাটা পুরোপুরি চিকিৎসা বিজ্ঞানবিরোধী আচরণ।’

অনুষ্ঠানের আরেকটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়, যাতে আসওয়াককে খানিকটা নির্ভার দেখা গেছে। সঞ্চালক তাকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘ওই ধর্ষকের মুখোমুখি হয়ে নিজের ক্ষোভ ঝাড়তে পেরে আমি খুশি হয়েছি। তাকে সামনে পেয়ে গত পাঁচ বছর ধরে আমার মনে যে তীব্র অসন্তোষ জমা হয়ে ছিলো তা ঝেড়ে দিয়েছি।’

নিজের ভয়ের কথাও জানান এই ইয়াজিদি তরুণী। বলেন, ‘ওকে দেখার পর আমার মনে ভয় কাজ করছিল; সে হয়তো আবারও আমাকে জোরপূর্বক যৌনদাসী বানাবে।’

পাঠকের মতামত

Comments are closed.